Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাতিদের নজর রাখতে গাছবাড়ি

দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে গাছবাড়ি। উত্তরবঙ্গের মতো এখানেও কি জঙ্গল লাগোয়া গাছবাড়িতে দু’দিন অবকাশের সুযোগ আছে? মোটেই তা নয়। হাতির হানা থেকে বাঁচতে মাঠের ফসল পাহারা দিতে চাষিরা নিজেরাই এই গাছবাড়ি তৈরি করেছেন।

কোথাও গাছের উপর, কোথাও আবার বাঁশের খুঁটির উপরে ছাউনি করে নজর রাখা হচ্ছে। বিষ্ণুপুরের বাগডোবা গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

কোথাও গাছের উপর, কোথাও আবার বাঁশের খুঁটির উপরে ছাউনি করে নজর রাখা হচ্ছে। বিষ্ণুপুরের বাগডোবা গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০২
Share: Save:

দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে গাছবাড়ি। উত্তরবঙ্গের মতো এখানেও কি জঙ্গল লাগোয়া গাছবাড়িতে দু’দিন অবকাশের সুযোগ আছে? মোটেই তা নয়। হাতির হানা থেকে বাঁচতে মাঠের ফসল পাহারা দিতে চাষিরা নিজেরাই এই গাছবাড়ি তৈরি করেছেন।

দলমার দামালেরা বছরের একটা বড় সময় এখন বাঁকুড়া জেলাতেই কাটাচ্ছে। তা ছাড়া এই জেলাতেই ঠাঁই নেওয়া রেসিডেন্ট হাতির সংখ্যাও কম নয়। রাতবিরেতে লোকালয়ে ঢুকে হাতিদের উৎপাতও চলছে। জমি পাহারা দিতে গিয়ে হাতিদের সামনে পড়ে অনেকেই প্রাণও খুইয়েছেন। তাই গত কয়েক বছর ধরে জঙ্গল লাগোয়া অনেক এলাকার চাষিরা আর জমির উপর রাতপাহারার জন্য কুঁড়েঘর তৈরি করছেন না। বরং গাছের উপর কিংবা শাল কাঠের খুঁটির উপর কুঁড়েঘর তুলে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।

মাঠে মাঠে আলু চাষ চলছে। কোথাও তোলা হচ্ছে। চাষিরা জানাচ্ছেন, হাতিরা মাঠে নেমে মাটি খুঁড়ে আলু বের করে খেতে পছন্দ করে। তাই মাঝে মধ্যেই আলু জমিতে হাতির পাল নেমে পড়ে। তাই বিষ্ণুপুর ও জয়পুর থানার চাঁচর, বাগডোবা, চুয়াশোল, বাসুদেবপুর, মড়ার, চিতরং, বনগেলিয়া, কাটুল, পচাডহরা প্রভৃতি গ্রামের মানুষ জমির ধারে বড় গাছে মাচা বেঁধে পাহারা দিতে শুরু করেছেন।

আমডহরা গ্রামের চাষি ইননাদ খান, আইজুল খান, বাগডোবা গ্রামের সালুক সোরেন, ভীমারডাঙা গ্রামের মঙ্গল মুর্মু বলেন, ‘‘কুয়াশায় যখন চারপাশ ঢাকা থাকে, সেই সময় হঠাৎ হাতির দল জমিতে নেমে পড়লে আগে থেকে ঠাহর করা যেত না। সামনে পড়ে মরতেও হয়েছে অনেক চাষিকে। তাই গাছে থাকা অনেক নিরাপদ।’’ তাঁরা জানান, উঁচু থেকে হাতির গতিবিধি বুঝে তাঁরা গ্রামে ফোন করে দিয়ে লোকজন ডেকে এনে টিন বাজিয়ে, পটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়িয়ে দিচ্ছেন।’’

তবে এই গাছবাড়িও নিরাপদ নয়। চাষিরাই জানাচ্ছেন, হাতিরা গাছে বা কাঠের খুঁটিতে ধাক্কা দিলে রক্ষা নেই। এমন দিনও গিয়েছে, দাঁতালেরা গাছবাড়ির নীচে রাতভর ঘোরাঘুরি করেছে। কিন্তু চাষির পেটে প্রবল চাপ পড়া সত্ত্বেও তিনি নামতে পারেননি। শেষে ফোন পেয়ে ভোরের দিকে বনকর্মীরা এসে হাতি তাড়িয়ে তাঁকে গাছবাড়ি থেকে নামিয়েছেন।

এ বছরে আলুর দাম কম থাকায় চাষিরা জমি বাঁচাতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন। কাটগুড়া গ্রামের চাষি সুনীল মুর্মু গাছের উপর মাচা বাঁধতে বাঁধতে বললেন, ‘‘আলু বাঁচাতে গেলে রাতে টং মাচায় থাকতেই হবে। না হলে হাতিতে সব সাবাড় করে দেবে। তখন সংসার সামলাবো কী করে?’’ জয়পুরের রেঞ্জ অফিসার মনোজ যশ বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের কাছ থেকে শিখে আমরাও অনেক জায়গায় শক্তপোক্ত নজর মিনার তৈরি করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE