Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
তিন শাখায় টেট-এর ফর্ম

দীর্ঘ লাইনে দুর্ভোগ দিনভর

দৃশ্য ১: বিকেল ৪টে। টেটের আবেদনপত্র তুলতে সকাল থেকে রামপুরহাটের দুমকা রোডে থাকা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মুরারই থানা এলাকার উষারানি রবিদাস। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটে পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়েও আবেদনপত্র মেলেনি। তাই বুধবারও এসেছেন। এ দিনও মিলবে কিনা, জানেন না। দৃশ্য ২: একই ভাবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বোলপুরের ভুবনডাঙায় ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল লাভপুরের দেবপ্রিয় দাসকে।

(বাঁ দিকে) অপেক্ষার শেষ নেই সিউড়িতে। কখন মিলবে ফর্ম, বোলপুরের একটি রাষ্টয়াত্ত ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছাত্রছাত্রীদের। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

(বাঁ দিকে) অপেক্ষার শেষ নেই সিউড়িতে। কখন মিলবে ফর্ম, বোলপুরের একটি রাষ্টয়াত্ত ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছাত্রছাত্রীদের। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০১:৩২
Share: Save:

দৃশ্য ১: বিকেল ৪টে। টেটের আবেদনপত্র তুলতে সকাল থেকে রামপুরহাটের দুমকা রোডে থাকা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মুরারই থানা এলাকার উষারানি রবিদাস। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটে পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়েও আবেদনপত্র মেলেনি। তাই বুধবারও এসেছেন। এ দিনও মিলবে কিনা, জানেন না।
দৃশ্য ২: একই ভাবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বোলপুরের ভুবনডাঙায় ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল লাভপুরের দেবপ্রিয় দাসকে। বললেন, ‘‘ভোর ৫টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। কখন আবেদনপত্র পাব, কে জানে!’’
দৃশ্য ৩: সিউড়ি বাসস্টান্ডের ঠিক বিপরীতে থাকা ব্যাঙ্কের বাইরেও তখন যথেচ্ছ ভিড়। দুবরারপুরের মোনালিসা গড়াই সকাল ৭টা থেকে রাস্তার লাইনে অপেক্ষা করে বেলা আড়াইটে নাগাদ সবে ব্যাঙ্কের মধ্যে ঢোকার সুযোগ পেয়েছেন। বললেন, ‘‘কপাল ভাল। পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পরে ছায়ায় এলাম।’’ আবেদনপত্র জুটতে তখনও ঢের দেরি!
বুধবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য টেট পরীক্ষার আবেদনপত্র নেওয়ার জন্য পড়ুদের দুর্ভোগের এমনই ছবি ধরা পড়ল বীরভূমে। গোটা জেলায় সিউড়ি, রামপুরহাট ও বোলপুর মহকুমার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাত্র তিনটি শাখা থেকেই মিলছে ওই আবেদনপত্র। এক একটি মহকুমার এত সংখ্যক আবেদনকারীকে যেহেতু একটি ব্যাঙ্কের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে, তাই স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ছে দুর্ভোগ। এমনটাই বক্তব্য আবেদনকারী থেকে ব্যাঙ্ক কর্মী— প্রত্যেকেরই।

কেন শুধু মাত্র তিনটি শাখা? জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ বলছেন, ‘‘এটা জেলার সিদ্ধান্ত নয়। রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এটা ঠিক করেছে। সেখানেই ঠিক করে দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ককে। নির্দিষ্ট শাখা থেকেই আবেদনপত্র পাওয়া যাচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তা করতে গিয়ে আবেদনকারীদের আরও বেশি অসুবিধায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে না? রাজাবাবুর জবাব, ‘‘অন্যান্য দু’একটি জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে ও আবেদনপত্র দেওয়া হচ্ছে। আমরা সেটা করিনি, স্বচ্ছতা নিয়ে যাতে কোনও প্রশ্ন না ওঠে।’’ ‘স্বচ্ছতা’র সঙ্গে আবেদনপত্র দেওয়া ব্যাঙ্কের সংখ্যা বাড়ানোর কি বিরোধ, তার অবশ্য সদুত্তর মিলছে না।

এ দিকে, প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ২৯-৪ জুলাই পর্যন্ত ওই আবেদন পত্র দেওয়া হবে। আবেদনপত্রের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে সাধারণদের জন্য ১০০ টাকা, তফসিলি জাতি ও জনজাতির জন্য ২৫ টাকা। কিন্তু, এত সংখ্যক আবেদনকারী আবেদনপত্র নিতে গিয়ে গিয়ে চূড়ান্ত অব্যবস্থা, হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সকলেই বলছেন, ‘‘এভাবে কি রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আবেদনপত্র তোলা যায়? এখন যখন সব কিছুতেই অনলাইন প্রথা চালু হয়েছে, এখানেও সেটা হতে পারত।’’ আবেদনকারীদের দাবি, ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢুকেও নিস্তার নেই! প্রথমে যাচাই করা হচ্ছে আবেদনকারী কোন ক্যাটাগরিতে পড়েন। সাধারণ না তফসিলি জাতি ও জনজাতি। সেই অনুযায়ী টাকা জমার ফর্ম নিয়ে আবার লাইনে দাঁড়াও। টাকা জমা দিয়ে রসিদ নিয়ে ফের একপ্রস্থ লাইনে দাঁড়িয়ে তবেই মিলছে টেটের আবেদনপত্র। অভিযোগ, সেই আবেদনপত্র নিতেই গড়িয়ে যাচ্ছে ৪-৮ ঘণ্টা। বহু ক্ষেত্রে অপেক্ষাই সার। একরাশ বিরক্তি আর হতাশা নিয়েই ফিরতে হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা আবেদনকারীদের। পরের দিন ফের একই ভাবে লাইনে দাঁড়াতে হবে তাঁদের।

শুধু টেট আবেদনকারীরাই নন, মাসের প্রথমেই এ ভাবে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে আবেদনপত্র বিলিকে ঘিরে অসুবিধায় পড়ছেন ব্যাঙ্কের অন্যান্য গ্রাহকেরাও। সিউড়িতেই দোতলায় থাকা ব্যাঙ্কের বাইরে ও সিঁড়িতে যে ভিড়, তাতে অন্যদের (বিশেষ করে বয়স্ক পেনশন গ্রাকদের) অসুবিধার সীমা নেই। অনেকে এ দিন ব্যাঙ্কের মধ্যে ঢুকতেই পারেননি। কর্মীরাই বলছেন, ‘‘এত ভিড়! প্রায় দমবন্ধকরা পরিস্থিতি। টাকা নিতে গিয়ে অধিকাংশ কাউন্টারে থাকা ব্যঙ্ক কর্মীরাও হিমশিম খাচ্ছেন। অন্য পরিষেবা দেব কী ভাবে!’’ রামপুরহাটে অবশ্য ওই রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কের মূল শাখা থেকে টেটের আবেদনপত্র দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু যে শাখা থেকে আবেদনপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, সেখানে না আছে পরিকাঠেমো না আছে পর্যাপ্ত কর্মী। আরও বড় কথা দীর্ঘ অপেক্ষা করার সময়, কেউ যে কিছু খাবেন— ব্যাঙ্কের সামনে তেমন খাবারের দোকান পর্যন্ত নেই। বোলপুরের শাখা অবশ্য অনান্য গ্রহকদের পরিষবা দিতে পারছে বলেই দাবি করেছে। কিন্তু, আবেদনপত্র নেওয়ার জন্য লম্বা লাইন এখানেও।

যা পরিস্থিতি টেটে বসতে ইচ্ছুকদের সকলেই আবেদনপত্র পাবেন কি না, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। রাজাবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘ঠিকঠাক ভাবেই তো আবেদন পত্র বিলি হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE