Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উলটপুরাণ, বৃত্তির টাকা পাঠাল রাজ্য

আনন্দবাজারে খবর প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসল রাজ্য সরকার। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার বীরভূমে তফসিলি জাতি ও জনজাতির ছাত্রছাত্রীদের জন্য হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করার জন্য নির্ধারিত বৃত্তির বকেয়া টাকার একাংশ পাঠাল রাজ্য অনুন্নত শ্রেণিকল্যাণ দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০১:০০
Share: Save:

আনন্দবাজারে খবর প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসল রাজ্য সরকার। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার বীরভূমে তফসিলি জাতি ও জনজাতির ছাত্রছাত্রীদের জন্য হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করার জন্য নির্ধারিত বৃত্তির বকেয়া টাকার একাংশ পাঠাল রাজ্য অনুন্নত শ্রেণিকল্যাণ দফতর।

দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক কাজল সাহা বলেন, ‘‘২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষের বকেয়া টাকার কিছুটা পাঠানো হয়েছে। যে পরিমাণ টাকা এসেছে, তা থেকে অন্তত ৩০০ জন পড়ুয়াকে বৃত্তি দেওয়া যাবে। টাকা পাওয়া মাত্রই পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তা পাঠানোর কাজও শুরু হয়েছে।’’ তবে বৃত্তি না আসায় যে স্কুল কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিকের মার্কশিট আটকে দিয়েছিল, তাদের ছাত্রীরা ওই তিনশো জনের মধ্যে রয়েছে কিনা তা এখনই জানাতে পারেননি কাজলবাবু।

ঘটনা হল, তফসিলি জাতি ও জনজাতির ছাত্রছাত্রীদের জন্য হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করার বৃত্তি জোগায় কেন্দ্রীয় সরকার। অভিনযোগ, বীরভূমের ৮২টি স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি গরিব পড়ুয়া গত দশ মাস ধরে সেই বৃত্তি পায়নি। বৃত্তির টাকা তাদের হাতে না আসায় এত দিন ধরে হস্টেলের খরচ জুগিয়েছে স্কুল। মাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা হস্টেল ছাড়তে গেলে এখন অনেক স্কুলই সেই টাকা ফেরত চাইছে। গরিব ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশই তা দিতে পারছে না। বকেয়া টাকা দিতে না-পারায় মুরারইয়ের গৌরাঙ্গিনী বালিকা বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল ছাত্রীদের মাধ্যমিকের মার্কশিট আটকে দিয়েছিল। ফলে, সেখানকার ছাত্রীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফর্ম তুলতে পারছিল না। অথচ ভর্তির দিন ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। জেলাশাসক ও স্কুল পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) কাছে লিখিত আবেদন করলেও সোমবার পর্যন্ত সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। ছবিটা বদলে গেল সংবাদমাধ্যমে সমস্যার কথা প্রকাশিত হতেই।

যদিও সোমবারই দফতরের এক কর্তা দাবি করেছিলেন, স্কুলের তরফে ঠিক ভাবে আবেদন না করার ফলেই এমনটা হয়ে থাকতে। পারে। সে কারণেই রাজ্য সরকার বরাদ্দ অর্থের একটা অংশ খরচই করতে পারেনি। অন্য দিকে, তফসিলি জাতি ও জনজাতি বিভাগের মুরারই ১ ব্লক দফতরের সহকারী পরিদর্শক আলাউদ্দিন শেখ বলছেন, ‘‘অনেক দিন আগের ঘটনা। অনলাইনে আবেদন করার পরে আবেদনপত্র সঠিক ভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল কিনা, তা বলতে পারব না। তবে, অফিস থেকে নির্দেশ ছিল আবেদনের পরে আবেদনকারীরা যেন দফতরে এসে আবেদনপত্র দফতরের কর্মীদের দিয়ে ভাল করে পরীক্ষা করে নেয়।’’

জেলার স্কুলগুলি অবশ্য সেই ব্যাখ্যা মানতে চাননি। মুরারইয়ের স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা অন্বেষা দত্ত বলছেন, ‘‘২০১৪ সালের জুন মাসে সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নভেম্বরের মধ্যেই ছাত্রীদের অ্যাকাউন্ট নম্বর, শংসাপত্রের নম্বর, স্কুলের নাম, কোন বছরের ছাত্রী— সেই সব কিছু তথ্য দিয়ে অনলাইনে আবেদন করা হয়েছিল। তার হার্ডডিস্ক মুরারই ১ ব্লক তফসিলি জাতি ও জনজাতি দফতরে জমাও দেওয়া হয়েছিল।’’ তাঁ দাবি, তার পর থেকেই সরকার থেকে আর কিছু চেয়ে পাঠানো হয়নি। কিন্তু, মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও ছাত্রীরা বৃত্তির টাকা পায়নি। এমন চিত্র অন্য স্কুলগুলির বলে দাবি। টাকা না পাওয়ায় স্কুলগুলিকে নিজেদের খরচেই পড়ুয়াদের থাকা-খাওয়ার ভার নিতে হয়েছে। পড়ুয়াদের খরচ চালানোর জন্য স্কুলগুলির দোকানে-বাজারে প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছে। বকেয়া বহু টাকার বিদ্যুৎ বিলও।

এ দিকে, দফতর সূত্রের খবর, মঙ্গলবার ২০১৪–’১৫ অর্থবর্ষের যে পরিমাণ টাকা এসেছে, তাতে জেলার ৮২টি হস্টেলের নবম-দশম শ্রেণির সমস্ত পড়ুয়ার বৃত্তির পক্ষে পর্যাপ্ত নয়। আর এই মুহূর্তে কারা পেল, কারা পেল না, তা-ও দফতরের কর্তারা জানাতে পারছেন না। কাজলবাবু এ দিন বলেন, ‘‘অনলাইনে রেজিস্ট্রি নম্বর দেখার পরেই কারা কারা টাকা পাচ্ছে, আর কারা পেল না— তা বোঝা যাবে। যারা পেল না, তাদের ক্ষেত্রে বুঝতে হবে অনলাইনে আবেদন করতে কোথাও ভুল হয়েছে।’’ বকেয়া বৃত্তির টাকা আসা মাত্রই দফতরের পক্ষ থেকে মুরারই গৌরাঙ্গিনী বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

তবে, ওই স্কুলের ছাত্রীদের অভিভাবকেরা জানান, মার্কশিট না পাওয়ায় মেয়েরা এ দিনও কান্নাকাটি করছে। এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘মেয়েরা বৃত্তির বকেয়া টাকা পেল কিনা এখনও জানতে পারিনি। না পেলে এ বার শিক্ষামন্ত্রীর দ্বারস্থ হব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE