Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বোমা-বারুদের স্মৃতি ভুলিয়ে স্কুলে নজির

অশান্তির ছায়া যেন শিক্ষাঙ্গনে কোনও মতেই না পড়ে, তার জন্য একরকমের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল সংশ্লিষ্ট সব স্তর। মিলেছে সাফল্যও। বহু দুঃস্থ ও মেধাবীরা এ বার ভাল ফল করেছে।

বাহিরী ব্রজসুন্দরী উচ্চবিদ্যালয়

বাহিরী ব্রজসুন্দরী উচ্চবিদ্যালয়

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ১২:৫০
Share: Save:

গত বছর তিনেক ধরে রাজনৈতিক গণ্ডগোল ও বোমাবাজির জেরে আকছার খবরের শিরোনামে এসেছে, বোলপুর থানার বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েত। প্রত্যন্ত এলাকার দুঃস্থ ও মেধাবী পড়ুয়াদের অন্যতম আকর্ষণের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাহিরী ব্রজসুন্দরী উচ্চবিদ্যালয় নিয়ে তাই, কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন চিন্তায় ছিলেন। অশান্তির ছায়া যেন শিক্ষাঙ্গনে কোনও মতেই না পড়ে, তার জন্য একরকমের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল সংশ্লিষ্ট সব স্তর। মিলেছে সাফল্যও। বহু দুঃস্থ ও মেধাবীরা এ বার ভাল ফল করেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপকুমার মণ্ডল বলেন, “সব মহলের উদ্যোগে বিদ্যালয় ভাল ফল করেছে। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে সার্বিক ফলাফল ৯৩ শতাংশ হয়েছে। সংখ্যালঘু, তপসিলি অধ্যুষিত এলাকার দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছে।”

উল্লেখ্য, গত বছর দু’য়েক ধরে এলাকায় অশান্তি ছিল। এমনকী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময়েও বোমাবাজি হয়েছে এলাকায়। আর তার ফল স্বাভাবিক ভাবেই পড়েছিল ফলাফলে। কোনও বছর মেরেকেটে ৭০ শতাংশ তো কোনও বছর ৮৮ শতাংশ ছুঁইছুঁই। তবে এ বার ততটা অশান্তি না হলেও, চাপা উত্তেজনা ছিল। আতঙ্কিত ছিলেন অভিভাবক, পরীক্ষার্থী থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ বার মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে বিদ্যালয়ের ফলাফল ৯৩ শতাংশ। এক অভিভাবক জানান, গত দু’বছর পরীক্ষার সময়ে বিদ্যালয়ের অনুরোধে পরীক্ষার্থীদের এসকর্ট করে কেন্দ্রে পোঁছে দেওয়া এবং বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থাও করেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। ফলাফল সেই অর্থে ভাল হয়নি। এ বার? বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, অভিভাবক থেকে পুলিশ প্রশাসন। সকলের মুখে হাসি ফুটেছে।

জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের থেকে আমাদের এটা সম্মান রক্ষার প্রশ্ন ছিল। শহর থেকে দূরে, প্রত্যন্ত এলাকার এই বিদ্যালয়ে ৯৩ শতাংশ ফলাফল হয়েছে। অভাবনীয়।’’

যাঁদের জন্য বিদ্যালয়ের এত সুনাম, সেই অভাবী, দুঃস্থ পড়ুয়ারা কি বলছেন?

নানুর থানার জলুন্দী পঞ্চায়েতের নওদা গড়াই পাড়ার বাসিন্দা গোপীনাথ গড়াই বাহিরী স্কুলে মাধ্যমিকে সেরা হয়েছে। আবার তার দিদি হৈময়ন্তী গড়াই উচ্চমাধ্যমিকে একই বিদ্যালয়ে সেরা হয়েছে। বাবা তারক কুমার গড়াই শারীরিক ভাবে ততটা কর্মক্ষম নন। মা শিখারানি গড়াই বাড়ির কাজ করে দুই ছেলে মেয়েকে কোনও মতে খাইয়ে দাইয়ে স্কুলে পাঠান। গড়াই দম্পতি বলেন, ‘‘ছেলে মাধ্যমিকে স্কুলে প্রথম হয়েছে, প্রাপ্ত নম্বর (৬৪৭)। মেয়েও কম যায় না। উচ্চ মাধ্যমিকে সেও স্কুলে প্রথম, তার প্রাপ্ত নম্বর (৪২০)। অভাব অনটনের সংসার। ৪০ মিনিট বাসে আসাযাওয়া করে, কোনও মতে পড়াশোনা করছে। হয়তো, টিউশন করলে আরও নম্বর বাড়ত।’’

ওই একই বিদ্যালয়ের দুঃস্থ, সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়ে নাসিমা খাতুন এ বার মাধ্যমিকে ৬৩৪ নম্বর পেয়েছে। সনসত ঈশান পাড়ার বাসিন্দা নাসিমার বাবা শেখ নুরুল হকারি করেন। মা আসিয়া বেগমকে বাড়ির কাজে সহায়তা করার পাশাপাশি নিজের পড়া এবং ভাই মতিউর রহমানের পড়া দেখানোর দায়িত্ব ছিল নাসিমার ওপর। অভাব অনটনের সংসার।

নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সাফল্য পেয়েছে নাসিমা। দুঃস্থ মেধাবী এই ছাত্রছাত্রীদের জন্য এলাকায় নজির গড়েছে বাহিরী ব্রজসুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madhyamik Bahiri Brajasundari High School Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE