অদূর ভবিষ্যতে কী আরও আকর্ষণীয় হতে চলেছে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধার নীলনির্জন?
সম্প্রতি উন্নয়ন পর্ষদগুলির প্রতি নগরোন্নয়ন দফতরের একটি বার্তার পরে সেই সম্ভাবনাই উজ্জ্বল হয়েছে। কী হবে, কতটা হবে তার যাদুদণ্ড অবশ্য ‘বক্রেশ্বর ডেভলপমেন্ট অথরিটি’র হাতে।
বিষয়টি আদতে কী?
উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সে দফতরের সচিব ওঙ্কারনাথ মিনা বলেন, ‘‘পর্ষদ এলাকার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করুক। ঢেলে সাজাক এলাকা। অনুমোদন পেতে কিংবা প্রকল্প রূপায়নের জন্য বরাদ্দ টাকা পেতে কোনও সমস্যা হবে না।’’ একই সঙ্গে জানিয়েছিলেন, ঠিক কী কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা একটি অর্থবর্ষকে ত্রৈমাসিকে ভাগ করে কাজের ক্যালেন্ডার তৈরি করে পাঠাতে।
এরপরই ক্যালেন্ডার তৈরি করতে নড়েচড়ে বসে বিভিন্ন উন্নয়ন পর্ষদ। সেই তালিকায় পড়ে বক্রেশ্বর ডেভেলপমেন্ট অথরিটিও। বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নগরোন্নয়ন দফতরের বার্তা দেওয়ার পরেই আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা পাঠিয়েছি। সেই তালিকায় সবচেয়ে বড় প্রস্তাব হল বক্রেশ্বর নীলনির্জন জলাধারকে ঘিরে একটি পার্ক ও পর্যটকদের আকর্ষণের নানাবিধ উপাদানে সাজিয়ে তোলা।’’ শুধু নীল নির্জেনের জন্যেই প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১০-১২ কোটি টাকা। সামনের তিন মাসের জন্য মোট ২৫টি পরিকল্পনা জমা পড়ছে।
বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ গঠিত হচ্ছে জানিয়ে ২০১৬ সালের জুন মাসে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে নগরোন্নয়ন দফতর। তারপরই দুবরাজপুর ব্লক ও পুরসভা এলাকা মিলিয়ে মোট ৪৫টি মৌজা নিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ’। পর্ষদের আওতায় রয়েছে দুবরাজপুর পুর এলাকা সহ মোট ৫৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। পর্যটনকে কেন্দ্রে করে এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধনই পর্ষদের মূল লক্ষ্য।
বক্রেশ্বর মূলত ধর্মীয় তীর্থক্ষেত্র হলেও, মূল আকর্ষণ উষ্ণ প্রস্রবণ। পরিকল্পিত ভাবে পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়ে পর্যটকদের কাছে জেলার অন্যতম সেরা পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলাই লক্ষ্য। সেই পরিকল্পনা মাফিক নানা কর্মকাণ্ড চলছে। রাস্তাঘাট, গোটা বক্রেশ্বর ধামজুড়ে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা, বক্রেশ্বর মহাশ্মশানের যাওয়ার পথ, বাসস্ট্যান্ড উন্নত করা, উষ্ণপ্রস্রবণ কুণ্ড থেকে নিকাশি নালা সংস্কারের মতো প্রাথমিক কাজগুলি শেষের পথে। বর্তমানে উন্নয়ন পর্ষদের নিজস্ব ভবন তৈরি হচ্ছে ১ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে। আরও নানা খাতে ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার কাজ চলছে। এরপরই দ্বিতীয় ধাপে বক্রেশ্বর এলাকার তিনটি পৃথক পুকুরকে একত্রিত করে সৌন্দর্যায়ন করা, বোটিংয়ের ব্যবস্থা করার কথা।
কিন্তু, বোর্ড সদস্যরা উপলব্ধি করেন শুধু বক্রেশ্বর তীর্থক্ষেত্রে বা আশপাশের অংশ নয়। উন্নয়ন প্রয়োজন আরও বিস্তারিত ভাবে। ‘‘বক্রেশ্বর নীলনির্জনকে ঘিরে ভাবনা সেই কারণেই’’— বলছেন এক পর্যদ সদস্য। তাঁর কথায়, একটি পর্যটনস্থল তখনই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
যদি সেখানে বিনোদনের ভরপুর উপাদান মজুত থাকে। সঙ্গে সেখানে যাতায়াতের ও থাকার সুব্যবস্থা থাকে। দুবরাজপুর পুর এলাকার পাহারেশ্বর এবং বিনোদন পার্ক রয়েছে। রয়েছে আলমবাবার মাজার এবং পরিযায়ী পাখিদের নিশ্চিত আনাগানার ক্ষেত্রে শান্ত, নির্জন জলাশয় নীলনির্জন। যে পর্যটক বক্রেশ্বর আসবেন, তিনি যেন দু’দিনের সময় কাটানোর রসদ এখানে পান, পরিকল্পনার পিছনে এমনও কাজ করেছে। দুবরাজপুরের পাহারেশ্বরে একটি অতিথি নিবাস গড়ে তোলার পরিকল্পনাও থাকবে ওয়ার্ক ক্যালেন্ডারে।
অশোকবাবু বলছেন, ‘‘আরও একটি কারণ রয়েছে নীলনির্জনকে বাছার পিছনে। সেটা হল, পর্যটকদের যাতায়াত আরও মসৃন করতে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে আলমবাবার মাজারের পাস দিয়ে একটি রাস্তাকে দুবরাজপুর শহরকে এড়িয়ে পণ্ডিতপুরের কাছে এনে তোলার জন্য ইতিমধ্যেই ২ কোটি ১৩ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা অমুমোদিত হয়েছে। ওই রাস্তা ধরে নাগালেই থাকছে নীলনির্জন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy