Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

যোগাযোগ বেড়েছে, দাবি স্টেশন সংস্কারের

রেল ও সড়ক পথের যোগাযোগের দিক থেকে সাঁইথিয়া শহর জেলার অন্যতম। জেলার রেল যোগাযোগের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র সাঁইথিয়া। একদিকে হাওড়া, বর্ধমান থেকে উত্তরবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, আসাম-সহ সমগ্র পূর্ব ভারতের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ।

সাঁইথিয়া স্টেশনে দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগারের সামনের এলাকা। ছবি: অনির্বাণ সেন।

সাঁইথিয়া স্টেশনে দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগারের সামনের এলাকা। ছবি: অনির্বাণ সেন।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০১:০২
Share: Save:

রেল ও সড়ক পথের যোগাযোগের দিক থেকে সাঁইথিয়া শহর জেলার অন্যতম। জেলার রেল যোগাযোগের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র সাঁইথিয়া। একদিকে হাওড়া, বর্ধমান থেকে উত্তরবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, আসাম-সহ সমগ্র পূর্ব ভারতের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। অন্যদিকে সাঁইথিয়া অন্ডাল রেলপথ মাধ্যমে আসানসোল, রানিগঞ্জ, রাঁচি ধানবাদ-সহ দেশের পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ শহর সাঁইথিয়া জংশনের। অথচ, নানা সমস্যায় এখনও পিছিয়ে সাঁইথিয়া রেল জংশন। স্থানীয়রা বলেন, সাঁইথিয়া ভারতীয় রেলের কাছে আজও দুয়োরানি।

রেলের তথ্য বলছে, ১৮৫০-এর দশকে বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের সূচনা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্মিত ১৮৫৭-৫৮ সালে বর্ধমান থেকে বোলপুরের আগে অজয় নদ পর্যন্ত রেলপথের কাজ শেষ হয়। এবং একই সঙ্গে ওই রেলপথ চালু হয়েছিল। এর বছর দেড়-দুয়েক পর ১৮৫৯-৬০ সালেই বর্ধমান সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের সাঁইথিয়া হয়ে নলহাটি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ করে ওই কোম্পানি। এবং ওই সময়েই রেলগাড়ি চলাচল শুরু করে।

জেলার রেল স্টেশনগুলির মধ্যে সাঁইথিয়ার স্টেশনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে জেলায় রেলের একমাত্র রেলওয়ে থানা স্থাপন করা হয়। একদিকে অজয় নদের পর অর্থাৎ দক্ষিণে জেলার শুরু থেকে উত্তরে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের নগরনবি আগে পাথরঘাটা ব্রিজ পর্যন্ত ১১৭ কিলোমিটার রেলপথ। অন্যদিকে সাঁইথিয়া থেকে ভীমগড়ের অজয় নদের সেতু পর্যন্ত এই বিস্তীর্ণ রেলপথও ছিল সাঁইথিয়া রেল পুলিশের অধীনে। সময়ের সঙ্গে রেলেও পাল্লা দিয়ে ক্রাইম বেড়ে যাওয়ায় সাঁইথিয়া জিআরপির চাপ কমাতে জেলার সদর শহর তথা সাঁইথিয়া-অন্ডাল রেল পথের সিউড়িতে আরেকটি জিআরপি থানা স্থাপন করা হয়। ১৯৮৪ সালেরর প্রথম দিকে ওই থানার উদ্বোধন করেন এসআরপি হাওড়া রজত কান্তি মজুমদার। সাঁইথিয়ার আউট সিগনাল থেকে ভীমগড় পর্যন্ত সিউড়ি জিআরপির অধীনে। শুধু রেল পুলিশ কেন সাঁইহিয়া স্টেশনের গুরুত্ব বুঝে রেল সুরক্ষা বাহিনি বা আরপিএফ ইন্সপেক্টর বোলপুরের অধীন থেকে সাঁইথিয়াকে সম্প্রতি পৃথক করে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, রেল ইতিহাসের সুপ্রাচীন সাক্ষী হয়েও ভারতীয় রেলের কাছে কদর নেই এই জংশনের। সাঁইথিয়ায় জংশনে এখন অধিকাংশ দূরপাল্লার ট্রেন থামে না! স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলি বিশেষ করে ১-২ প্ল্যাটফর্মটির অবস্থা খুবই খারাপ। মাঝে মধ্যেই যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মের খানাখন্দে পড়ে যান। ট্রেন পাল্টানোর ব্যস্ততায় বা ট্রেন থেকে নেমে বাস ধরার ব্যস্ততায় কেউ যদি ওই প্ল্যাটফর্মে হোঁচোট খেয়ে ট্রেনের তলায় গলে যায় তাহলে আর নিস্তার নেই। এমন ঘটনা যে ঘটেনি তাও নয়। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বড় উদাসীন।

সাঁইথিয়া থেকে মুর্শিদাবাদের কান্দী হয়ে চৌরীগাছা পর্যন্ত নতুন রেল পথের দাবিও দীর্ঘ দিনের। রেল পথের জন্য রেলের পক্ষ থেকে জমির মাপজোকও হয়ে গেছে। কিন্তু সে লাইন আর হল কই! অনেক এক্সপ্রেস বা মেল ট্রেনও থামে না। এমনকী উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে শিয়ালদহ-দার্জিলিংমেলের মতো ট্রেনের স্টপেজও। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে সাঁইথিয়া পুর কর্তৃপক্ষ ও কান্দি-সাঁইথিয়া রেল ওয়ে সযুক্তি করণ কমিটি দীর্ঘদিন থেকে বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়ে আসছে।

সেই দাবিগুলি হল, নন্দিকেশ্বরী মন্দির চত্বরের আশপাশে একটি টিকিট কাউন্টার, রেল লাইনের উত্তরে যে ফুটব্রিজ আছে তা সংস্কার। দক্ষিণ দিকে আরেকটি ফুটব্রিজ ও রেল সেতুর সম্প্রসারণ। দূরপাল্লার সমস্ত ট্রেন ও দার্জিলিংমেলের স্টপেজ। এবং সর্বপরি প্ল্যাটফর্মগুলির টয়লেট, আলো, পানীয় জল, বসার ব্যবস্থা ও শেড-সহ আধুনিকীকরণ। পুর প্রধান বিপ্লব দত্ত ও কান্দী রেলওয়ে সংযুক্ত করণ কমিটির সম্পাদক প্রভাত কর বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন থেকে এই সব দাবি জানিয়ে আসছি। অনেক আন্দোলন করা হয়েছে। যখনই আন্দোলন করা হয়েছে তখনই রেল কর্তৃপক্ষ দাবি পুরণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে রেলসেতু সম্প্রসারণের কথা ঘোষণা করেছেন। এবং পুজোর আগেই কাজ শুরু হওয়ার কথা।’’ এরই মধ্যে সাঁইথিয়া-অন্ডাল ও বর্ধমান-রামপুরহাটের মধ্যে ইলেকট্রিক ট্রেন চলাচলের লাইনের কাজও প্রায় শেষের দিকে।

স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল দত্ত, অরুণ চক্রবর্তীদের কথায়, ‘‘শহরে কাছাকাছি তেমন কোনও ফাঁকা জায়গা না থাকায় বহু প্রবীণ মানুষের বৈকালিক বেড়ানোর জায়গা এই রেল স্টেশন। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা উপেক্ষা করেও বহু মানুষ যেমন প্রয়োজনের তাগিদে এই রেল স্টেশনে যাতায়াত করেন। দেখি, স্টেশনের রেল যাত্রী থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে আশা লোকজনের কি দুর্দশা আর ভোগান্তি। বিশেষ করে বর্ষার সময়। ভাঙাচোরা প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ঠিক মতো চলা যায় না। তারপর শেডগুলো দিয়ে জল পড়ে। ঠিক মতো আলোও জ্বলে না।’’

রেল কর্তৃপক্ষ তেমন কোনও আশ্বাস না শোনালেও রেলের মুখ্য ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার আরপি ব্যাস বলেন, ‘‘রেল সেতু নির্মাণে আর কোনও বাধা নাই। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE