নিত্য দিনের ছবি। শুক্রবার সকালে দুবরাজপুরে জাতীয় সড়কে তোলা নিজস্ব চিত্র।
সংস্কার হচ্ছে ইলামবাজারে অজয় সেতুর। ফলে পানাগড়-দুবরাজপুর ১৪ নম্বর রাজ্য সড়ক ধরে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। ওই রাস্তায় চলাচলকারী অধিকাংশ যানবাহনই বর্তমানে চলাচল করছে দুবরাজপুর শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে।
আর সেটাই সবচেয়ে সমস্যায় ফেলেছে মানুষজনকে। সমস্যা তীব্র যানযটের। অফিসযাত্রী, নিত্যযাত্রী, স্কুলপড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ— যাঁদের প্রতিদিন জীবিকার সন্ধানে দুবরাজপুর শহরে বেরোতে হয় বা শহর থেকে বাইরে যেতে হয়। কিংবা বাইরে থেকে শহরে আসতে হয়। সকলেরই বক্তব্য, ‘‘রাস্তায় বেরিয়ে বাস, লরি, ভারী ট্রেলার ও অন্যান্য যানবাহনের ফাঁসে আটকে বেমালুম বেশ কয়েক ঘণ্টা স্রেফ চুরি হয়ে যাচ্ছে।’’ দুবরাজপুরের ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ, ‘‘পুজোর ঠিক আগেই এমন ভোগান্তির কথা ভেবে বাইরের লোক জন পারতপক্ষে দুবরাজপুর শহরই এড়িয়ে চলতে চাইছেন। মার খাচ্ছে ব্যবসা।’’ দুবরাজপুর ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক সত্যপ্রকাশ তিওয়ারি বলছেন, ‘‘পুজোর মুখে ভাল বেচাকেনা হবে, এই আশায় আমরা থাকি। কিন্তু এ বার যানযটের জন্য আমরা হাত গুটিয়ে বসে আছি।’’
প্রশাসন সূত্রের খভর, বর্ধমান ও বীরভূম প্রশাসনের মিলিত সিদ্ধান্তে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত সংস্কারের জন্য ইলামবাজারে অজয় সেতু বন্ধ থাকবে। সেই কারণে দুর্গাপুর থেকে সিউড়ি, মালদহ, বহরমপুরগামী সব সরকারি-বেসরকারি বাস বর্ধমানের রানিগঞ্জ হয়ে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরছে। একই ভাবে উত্তরবঙ্গ থেকে দুর্গাপুর, আসানসোলগামী ভারী গাড়ি, যেগুলি দুবরাজপুরের সাতকেন্দুরী মোড় থেকে ১৪ নম্বর রাজ্য সড়ক ধরে পানাগড় হয়ে গন্তব্য পৌঁছত, তাদেরও দুবরাজপুর শহরের ভিতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। এ দিকে, ঘিঞ্জি দুবরাজপুর শহরের মধ্যে জাতীয় সড়কও তুলনায় কম চওড়া এবং শহরের কোনও বাইপাস রাস্তা নেই। ফলে সমস্যা বাড়িয়েছে অতিরিক্ত যানবাহন, বিশেষ করে ভারী গাড়ির যাতায়াত।
যদিও প্রচুর যানবাহনের স্রোত এবং তীব্র যানজট সকলের অসুবিধা করেছে, তেমনটা কিন্তু নয়। গাড়ি চালক ও ওই রাস্তা দিয়ে যাঁদের নিত্য যাতায়াত, তাঁদের একাংশের মৌখিক অভিযোগ, ‘‘চাঁদা শিকারিরা তো আছেই (যে কোনও অজুহাতে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাঁরা চাঁদা আদায়ে সিদ্ধহস্ত)। দুর্গাপুজোকে উপলক্ষ করে এত বড় সুযোগ তাঁরা ছাড়েন কী করে।’’ দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডেও অভিযোগের সত্যতা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের এ ব্যাপারে একটু তৎপর হওয়া উচিত। যদিও শুধু চাঁদা শিকারি নয়, জাতীয় সড়কে পুরসভার টোল আদায়ের দায়িত্ব থাকা কিছু কর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের (যানযট ছাড়ানোর মূল দায়িত্ব যাঁদের হাতে) একাংশের দায়িত্ব ও নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন চালকেরা।
চালকদের একাংশের অভিযোগ, ভারী গাড়ি দুবরাজপুর শহর পার করাতে মওকা বুঝে নির্ধারিত রেটের থেকে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে টোল আদায়ের ক্ষেত্রে। কেউ কেউ আবার আঙুল তুলছেন সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের দিকেও। হঠাৎ করে এত সংখ্যক ভারী গাড়ি বেড়ে যাওয়ায় জন্যই এমন যুযোগ এসেছে কারও হাতে। যদিও টোল আদায় নিয়ে অভিযোগ মানেননি পুরপ্রধান। তাঁর দাবি, ‘‘টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা এমনটা করেছেন বলে প্রমাণ নেই।’’
সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, সেতুটির সংস্কার জরুরি ছিল। তবে, অসুবিধা যে হচ্ছে এটাও ঠিক। আর ভুক্তভোগীরা বলছেন, ‘‘সবে তো ৯ তারিখ গেল। বাকি ছ’টি দিন যে কীভাবে পার হবে, জানি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy