ভিড়ে-ঠাসা: পুরুলিয়ার জয়পুরের জনসভা। ছবি: সুজিত মাহাতো
কুড়মিদের তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্ত করার দাবিকে নৈতিক ভাবে সমর্থন করছে বিজেপি। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ওই সব দাবি নিয়ে আদিবাসী কুড়মি সমাজ জঙ্গলমহলের তিন জেলায় ‘ডহর ছেঁকা’ (পথ অবরোধ) কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। তার এক সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় এসে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বললেন, ‘‘কুড়মিদের দাবিদাওয়ার প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে।’’ কিন্তু আন্দোলনের পথকে তাঁরা সমর্থন করছেন কি? তা অবশ্য খোলসা করেননি তিনি।
বস্তুত, তফসিলি জাতিভুক্ত করার সঙ্গেই কুড়মালি ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং কোড-সহ সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে কুড়মি সমাজ। এই সব দাবিতে ৬ ফেব্রুয়ারি জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জেলায় সড়ক ও রেল অবরোধ করেছিল আদিবাসী কুড়মি সমাজ। তার জেরে দিনভর চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন বাসিন্দারা। ফের একই দাবিতে ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্যের চার জেলায় ওই সংগঠন পথে নামার কর্মসূচি নেওয়ায় আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে প্রশাসন ও জনতার মধ্যে।
যদিও কুড়মিদের ওই সব দাবিদাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসা পূর্বাঞ্চল কুড়মি সমাজ আন্দোলনের ওই পথ সমর্থন করে না। সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি প্রবোধ মাহাতো জানান, একই দাবিতে আগামী ২৩-২৪ সেপ্টেম্বর তাঁরা জেলা সম্মেলন ডেকেছেন। প্রকাশ্য সমাবেশও রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দাবিগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠিয়েছেন বলেই জানি। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী ‘কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদ’ গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। ‘মানভূম কালচারাল অ্যাকাডেমি’ও গড়ারও কাজ শুরু হয়েছে। তা হলে আর পথে নামা কেন?’’
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পুরুলিয়া মফস্সল থানার ডুড়কুতে তিন দিনের সম্মেলনের পর ওই দাবিগুলিতে সরব হয় পূর্বাঞ্চল কুড়মি সমাজ। কিন্তু মতানৈক্যের জেরে সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ নেতা অজিত মাহাতো পরে আদিবাসী কুড়মি সমাজ গঠন করে আন্দোলনের পথে নামেন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এপ্রিলে আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কুড়মিদের উন্নয়নে কয়েকটি ঘোষণাও করেছেন। কিন্তু বসে থাকলে হবে না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতেই হবে। তাই ২০ সেপ্টেম্বর ডহর ছেঁকা কর্মসূচি নিয়েছি। অবরোধ হবে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার কয়েকটি জায়গাতেও।’’
তাঁদের দাবিগুলির সঙ্গে সহমত বিজেপিও। জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে বিরাট কুড়মি জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে এ বার বিজেপিও রাজনৈতিক ভাবে জমি পেতে এই আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছে বলেই রাজনৈতিক মহলের মত। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি জানান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে কুড়মি জনগোষ্ঠীর অনেক মানুষজন রয়েছেন। তিনি নিজেও এই এলাকার ছেলে। তাঁর কথায়, ‘‘আদিবাসী কুড়মি সমাজের প্রতিনিধিরা তাঁদের দাবি নিয়ে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই দাবি নিয়ে সরকারি পদক্ষেপ যে ভাবে হওয়া দরকার সে ভাবেই হবে। রাজ্য সরকার কী অবস্থান নেবে, সেটা রাজ্য সরকারের ব্যাপার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy