মাঠে ব্রকোলির পরিচর্যা করছেন চাষি। নিজস্ব চিত্র।
ব্রকোলি। সবুজ ফুলকপি বলেও চেনেন অনেকে। ক্যানসার প্রতিরোধী, সহজপাচ্য ও প্রচুর খাদ্যগুন সম্পন্ন শীতকালীন এই সব্জির কদর যথেষ্টই। কিন্তু এখনও জেলার অধিকাংশ বাজারেই অমিল ব্রকোলি। ব্যতিক্রম সিউড়ি জেলা সদরের বাজার। সৌজন্যে রাজনগরের ব্লকের বেশ কয়েকজন চাষি। তাঁদের চাষকারা ব্রকোলি-ই নিয়মিত সিউড়ি বাজারে আসছে বছর তিনেক ধরে। যে ভাবে ব্রকোলি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন চাষিরা তাতে জেলার একটা বড় অংশের চাহিদা রাজনগরের চাষিরাই মেটাবেন বলে মনে করছেন কৃষি বিষেশজ্ঞরা।
শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। মূলত সেচহীন একফসলি জমির মালিকরা জানতেনই না সর্ষে বা আলুর বাইরে অন্য কিছু চাষ এভাবে করা যায়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধিতি মেনে ও প্রযুক্তি সাহায্যে নিলে কিছু ব্যতিক্রমী ফসল চাষ যে লাভের মুখ দেখাতে পারে এই বিষয়ে অনুঘটকের কাজ করছে লোক কল্যাণ পরিষদ। কেন্দ্রীয় জীবিকা মিশনের অন্তর্গত ইন্ট্রিগ্রেটেড ওয়াটার সেড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম বা আইডাব্লুএমপি ২০১২ সালে রাজনগর ব্লকের মোট পাঁচটি পঞ্চায়েতের মধ্যে তিনটিরও বেশি পঞ্চায়েতের দায়িত্ব পায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা লোককল্যাণ পরিষদ। ওই সংস্থাই চাষিদের মানসিকতা বদল ঘটিয়েছে বলছেন স্থানীয়রাই। পুকুর সংস্কার বা নতুন করে পুকুর কাটিয়ে দেওয়া, বিন্দু বা ফোঁটা সেচের ব্যবহার, কোন মাটিতে কোন সময় কোন ফসল লাভাজনক— সেটা চাষিদের বোঝানো। বীজ থেকে পরামর্শ সবসময় পাশে সংস্থা। কখনও জেলাকৃষি দফতর কখনও বা রথীন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে সঙ্গে পেয়েছে পরিষদ। মোড় ঘুরে গিয়েছে তাতেই।
আইডাব্লুএমপি কাজে রাজনগরের দায়িত্বে থাকা সত্যনারয়ণ সর্দার বলছেন, ‘‘প্রথমে একটি বেসলাইন সমীক্ষায় দেখা হয়েছে কতজন কৃষক রয়েছেন যাঁদের জমি রয়েছে অথচ জমি পড়ে থাকে। আমরা ওই কৃষকদের দিয়ে সেটাই কাজে লাগিয়ে ওঁদের আয় বাড়ানোর রাস্তা দেখানোর চেষ্টা করেছি। ব্রকোলি চাষ সেগুলির অন্যতম।’’
রাজনগরের লাউজোড় গ্রামে বছর তিনেক ধরে ব্রকোলি চাষ করছেন মহাদেব মাজি, ষষ্ঠীপদ মাজিরা। এ বারও ১০০০ ব্রকোলি লাগিয়েছেন। ফসল ধরতে শুরু করেছে। পাতাডাঙার দাতাকর্ণ মণ্ডল, সন্তোষ মণ্ডল, সুবোধ মণ্ডল বা তাঁতিপাড়ার প্রদীপ রায়রা সাফল্যের সাথে ব্রকোলি চাষ করেছেন। সুবোধবাবু তো রাজনগর কৃষি মেলায় প্রদর্শনিতে ব্রকোলি দিয়ে প্রথম স্থান পেয়েছেন। সকলেই জানাচ্ছেন সত্যিই লাভজনক চাষ।
এ বছরই ব্লকের ৪৬জন চাষি অন্তত বিশ বিঘা জমিতে ব্রকোলি লাগিয়েছেন। ফসল বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন। ব্লকের মধ্যেও চাহিদা বাড়ছে।
চাষিদের হিসাব, জমি তৈরি থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত এক বিঘা জমিতে হাজার বিশেক টাকা খরচ হয়। প্রতি কাঠাতে তিনশো করে প্রায় বিঘাতে হাজার ছয়েক ব্রকোলি লাগানো সম্ভব। যে প্রজাতির চাষ হচ্ছে, তাতে একবার ফসল উঠলেও তারপরও একটি গাছ থেকে অন্তত তিনটি ছোট ব্রকোলি পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমটি কমপক্ষে ১৫ টাকা পরেরগুলিতে আরও ১৫টাকা অর্থাৎ প্রতিটি গাছে থেকে গড়ে ৩০টাকা করে প্রাপ্তি একজন চাষির। ফলের লাভের অঙ্কটা বেশ ভাল। তবে সকলেই ওই টাকা পাচ্ছেন না।
কারণ, সকলের পক্ষে সিউড়ি বা দুবরাজপুরের মতো বড় বাজারগুলিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় বাজারে বিক্রি করলে লাভ কম। ব্রকোলির সঙ্গে পাকচই নামে একটি শাকের চাষও রাজনগররের চাষিরা করছেন। সুস্বাদু সেই শাকের চাহিদাও বাড়ছে স্থানীয় বাজারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy