Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
খবর পেয়ে বাঁধনমুক্ত করল পুলিশ

মানসিক ভারসাম্য নেই, পায়ে বেড়ি

বাড়ির দাওয়ায় সারাদিন বসে থাকেন প্রৌঢ়া। চৌকাঠের ওপারে দীর্ঘদিনের ঘরকন্নার স্মৃতি। অনেক কষ্টে ছেলেমেয়েদের বড় করে তুলেছেন ওই ঘরগুলিতেই।

 শিকল: এ ভাবেই দিনভর বাঁধা থাকেন বান্দোয়ানের তিলকা সিংহ। নিজস্ব চিত্র

শিকল: এ ভাবেই দিনভর বাঁধা থাকেন বান্দোয়ানের তিলকা সিংহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৩
Share: Save:

বাড়ির দাওয়ায় সারাদিন বসে থাকেন প্রৌঢ়া। চৌকাঠের ওপারে দীর্ঘদিনের ঘরকন্নার স্মৃতি। অনেক কষ্টে ছেলেমেয়েদের বড় করে তুলেছেন ওই ঘরগুলিতেই। এখন তাঁর দু’পায়ে বেড়ি। ঘসা লেগে কড়া পড়ে গিয়েছে দু’পায়েই। দুপুরে দাওয়ায় আসে খাবার। রাতে ঘুমও সেখানেই।

বান্দোয়ানের সুপুডি গ্রামের বছর আটচল্লিশের তিলকা সিংহ। পরিবারের দাবি, গত দু’মাস মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলাকে বাধ্য হয়ে শিকল দিতে বেঁধে রাখতে হয়েছে। স্বামী ললিত সিংহ বলেন, ‘‘প্রায় দু’-তিন বছর ধরে ও মানসিক রোগে ভুগছে। এলাকায় থেকে যা করা সম্ভব করেছি, কিন্তু কাজ হয়নি।’’ তাঁর দাবি, আর্থিক সামর্থ না থাকায় বাইরে নিয়ে গিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারননি। ললিত এবং তিলকার এক মেয়ে আর দুই ছেলে। বড় ছেলে উত্তম বিয়ে করে আলাদা থাকেন। ছোট ছেলে গৌতম জুনিয়র কনস্টেবলের চাকরি পেয়েছেন। থাকেন ভিন জেলায়।

গৌতম অবশ্য দাবি করেছেন পুরুলিয়ায় মানসিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে মায়ের চিকিৎসা করিয়ে এনেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বাবা, দিদি— দু’জনেই অসুস্থ। আমিও বাইরে চাকরি করি। মায়ের নিয়মিত ওষুধ খাওয়া হতো না।’’ তাঁর দাবি, মাস ছয়েক আগে একদিন হঠাৎ বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান তিলকা। প্রায় তিন মাস পরে তাঁর খোঁজ মেলে পাশের গ্রামে। বাড়িতে আসার পরে উন্মত্ততা বেড়ে গিয়েছিল। ঢিল ছোড়া ও নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করতেন বলে তাঁদের কাছে প্রতিবেশীরা অভিযোগ করতে থাকেন। সে জন্য বাধ্য হয়ে তাঁকে বেঁধে রাখতে হয়েছে বলে দাবি গৌতমের।

পড়শিরা জানান, এক সময়ে স্বামীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চাষ করেছেন তিলকা। দিন মজুরি করেছেন। কারও সাতে পাঁচে থাকতেন না। বছর দু’য়েক আগে প্রথম তাঁর আচরণে অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। পড়শি কয়েকজনের দাবি, ঠিকমতো চিকিৎসা না করানোতেই বিকার বেড়ে যায় তিলকার।

২০০১ সালের ৬ অগস্ট তামিলনাড়ুর এরওয়াড়ি গ্রামে একটি দরগায় পুড়ে মারা যান ২৮ জন মানসিক রোগী। প্রত্যেকের পায়ে শেকল খুঁটির সঙ্গে বাঁধা ছিল। সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সেই বিষয়টি বিচারের জন্য গ্রহণ করে। চিকিৎসারত মানসিক রোগীদের কোনও ভাবে বেঁধে রাখা যাবে না বলে রায় দেওয়া হয়।

কিন্তু মনোরোগীদের মানবাধিকার যে এত বছর পরেও সেই তিমিরেই, তা প্রায়ই প্রকাশ্যে এসে চলেছে। সুপুডি পঞ্চায়েতের প্রধান দুলাল কিস্কু দাবি করেছেন, এ দিনই প্রথম ঘটনাটির কথা জানতে পারেন তিনি। ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। দুলালবাবু বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষে যতদূর করা সম্ভব আমরা করব।’’

বিষয়টি পুলিশও প্রথম জানতে পারে এ দিনই। গ্রামে গিয়ে পরিবারটির সঙ্গে কথা বলতেই বেড়ির বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু যথাযথ চিকিৎসার বন্দোবস্ত না হলে সেই মুক্তি কত দিন থাকবে, তা নিয়ে সন্দিহান পড়শিদের একাংশই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mentally ill Woman shackle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE