Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মাটি ফুঁড়ে আগুন বেরোল শান্তিনিকেতনে!

উপরের আলগা মাটি সরাতেই বের হয়ে পড়ছে কালো রঙের টুকরো! কোথাও কোথাও লাল কাঁকুড়ে মাটির উপরেই কালো টুকরো ছড়িয়ে! আর সেই কালো টুকরোকে ঘিরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শান্তিনিকেতনের মোলডাঙা এলাকায়।

মোলডাঙায় এমনই নমুনা সংগ্রহ করেছে বিশেষজ্ঞরা।  — নিজস্ব চিত্র।

মোলডাঙায় এমনই নমুনা সংগ্রহ করেছে বিশেষজ্ঞরা। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৬:৪০
Share: Save:

উপরের আলগা মাটি সরাতেই বের হয়ে পড়ছে কালো রঙের টুকরো! কোথাও কোথাও লাল কাঁকুড়ে মাটির উপরেই কালো টুকরো ছড়িয়ে! আর সেই কালো টুকরোকে ঘিরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শান্তিনিকেতনের মোলডাঙা এলাকায়।

একসময় রটতে থাকে, ওই এলাকায় আগুনের মতো তাপ রয়েছে। যার জেরে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত কার্যত হিমশিম খেতে হয় পুলিশ, বন দফতর এবং ভূতত্ত্ববিদদের। ইতিমধ্যেই ভিড় সরিয়ে ওই এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে সংশ্লিষ্ট দফতর। বিশ্বভারতীর ভূগোল বিভাগও নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে।

শ্রীনিকেতন লাগোয়া মোলডাঙা এলাকায় শনিবার দিনভর কার্যত স্থানীয়দের বাসিন্দাদের দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মোলডাঙা লাগোয়া বন দফতরের খোয়াই এলাকা থেকে শুক্রবারই মাটির নীচে থেকে আগুন বের হওয়ার খবর চাউর হয়। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ আজাদ, শেখ আমির, সাবিনা বিবি, আজমিরা বিবি, চিন্তা বাউড়িরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতের দিকে মোলডাঙা জঙ্গল এলাকায় কেউ কেউ আগুন খসে পড়ার বিষয়েও জানতে পারেন। আবার কেউ কেউ আগুনের নীল শিখা উপরে উঠতে দেখেন। শুক্রবার দুপুরের দিকে এলাকা গিয়ে দেখা যায়, একাধিক জায়গায় মাটির ওপর পাথরের মত শক্ত কালো ওই টুকরো পড়ে রয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে ওই খবর চাউর হয়ে যায়।

খবর যায় স্থানীয় ভূতত্ত্ববিদ ঊর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছেও। যেহেতু এলাকাটি বন দফতরের আওতায় পড়ে, তাই তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরের নজরে আনেন। খবর যায় পুলিশের কাছেও। শুক্রবার রাত এগারোটা নাগাদ দু’গাড়ি পুলিশ নিয়ে ওই এলাকায় গিয়েও পুলিশ কিছু হদিশ করতে পারেনি। স্থানীয়রা যাতে ওই এলাকায় কেউ না যায়, তার পরামর্শ দেয় পুলিশ। ঊর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এই এলাকার ভৌগলিক অবস্থানের কথা মাথায় রেখে যে কোনও সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জীবাশ্ম, নানা ধাতু, ভূগর্ভস্থ শিলা অনেক কিছুই হতে পারে। তাই ঘটনা সম্পর্কে সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত, যাতে ওই এলাকায় কেউ কিছু না করে, তার জন্য বন দফতরকে বিষয়টি জানিয়েছি। নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে।”

স্থানীয় বাঁধগোড়া কালীকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির পড়ুয়া হাতেম মিয়াঁ, বোলপুর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শামিম মিয়াঁরা জানান, মাটির নীচ থেকে শিখা বের হচ্ছিল বলে আমরা শুনেছি। ঘটনার খবরে শুক্রবার থেকে ওই এলাকাকে ঘিরে নানা জল্পনা শুরু হয়। বোলপুরের রেঞ্জার নির্মল কুমার বৈদ্য বলেন, “নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”

ওই এলাকার উপর দিয়ে গিয়েছে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তার। কারো কারো দাবি, ওই তার ছিঁড়ে পুড়ে গিয়ে এমনটা হয়েছে।

বিশ্বভারতীর ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই এলাকার মাটির উপরে এবং নীচে কালচে গলিক পাথর পাওয়া গিয়েছে। বিষয়টি ছেলেখেলা নয়। ল্যাটেরাইট অঞ্চলে এ হেন ঘটনার উৎস্য কি, জানতে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কাছে নমুনা পাঠানো হচ্ছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরে সঠিক ঘটনা তারপরেই বলা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Moldanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE