জেলা কমিটি ঘোষণা করা হলেও দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে তিন ব্লক সভাপতির নাম জানাতে পারল না তৃণমূল।
দীর্ঘ টালবাহানা শেষে আড়াই বছর পরে বুধবার সন্ধ্যায় শাসকদলের পুরুলিয়া জেলা ও ব্লক কমিটির নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, দলীয় কোন্দলের জেরে নিতুড়িয়া, ঝালদা ২ ও জয়পুর— এই তিন ব্লকে সভাপতির নাম স্থির করতে পারেননি দলের নেতারা। সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঠানো তালিকায় ওই ব্লকগুলির সভাপতির নাম পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো দাবি করেছেন, ‘‘জেলা বা ব্লক কমিটি গঠন নিয়ে দলের কোথাও কোনও সমস্যা নেই। যে ব্লকগুলিতে সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়নি, সেখানে আপাতত আমি নিজেই সংগঠনের কাজ দেখব।”
দলের একটি সূত্রের খবর, নিতুড়িয়ায় রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি ও আগের ব্লক সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদবের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণেই এই ব্লকে সভাপতির নাম ঝুলিয়ে রাখা হল। এখানে কাকে বাদ দেবে, আর কাকে ব্লক সভাপতি করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারা যায়নি। তবে পূর্ণচন্দ্রবাবু দাবি করেছেন, ‘‘ওই তালিকা দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব কমিটি স্থির করেছেন। এখানে আমার চাওয়া বা না চাওয়ার কোনও বিষয় নেই।”
একইভাবে জয়পুরে পূর্ততন ব্লক সভাপতি কীর্তন মাহাতো ও বিধায়ক শক্তিপদ মাহাতোর মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রভাবেই এই ব্লকে সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়নি। ঝালদা ২ ব্লকে আবার সভাপতি সুনীল কুমারের বিরুদ্ধে অতীতে দলের কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ পুরুলিয়া শহরে এসে দলের জেলা কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। সেই প্রক্ষিতে ওই ব্লকে দলের মধ্যেকার সমীকরণ মিলিয়ে ব্লক সভাপতির নাম স্থির করতে পারেননি জেলা নেতৃত্ব।
একই ভাবে বাঘমুণ্ডিতেও প্রাক্তন ব্লক সভাপতি গয়াসুর মাঝিকে আনা হয়েছে জেলা কমিটিতে। ওই ব্লকের সভাপতি যুগ্মভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে আসা আশুতোষ মাহাতো ও কাশীনাথ মাঝিকে। তবে ভিন্ দল থেকে আসা দুই নেতাকে যুগ্ম আহ্বায়ক করায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে তৃণমূলের মধ্যেই।
অন্যদিকে রঘুনাথপুর মহকুমার রঘুনাথপুর ১ ও রঘুনাথপুর ২ এই দুই ব্লকে সভাপতির নাম ঘোষণায় বড়সড় চমক আছে। দুই ব্লকেই দলীয় কোন্দলের জেরে আগে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি ও পাড়ার বিধায়ক উমাপদ বাউরিকে। এ বার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের সভাপতি হয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণ মাহাতোকে। সভাপতির দৌড়ে থাকা জেলা পরিষদের স্থানীয় দুই কর্মাধ্যক্ষের বদলে দলীয় সংগঠনের সাথে সেই ভাবে যুক্ত না থাকা কৃষ্ণবাবুকে কেন সভাপতি করা হল তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে দলের কর্মীদের একাংশের মধ্যে।
আবার রঘুনাথপুর ২ ব্লকে দলের কর্মীদের বিক্ষোভের জেরে অতীতে বরুণ মেহেতাকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে বিধায়ক উমাপদবাবুকে ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ বার ফের পুরনো পদে ফিরেছেন বরুণবাবু। দল সূত্রের খবর, ওই দুই ব্লকে বিধায়কদের সুপারিশেই ব্লক সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।
তবে দলের জেলা নেতৃত্বের দাবি, পরবর্তী সময়ে তিন ব্লকে সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে। দলীয় নেতৃত্ব এই দাবি করলেও বাস্তবে তা কবে কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দিহান দলেরই একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy