Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সাত্তোরে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ বিজেপি-র

তৃণমূল কার্যালয়ে মিলল বোমা

রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে শনিবারও তেতে রইল পাড়ুই থানা এলাকা। বিজেপি পুলিশের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করে, এলাকায় সন্ত্রাস এবং বোমাবাজি করার জন্য সাত্তোরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে শাসক দল বোমা বারুদ মজুদ করে রেখেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব পাড়ুই থানার পুলিশকে ডেকে ওই বোমা বারুদ মজুতের খবর দেয়।

পার্টি অফিসের মেঝেতে বোমা ভর্তি ড্রাম।

পার্টি অফিসের মেঝেতে বোমা ভর্তি ড্রাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৮
Share: Save:

রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে শনিবারও তেতে রইল পাড়ুই থানা এলাকা।

বিজেপি পুলিশের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করে, এলাকায় সন্ত্রাস এবং বোমাবাজি করার জন্য সাত্তোরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে শাসক দল বোমা বারুদ মজুদ করে রেখেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব পাড়ুই থানার পুলিশকে ডেকে ওই বোমা বারুদ মজুতের খবর দেয়। দীর্ঘক্ষণ পুলিশ ওই বোমা উদ্ধারে ঢুকছে না দেখে, স্থানীয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা ক্ষোভ উগরে দেন দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীদের উপর। প্রতিবাদে বিজেপির বিক্ষোভ এবং বোলপুর-সিউড়ি রাস্তায় সাত্তোর বাস স্টপের কাছে টানা পথ অবরোধের হুমকিতে, শেষ পর্যন্ত দুপুরের দিকে পুলিশ শাসক দলের কার্যালয়ের পাশে যায়। পুলিশের উপস্থিতিতে কার্যালয়ে ঢুকে, দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীদের একাধিক বোমা ভর্তি প্লাস্টিকের ড্রাম দেখায় বিজেপি।

এ দিল সাত্তোর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ সব দেখেও দাঁড়িয়ে থাকে। বিকেল পর্যন্ত বোমা উদ্ধারে তারা কোনও উদ্যোগ দেখায়নি। পাড়ুই থানার ওসি নীলোৎপল মিশ্র ও মুরারই থানার ওসি পার্থ সারথি মণ্ডল র‍্যাফ এবং কমব্যাট বাহিনী দিয়ে গোটা এলাকাকে ঘিরে রেখেছেন। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশকুমার এ দিন ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও কোনও উত্তর দেননি। শাসক দলের পাড়ুই থানা কমিটির সভাপতি মুস্তাক হোসেনের দাবি, ‘‘শুক্রবার সন্ধের পর থেকে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উপর আক্রমণ ও গাড়িতে বিজেপির হামলার পর, এলাকায় তৃণমূলের কেউ ছিল না। তার সুযোগে বিজেপির সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে বোমা-বারুদ রেখে দিয়েছে। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এটা করানো হয়েছে।’’

এদিকে এ দিনই বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের পলাশীতে একাধিক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে লুঠপাট, ভাঙচুর এবং বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত সেই তৃণমূল। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ আসার আগে গোলাপবাগে ও কুস্টিগিরিতে আটকে রেখে এলাকায় ঘণ্টা দুয়েক বোমাবাজি এবং লুটপাট চালিয়েছে তৃণমূল এবং তাদের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। অন্যদিকে আবার মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের গোলাপবাগে একাধিক বিজেপি কর্মী-সমর্থক এবং তৃণমূলের এক বাড়িতে বোমাবাজি এবং লুঠপাটের ঘটনা ঘটেছে। মুস্তাকের পাল্টা দাবি, ‘‘মঙ্গলডিহি অঞ্চলের তৃণমূলের নেতার বাড়িতে ভাঙচুর করেছে বিজেপি। পলাশিতেও তৃণমূল নয়, এলাকার মানুষেরই ক্ষোভের মুখে পড়েছে বিজেপি।’’


হামলায় উল্টে ফেলে দেওয়া হয়েছে ভাতের হাড়িও। পাড়ুইয়ের পলাশি গ্রামে।

শনিবার রাজনগরের তাঁতিপাড়ায় একটি দলীয় কর্যালয় উদ্বোধনের জন্য এসে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ সরকার। কোনও ঘটনারই কোনও বিহিত হচ্ছে না। মারধর, সংঘর্ষ, সেটা তৃণমূলের অভ্যন্তরে বিরোধ। তৃণমূল-বিজেপি, বা তৃণমূল-বামফন্ট্রের মধ্যেও একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে কোনও টারই কিনার হয়নি। এমনকী তৃণমূলের যে নেতা পুলিশকে বোমা মারার কথা বলছেন তাঁরও শাস্তি হচ্ছে না। নৈরাজ্য চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দিন চারেক ধরেই পাড়ুই থানা এলাকার গোরাপাড়া, পলাশি, তালিবপুর, কচিয়ারা গ্রাম-সহ এলাকার একাধিক গ্রামে শাসকদল তৃণমূল এবং বিরোধী বিজেপি-র মধ্যে বেশ কয়েক বার বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাতেও গোলাপবাগ এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি হয়। খবর পেয়েই পুলিশ এলাকায় গিয়ে অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। কিন্তু শান্তি ফেরার নয়। শুক্রবার সকাল থেকেই সিউড়ি ২ ব্লকের অন্তর্গত পাড়ুই থানার বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে বোমাবাজি-ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। খবর ছড়াতেই লাগোয়া বাতিকার এবং মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামেও উত্তেজনা ছড়ায়। এলাকায় বিশাল পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একই গোলমালের খবর মিলেছে শনিবারও।

ঘটনা হল, শুক্রবার গভীর রাতে পাড়ুই থানার মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের গোলাপবাগ গ্রামের বিজেপি কর্মী শেখ রবি, শেখ রাখাল এবং পাশের গ্রাম অনন্তপুরের শেখ সিদ্দিকের বাড়িতে বাড়িতে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। অভিযোগ সেই স্থানীয় তৃণমূল এবং আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। শেখ সিদ্দিকি বলেন, ‘‘বিজেপি করি, তাই বেছে বেছে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বোমাবাজি এবং লুঠপাট করেছে তৃণমূল। বাড়ি ঘর, তছনছ করেছে ওরা। ঘটনার খবর চাউর হতেই, আশেপাশের বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাতে পিছু হটে তৃণমূল।’’

অঞ্চল সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা তৃণমূল নেতা শেখ বদ্রি জামাল এ দিন বলেন, “রাত সাড়ে বারোটা একটা নাগাদ বিজেপি ও তাদের দুষ্কৃতীরা বাড়িতে বোমা ছুঁড়তে ছুঁড়তে ঢোকে। লুটপাট বোমাবাজি করেছে। আমাকে খুন করার মতলবে ওরা এসেছিল। বিষয়টি পাড়ুই থানা কমিটির চেয়ারম্যান মুস্তাক হুসেনকে জানিয়েছি।’’ বিজেপির পাড়ুই থানান কমিটির সভাপতি শেখ সামাদ বলেন, ‘‘এলাকায় অশান্তি-উত্তেজনা ছড়াচ্ছে তৃণমূল। পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।’’

শনিবার ছবি দু’টি তুলেছেন বিশ্বিজিৎ রায়চৌধুরী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE