গায়েব: রামপুরহাট পুরসভার পুরপ্রধানের নিজের ওয়ার্ডের এই বাবুপুকুরও ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ক’দিন আগেও এই পুকুরে স্নান করা, বাসন মাজা হত। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
শুধু রামপুরহাট শহরেই ১৫টি পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠল। পুর কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই এমনটা হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধী কাউন্সিলরদের। একধাপ এগিয়ে কেউ কেউ পুকুর ভরাটে পুর কর্তৃপক্ষের মদতের মতো গুরুতর অভিযোগও এনেছেন। পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি অবশ্য বলছেন, ‘‘পুর এলাকায় কোথাও কোনও পুকুর ভরাটের অভিযোগ নেই।’’
বাস্তব অবশ্য অন্য কথা বলছে। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল পুকুর ভরাটের জন্য মাটি ফেলা হয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শিবসাগর পুকুরপাড়, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের গুবগড়িয়া পুকুর, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কলাবাগান পুকুর অনেককটাই ভরাট করা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় তৈরি হয়েছে বাড়িও। জলাজমি ও পুকুর ভরাট থেকে দলীয় কর্মীদের দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন কাজ করলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানিয়েছিলে তৃণমূল নেত্রী। তাতেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ কাউন্সিলরদের।
বিজেপি বিষয়টিকে ‘নাগরিক সমস্যা’ হিসেবেই তুলে ধরতে চাইছে। তাঁদের বক্তব্য, ঘিঞ্জি এলাকায় সব পুকুর ভরাট হয়ে গেলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হবে। এক বাসিন্দার কথায়, “এলাকায় বড় আগুন লাগলে দমকলের কিছুই করার থাকবে না! পুকুর ভরাট হলে জল মিলবে না!”
পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কংগ্রেসের জামালউদ্দিন শেখের দাবি, ‘‘এই ওয়ার্ডের বেশ কয়েক’টি পুকুর ভরাট হয়েছে। একাধিক অভিযোগ জমা পড়লেও পুরসভা ব্যবস্থা নেয়নি।’’ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর শুভাশিস চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘খোদ পুরপ্রধানের ওয়ার্ডে বাবুপুকুরের একাংশ প্রায় ভরাট হয়ে গিয়েছে। অথচ ওই এলাকায় পুকুরটি এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসা।’’ ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুপুকুর এলাকার উপর নির্ভরশীল স্থানীয় লেটপাড়ার বাসিন্দারা জানান, এই পুকুরটি তাঁদের একমাত্র পুকুর। এলাকার বাসিন্দারা এই পুকুরের জলেই তাঁদের গৃহস্থালি কাজ করেন। সেই পুকুরের একাংশ মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়েছে।
কী ভাবে গায়েব হচ্ছে পুকুর? বিরোধীদের একাংশের দাবি, ভূমি সংস্কার দফতরের এক শ্রেণির কর্তাদের যোগসাজশে জমির ‘ভুয়ো পরচা’ তৈরি করে ওই সব পুকুর বোজানো হয়েছে। এ নিয়ে রামপুরহাট মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওয়ার্ড ভিত্তিক পুকুর ভরাটের অভিযোগ নয়, মৌজা ভিত্তিক অভিযোগ পেলে তদন্ত করব আমরা।’’ কিছু দিন আগে একটি পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেয়ে তাঁরা ব্যবস্থা নিয়েছেন বলেও দাবি করেন। কিন্তু, মৌজাভিত্তিক অভিযোগ জানাতে হবে কেন? কেন পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেলে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর নিজেরা উদ্যোগী হয়ে খোঁজ শুরু করবে না? দফতরের কর্তাদের থেকে সে উত্তর মেলেনি।
পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে পুকুর সংস্কার নিয়েও। বিরোধী কাউন্সিলরদের অভিযোগ, গাঁধী পার্কের পুকুরের পাঁক তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে পুরসভা। কেন শুধু গাঁধী পার্কের পুকুরের দিকে পুরসভার নজর? পুরপ্রধানের দাবি, ‘‘পুজোর আগেই শহরের অন্য পুকুরগুলিও সংস্কার করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy