Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঘর থেকে ডেকে তৃণমূল কর্মীকে খুন

স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা তাঁকে ডাকছেন। শুতে যাওয়ার ঠিক আগে সেই ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। রাতে বাড়ির অদূরেই পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার হল ওই তৃণমূল কর্মীর ক্ষতিবিক্ষত দেহ।

শুক্রবার সকালে সারেন্ডা গ্রামে নিহতের শোকার্ত স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র

শুক্রবার সকালে সারেন্ডা গ্রামে নিহতের শোকার্ত স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৪১
Share: Save:

স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা তাঁকে ডাকছেন। শুতে যাওয়ার ঠিক আগে সেই ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। রাতে বাড়ির অদূরেই পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার হল ওই তৃণমূল কর্মীর ক্ষতিবিক্ষত দেহ।

বৃহস্পতিবার রাতে মহম্মদবাজারের সারেন্ডা গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম দীপক পাল (৪৮)। বাড়ি ওই গ্রামেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রামেরই আঠারো জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে নিহতের পরিবার। অভিযুক্তদের মধ্যে ছয় মহিলা-সহ আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা হলেন ঝুমা মাহারা, রিতা মাহারা, খাদেশ্বরী মাহারা, সুজাতা মাহারা, লক্ষ্মী মাহারা, ভাগু মাহারা, অশোক মাহারা এবং অনুপ রায়। খুনের কারণ যদিও এখনও স্পষ্ট নয়। ফোন ধরেননি জেলার পুলিশ সুপার।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন ধরেই বেআইনি ভাবে মদ বিক্রিকে কেন্দ্র করে গ্রামে অশান্তি চলছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রামের কাহার পাড়ার এক দল মহিলার স্থানীয় দুর্গামন্দিরের কাছে থাকা একটি দোকানদারের সঙ্গে বচসা হয়। ওই মহিলাদের দাবি ছিল, তাপস দাস নামে এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত ওই দোকানদার সেখানে বেআইনি মদ বিক্রির কারবার চালান। তা বন্ধের দাবিতে দু’পক্ষে সামান্য বচসা হয়। রাত ৮টা নাগাদ গ্রামে পুলিশ এলে তখনকার মতো সব চুপচাপ হয়ে যায়। অভিযোগ, পুলিশ ফিরে গেলে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ওই মহিলাদের পরিবারের লোক জন তাপসবাবুর দোকানে চড়াও হন। তাপসবাবুর দাবি, আগে করলেও ওই কারবার তিনি বহু দিন ছেড়ে দিয়েছেন। তার পরেও মাহারা পাড়ার সন্দীপ মাহারা, অশোক মাহারা-সহ বেশ কয়েক জন তাঁর দোকানে চড়াও হয়। তাঁকে এবং তাঁর বাবা, ভাই, কাকাদের মারধর করা হয়। সেই সময়ই দীপকবাবু তাঁর দোকানে আসেন। তাপসবাবু এবং তাঁর বাবা নিত্য দাসের দাবি, ‘‘কী হয়েছে প্রশ্ন করতেই ওঁরা লাঠি, রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে দীপককে আক্রমণ করে। আত্মরক্ষার জন্য আমরা বাড়ির ভিতরে ঢুকে যাই। ভয় দেখাতে বোমাও ফাটায়। দীপককে রাস্তা থেকে তুলে কাছের তেনা পুকুরের পাড়ে নিয়ে যায়।’’ ওই পুকুরের পাড়েই দীপকবাবুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। খবর পেয়ে রাত ১২টা নাগাদ ফের গ্রামে গিয়ে পুলিশ ওই দেহ উদ্ধার করে।


ঘটনাস্থলে তখনও পড়ে রয়েছে নিহত তৃণমূল কর্মীর চশমা। (ইনসেটে) দীপক পাল। —নিজস্ব চিত্র

এ দিন দুপুরেও দেখা যায়, পুকুরের পশ্চিম পাড়ে চাপ চাপ রক্ত পড়ে। পাশেই বসতি। ওই রক্ত ডিঙিয়েই মহিলারা পুকুরে স্নান করতে যাচ্ছেন। কিন্তু, দীপকবাবুর খুনের ব্যাপারে কেউ কোনও কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। তাপসবাবুর দোকানের সামনে দীপকবাবুর চশমা ও এক পাটি চটিও পড়ে রয়েছে। রাস্তায় বোমার দাগ। দুষ্কৃতীরা কাছের একটি খড়ের চালাও পুড়িয়ে দিয়েছে। এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত দীপকবাবু পেশায় একটি খাদানের কর্মী ছিলেন। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে গ্রামেই থাকতেন। পড়াশোনার সুবিধার জন্য স্ত্রী সান্ত্বনাদেবী ছেলে সৌম্যজিতকে নিয়ে সিউড়িতে থাকেন। সৌম্যজিৎ সিউড়ি বেণীমাধব হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে। শাশুড়ি অসুস্থ, গ্রাম থেকে এই খবর দিয়ে তাঁদের ডেকে আনা হয়। খবর পেয়ে সকালেই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে ঘটনার কথা জানতে পেরে বাকরুদ্ধ হয়ে যান। টিনের কোঠাবাড়ির বারান্দায় শুয়ে মা শঙ্করীদেবী এ দিন বলেন, ‘‘একই ঘরে দু’জনে ঘুমাতাম। ছেলে রুটি খেয়ে দরজায় তালা দিয়ে শুতে যাচ্ছিল। তখনই ছেলের কাছে একটি ফোন আসে। কালীর (স্থানীয় তৃণমূল নেতা কালী বন্দ্যোপাধ্যায়) নাম করে কেউ ওকে ডাকে। ছেলে বাইরের দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়ে যা। আর ফেরেনি।’’

দীপকবাবুর বোন মল্লিকাদেবী এবং খুড়তুতো বোন কৃষ্ণা পালের অভিযোগ, কেউ দাদাকে ডেকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে। কৃষ্ণাদেবীরা বলেন, ‘‘দাদা বাঁচার জন্য অনেক চিৎকার করেছিল। কিন্তু, পালপাড়ার কেউ ঘর থেকে বেরোয়নি। বেরোলে হয়তো তাঁকে এ ভাবে মরতে হতো না।’’ এ দিকে, ঘটনার রাতে দীপকবাবুকে ফোন করে তিনি ডাকেননি বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য কালীবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘দীপকবাবু দলের বিশ্বস্ত কর্মী ছিলেন। সিপিএম ও বিজেপি-র লোকেরাই পরিকল্পিত ভাবে তাঁকে খুন করেছে।’’ অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়েও কারও দেখা মেলেনি। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ঘটনাটিকে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের বলেই দাবি করেছে বামেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE