Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বাঁকুড়ায় টেটের জন্য আলাদা লাইন, থাকল ব্যারিকেডও

রক্ত ঝরতে সক্রিয় শিক্ষা দফতর

চাকরি প্রার্থীর রক্ত ঝরার পড়ে হুঁশ ফিরল প্রশাসনের। প্রাথমিকে টেটের ফর্ম তোলা নিয়ে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার বিদ্যাভবনের চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার পরে শুক্রবার সেখানে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল প্রশাসনকে। এ দিন বিদ্যাভবন লাগোয়া এলাকায় অসংখ্য ব্যারিকেড তৈরি করা হয়।

ভোর থেকে লাইন দিয়ে ফর্ম হাতে পেয়ে সেখানেই পূরণ করতে বসে গিয়েছেন বহু আবেদনকারী। পাশে তখনও দীর্ঘ লাইন। শুক্রবার বিদ্যাভবনে অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

ভোর থেকে লাইন দিয়ে ফর্ম হাতে পেয়ে সেখানেই পূরণ করতে বসে গিয়েছেন বহু আবেদনকারী। পাশে তখনও দীর্ঘ লাইন। শুক্রবার বিদ্যাভবনে অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০২:০৩
Share: Save:

চাকরি প্রার্থীর রক্ত ঝরার পড়ে হুঁশ ফিরল প্রশাসনের। প্রাথমিকে টেটের ফর্ম তোলা নিয়ে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার বিদ্যাভবনের চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার পরে শুক্রবার সেখানে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল প্রশাসনকে। এ দিন বিদ্যাভবন লাগোয়া এলাকায় অসংখ্য ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা লাইনের ব্যবস্থা করা হয়। ফর্ম বিলির সময়ও এগিয়ে আনা হয়। পুরো বিষয়টি দেখভালের জন্য জেলা পুলিশের আধিকারিকরা তো বটেই খোদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সনকেও এলাকায় নজর রাখতে দেখা গিয়েছে। এক চাকরি প্রার্থীর মন্তব্য, শিক্ষা দফতর প্রথম দিন থেকেই এই ব্যবস্থা নিলে রক্তও ঝরত না, অশান্তিও এড়ানো যেত।

গত ২৯ জুন থেকে ওই ফর্ম বিলি শুরু হয়েছে। আজ শনিবার ফর্ম বিলি শেষ হবে। এ দিকে গোটা জেলায় শুধুমাত্র বাঁকুড়া শহরে এই বিদ্যাভবন থেকেই ফর্ম বিলি করা হচ্ছে। তাই ফর্ম নিতে আগ্রহীদের রোজই লম্বা লাইন পড়ছিল। এতে শহরের রাস্তায় যেমন চাপ পড়েছে, তেমনই জেলা প্রশাসনের ভরকেন্দ্র জেলাশাসকের অফিস লাগোয়া এই এলাকাতেও তুমুল ভিড় দিনভর লেগেই রয়েছে। এতে চাকরি প্রার্থীরা তো বটেই, সাধারণ মামুষও নাকাল হচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিদ্যাভবনের ভিতরে ঢোকার হুড়োহুড়িতে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। কয়েকজন পুলিশকর্মী লাঠি উঁচিয়ে সামাল দিতে গেলে হিতে বিপরীত হয়। এ ওর গায়ে হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায়। চোট পায় কয়েকজন।

ওই ঘটনার পরেই পুলিশ ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সিদ্ধান্ত নেয়, এ বার বিশৃঙ্খলা রুখতে আরও আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার গোলমালের পরেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন রিঙ্কু বন্দ্যোপাধ্যায় তেমনই আভাষ দিয়েছিলেন। গত কয়েকদিন সকাল ১০টা থেকে ফর্ম বিলি শুরু হচ্ছিল। কিন্তু সাত সকাল থেকেই ফর্ম তোলার জন্য লম্বা লাইন পড়ে যাচ্ছিল। তাই ফর্ম বিলি শুরু হতেই হুড়োহুড়ি আরম্ভ হয়ে যেত। তাই এ দিন সময় এগিয়ে এনে সকাল ৯টা থেকে ফর্ম বিলি শুরু করা হয়। তাতে কিছুটা ক্ষোভ কমে চাকরি প্রার্থীদের। তবে ফর্মবিলির কাউন্টার বাড়ানো হয়নি। ৯টিই কাউন্টার ছিল। টহলদারি পুলিশের সংখ্যাও গত কয়েকদিনের থেকে বেশি ছিল। এ ছাড়া জেলা পুলিশের ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) বাপ্পাদিত্য ঘোষ, বাঁকুড়া সদর থানার আইসি রাজর্ষি দত্ত প্রমুখ।

তবে ব্লকে ব্লকে না হলেও প্রতিটি মহকুমায় ফর্ম বিলির কেন্দ্র কেন খোলা হল না, সে প্রশ্ন অবশ্য এ দিনও উঠেছে। ফর্ম তুলতে আসা সারেঙ্গার শিপ্রা সিংহ মহাপাত্র, বেলিয়াতোড়ের সন্দীপন হাজরা বলেন, ‘‘অনেক জেলায় বহু ব্যাঙ্ক থেকেও ফর্ম দেওয়া হচ্ছে। তাদের ভোগান্তি তুলনায় কম। কিন্তু আমাদের ভোরবেলায় এসে লাইন দিতে হয়েছে। ফর্ম তোলার সুযোগ যদি সবাই নাই পেল, তাহলে পরীক্ষা নেওয়ার মানেটা কী?’’ একই ক্ষোভ শোনা গিয়েছে আরও অনেক চাকরিপ্রার্থীর মুখে। অনেকের অভিযোগ, শুধু ফর্ম তুললেই হবে না। জমা দেওয়ার তো বেশি সময় হাতে নেই। এ দিন বিদ্যাভবন চত্বরেই অনেকে ফর্ম পূরণ করতে বসে পড়েন। তাঁরা বলেন, ‘‘হাতে আর সময় নেই। শনিবারই ফর্ম তোলা জমা দেওয়ার শেষ দিন। তার উপরে অনেক দূরে বাড়ি। তাই এখানেই জমা দিয়ে যাচ্ছি।’’

কিন্তু ফর্ম পূরণ করাও সহজ কথা নয়। ফর্মে আবার আবার বিশিষ্ট চাকুরিজীবীদের দিয়ে ‘অ্যাটেস্টেড’ করানোরও হ্যাপা রয়েছে। তাই অনেকেই বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন স্কুলে প্রধান শিক্ষকদের কাছে সই করাতে ভিড় করছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন স্কুলগুলির প্রধানশিক্ষকেরা। এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘আমরা স্কুলের কাজ সামলাব, না ফর্মে সই করব? স্কুলের সামনে লাইন পড়ে যাচ্ছে। ঘণ্টায় ৮০-৯০ জনের সই করা সম্ভব? তাই করতে হচ্ছে।’’

এ দিকে, টেটের ফর্ম বিলির দিন আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছে বিজেপি। এ দিন বাঁকুড়া জেলাশাসকের দফতরে গিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয় দলের তরফে। দলের বিভাগীয় সম্পাদক শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘চাকরি দেওয়ার নামে রাজ্য সরকার যে প্রহসন করছে তা সবার কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেল। রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বেকার ছেলেমেয়েদের চরম নাকাল হতে হচ্ছে।’’ এ দিকে, বিদ্যাভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, বিকেল পর্যন্ত ফর্ম বিলির দিন বাড়ানো নিয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি। তাই শনিবারকেই শেষ দিন ধরে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেছে বিদ্যাভবন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন রিঙ্কু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শনিবারই শেষ দিন হলে ফর্ম জমা নেওয়ার স্থান বদলে জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে। তবে ফর্ম যথারীতি বিদ্যাভবন থেকে বিলি করা হবে।’’ তিনি জানান, আজ, শনিবার ফর্ম ‘অ্যাটেস্টেড’ করে দেওয়ার জন্য স্কুল শিক্ষা দফতরের সাব-ইনস্পেক্টরদের বিদ্যাভবনে থাকতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE