Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
গুরুতর জখম অতিরিক্ত জেলাশাসক

বাঁকুড়ায় গাড়ি ও বাসের ধাক্কা, মৃত ৪

রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কে, তালড্যাংরা থানার শিবডাঙা মোড় সংলগ্ন চোদ্দো মাইল এলাকায়।

চুরমার: অতিরিক্ত জেলাশাসক এই গাড়িতেই ছিলেন। নিজস্ব চিত্র

চুরমার: অতিরিক্ত জেলাশাসক এই গাড়িতেই ছিলেন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তালড্যাংরা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৭ ০২:৪৮
Share: Save:

বন দফতরের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসকের গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগল বাসের। ঘটনায় দুই মহিলা-সহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দু’জন বাসযাত্রী, অন্য দু’জন অতিরিক্ত জেলাশাসকের নিরাপত্তারক্ষী ও গাড়ির চালক। গুরুতর জখম অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) নবকুমার বর্মনকে বাঁকুড়া মেডিক্যালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করানো হয়েছে।

রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কে, তালড্যাংরা থানার শিবডাঙা মোড় সংলগ্ন চোদ্দো মাইল এলাকায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এ দিন বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেত বন বিভাগের বন মহোৎসবে যোগ দিতে পাঁচমুড়ায় গিয়েছিলেন নবকুমারবাবু। অনুষ্ঠান শেষে তালড্যাংরা হয়ে বাঁকুড়া ফিরছিলেন। সেই সময় বিষ্ণুপুর থেকে একটি বাস শিবডাঙা মোড় পার হয়ে তালড্যাংরার দিকে যাচ্ছিল। পথে নবকুমারবাবুর গাড়িটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় ওই বাসের।

নবকুমারবাবু ও তাঁর দেহরক্ষী কার্তিকচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় (৩৭) গাড়ির মাঝের সিটে বসেছিলেন। দুর্ঘটনার জেরে তাঁদের গাড়িটির বনেট ও ছাদ দুমড়ে মুচড়ে যায়। সামনের দরজা ভেঙে খুলে পড়ে। গাড়ির সামনের চাকার টায়ার অর্ধেক খুলে বেরিয়ে পড়ে। টাল সামলাতে না পেরে যাত্রিবাহী বাসটিও উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অতিরিক্ত জেলাশাসকের গাড়ির চালক উত্তম লোহার (২৮) এবং দুই মহিলা বাস যাত্রীর। মৃত যাত্রীদের মধ্যে এক জনের নাম পুলিশ জানতে পেরেছে। সৌমনি হাঁসদা (২৮) নামে ওই মহিলার বাড়ি ইঁদপুরের মহিষডোগড়া গ্রামে।

ঘটনাচক্রে এ দিন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরাও পাঁচমুড়ায় বন দফতরের ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনা ঘটার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই রাস্তা দিয়ে বাঁকুড়া ফিরছিলেন তিনি। পুলিশ সুপার বলেন, “দুর্ঘটনা ঘটার কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি ওই জায়গা পেরোচ্ছিলাম। দ্রুত অতিরিক্ত জেলাশাসক ও তাঁর দেহরক্ষীকে আমার গাড়িতে তুলে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাই।’’ পুলিশ সুপারের গাড়ির পিছনের গাড়িতে ছিলেন তালড্যাংরা থানার ওসি গৌতম কুমার শিকদার। তিনিও সঙ্গে সঙ্গে থানায় ফোন করে ফোর্স ও গাড়ি ডাকেন। পুলিশ জখম ২৩ জন বাসযাত্রীকে উদ্ধার করে তালড্যাংরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে ক্রেন ডাকিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি ও বাসটিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

চোদ্দো মাইল এলাকার বাসিন্দা অতনু কুণ্ডুর কথায়, “দুর্ঘটনার বিকট শব্দ শোনা গিয়েছিল অনেক দূর পর্যন্ত।’’ বাঁকুড়া মেডিক্যালে আনার পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কার্তিক। বাসটির খালাসি নিতাই মাঝির দাবি, অতিরিক্ত জেলাশাসকের গাড়িটি খুব দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল। গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরেই গাড়িটি চলে আসে বাসের মুখোমুখি।

নিতাই বলেন, ‘‘বাস চালক সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষে। কেবিনে থাকা সৌমনি-সহ দুই মহিলা যাত্রী ঝাঁকুনিতে উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে বাসের সামনে গিয়ে পড়েন।’’

কী করে দুর্ঘটনা ঘটল, তা জেলা প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে। খবর পেয়েই হাসপাতালে চলে আসেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্তারা। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “মাথা, বুক-সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চোট পেয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। তবে তাঁর অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। তিন জন চিকিৎসকের বোর্ড গড়ে চিকিৎসা চলছে।’’

সভাধিপতি বলেন, “অনভিপ্রেত এই ঘটনায় আমরা শোকস্তব্ধ। নবকুমারবাবুর শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব সময় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE