Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিশ্রুতি দিয়েই বিয়ে করেননি, লড়াই শেষে মিলল ছ’হাত

বিশ্বাসভঙ্গের যে কাহিনির শুরু দু’জনের প্রেমের মধ্যে দিয়ে, আদালতের নির্দেশে সেই কাহিনির যবনিকা পড়ল মালাবদল করে।বুধবার পুরুলিয়া জেলা সংশোধনাগারে সাতপাকে বাঁধা পড়লেন সুমা বাউরি ও তাঁর প্রেমিক মনোজ বাউরি। দীর্ঘ লড়াইয়ের স্বীকৃতি পেলেন ওই যুবতী। একই সঙ্গে সাত বছর পরে পিতৃ পরিচয় পেল সুমার ছেলে দেব।

সন্তান ও স্বামীর মাঝে সুমা।  —নিজস্ব চিত্র।

সন্তান ও স্বামীর মাঝে সুমা। —নিজস্ব চিত্র।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

বিশ্বাসভঙ্গের যে কাহিনির শুরু দু’জনের প্রেমের মধ্যে দিয়ে, আদালতের নির্দেশে সেই কাহিনির যবনিকা পড়ল মালাবদল করে।

বুধবার পুরুলিয়া জেলা সংশোধনাগারে সাতপাকে বাঁধা পড়লেন সুমা বাউরি ও তাঁর প্রেমিক মনোজ বাউরি। দীর্ঘ লড়াইয়ের স্বীকৃতি পেলেন ওই যুবতী। একই সঙ্গে সাত বছর পরে পিতৃ পরিচয় পেল সুমার ছেলে দেব। এ দিন তাই সুমার কাকিমা নিয়তি বাউরি বলছিলেন, ‘‘হাসপাতালে ও নিজের সন্তানের জন্ম দিয়েছে। কোলে-পিঠে মানুষ করেছে। সন্তানের বাবার পরিচয় জানতে চাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে সুমাকে। কিন্তু ও ভেঙে পড়েনি। ছেলেকে কোলে নিয়েই বারবার আদালতে এসেছে। আজ সেই লড়াইয়েরই স্বীকৃতি মিলল।’’

পুরুলিয়া মফস্সল থানার ধানসুঁড়া গ্রামের বাসিন্দা সুমার সঙ্গে প্রেম হয়েছিল ওই গ্রামেরই যুবক মনোজের। কিন্তু, সুমা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরে মনোজ তাঁকে বিয়ে করতে বেঁকে বসায় আকাশ ভেঙে পড়ে মেয়েটির মাথায়। ইটভাটায় কাজ করে কোনও মতে দিন চালানো সুমার পরিবার তবু বাড়ির মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাহায্য করেছে আইনি লড়াই চালানোয়। অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয়ে হাজতবাসও হয়েছে মনোজের। এই মামলার সরকারি আইনজীবী গৌতম চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ধর্ষণ ও বিশ্বাসভঙ্গের মামলা রুজু করেছিল। তদন্ত শেষে পুলিশ চার্জশিট জমা দেয় আদালতে। মনোজ জামিনে ছাড়া পেয়ে গ্রামে ফিরে আসার পরে সুমা পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। একই গ্রামের বাসিন্দা হয়েও দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ ছিল না।

সুমার দাদা যাদব বাউরির কথায়, ‘‘ওদের সম্পর্কের কথা জানতাম না। বোন সন্তানসম্ভবা হওয়ার পরে মনোজ ওকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। আইনের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া কোনও পথ খোলা ছিল না।’’ গৌতমবাবু জানান, মামলার শুনানিতে তিনি আদালতকে বলেন, অভিযুক্তের সাজা হয়ে গেলে সুমার সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে যাবে। ওই আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক সুমা, মনোজ ও সুমার সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেন। সম্প্রতি সেই রিপোর্ট আদালতে পৌঁছয়। রিপোর্টে পরিষ্কার হয়ে যায়, মনোজই সুমার সন্তানের বাবা। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের শেষে অভিযুক্তকে ফের সংশোধনাগারে নেওয়া হয়। সুমার শিশু সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের বিষয়টি নিয়ে আমার করা আবেদনের ভিত্তিতে পুরুলিয়া আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক কানহাইয়া প্রসাদ শাহ নির্দেশ দেন, মনোজ সুমাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিলে তাঁর জামিনের আবেদন বিবেচনা করা হবে। এর পরে মনোজও রাজি হয় সুমাকে বিয়ে করতে। সেই নির্দেশ মেনেই এ দিন আদালতের মধ্যে দু’জনের বিয়ে হয়েছে।’’

পুরুলিয়া জেলা সংশোধনাগারের সুপারিন্টেন্ডেন্ট অসিতবরন নস্কর জানান, মনোজ বিচারাধীন বন্দি। বিচারকের নির্দেশে এ দিন সংশোধনাগারের মধ্যে বিধি মোতাবেক ও মাঙ্গলিক রীতি মেনে সুমা-মনোজের বিয়ে হয়েছে। এই লড়াইয়ে সুমাকে সঙ্গ দেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা অর্ধেন্দু মিশ্র বলেন, ‘‘ভাল লাগছে মেয়েটা এত দিনে সুবিচার পেল।’’ মনোজের বাবা আদালত বাউরি বলেন, ‘‘বৌমা হিসেবে মেনে নিয়েছি। আমাদের আর কোন বক্তব্য নেই।’’ পেল।’’ মনোজের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ বার আর আমাদের মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না।’’

বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে বেরিয়ে সুমা বলছিলেন, ‘‘এত দিন কত কথা শুনতে হয়েছে। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করতে গিয়েও শুনেছি, বাবার পরিচয় লাগবে। খুব খারাপ লেগেছে। অপেক্ষায় ছিলাম এই দিনটার জন্য। আমার ছেলে আজ পিতৃপরিচয় পেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Husband verdict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE