Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শরীরের বাধা পেরিয়ে পরীক্ষা সৌরভের

সমবয়সী অন্য কিশোরেরা যখন ছুটে যায় খেলার মাঠে, সৌরভ ডুব দেয় বইয়ে। বিষ্ণুপুর শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডোমপুকুরের টিনের চাল দেওয়া এক চিলতে বাড়ির মধ্যে ওটাই ওর নিজের জগৎ।

অদম্য: পরীক্ষাকেন্দ্রে বিষ্ণুপুরের সৌরভ গড়াই। নিজস্ব চিত্র

অদম্য: পরীক্ষাকেন্দ্রে বিষ্ণুপুরের সৌরভ গড়াই। নিজস্ব চিত্র

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০০:৪৫
Share: Save:

সমবয়সী অন্য কিশোরেরা যখন ছুটে যায় খেলার মাঠে, সৌরভ ডুব দেয় বইয়ে। বিষ্ণুপুর শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডোমপুকুরের টিনের চাল দেওয়া এক চিলতে বাড়ির মধ্যে ওটাই ওর নিজের জগৎ। সৌরভের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নব্বই শতাংশ। অবশ্য তা দমিয়ে রাখতে পারেনি যমুনাদাস খেমকা হাইস্কুলের প্রাণবন্ত ছাত্রটিকে। এ বারে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে সে।

মা আভা গড়াই জানান, তিন বছর বয়স থেকে সৌরভের অসুস্থতার শুরু। ক্রমাগত চামড়া ফেটে উঠে আসতে থাকে। চিকিৎসকেরা জানান, রোগের নাম এপিডারমোলাইটিস ব্লোশা। একটু একটু করে হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ছেলেটি। কিন্তু মনের জোর বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। আভাদেবী বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ওর খুব আগ্রহ।’’

সৌরভের বাবা রামচন্দ্র গড়াইয়ের একটি মণিহারি দোকান রয়েছে বিষ্ণুপুর স্টেশন রোডে। অল্প আয়। তার থেকেই ছেলের চিকিৎসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন রামচন্দ্রবাবু। ছেলেকে নিয়ে গিয়েছেন ভেলোরে। আভাদেবী বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাপড় ফেরি করা শুরু করেছেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা কোনও আশার আলো দেখাতে পারেননি। সৌরভ এখন চলাফেরা করতে পারে না। শক্ত কিছু খেতেও পারে না। সারা দিন সঙ্গে থাকে বই, টেলিভিশন আর কিন্ডারগার্টেনে পড়া ছোট ভাই। আর সৌরভের মুখে লেগে থাকে হাসি।

সেই হাসিটুকুই আভাদেবী এবং রামচন্দ্রবাবুর কাছে খুব দামী। তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের শত কষ্ট হলেও ওকে পড়িয়ে যাব।’’ অনটনের জন্য ছেলের কোনও গৃহশিক্ষক রাখতে পারেননি রামচন্দ্রবাবু। তবে সৌরভ বলে, ‘‘স্কুলের শিক্ষকেরা আমাকে খুবই সাহায্য করেছেন।’’ পরীক্ষা শুরুর দিন কৃত্তিবাস মুখোপাধ্যায় হাইস্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে এসেছিলেন সৌরভের স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ কুণ্ডু। সৌরভকে নিয়ে তাঁরও অনেক আশা। বলেন, ‘‘ওর অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কুর্নিশ করতে হয়। অসুস্থতার জন্য নিয়মিত স্কুলে আসতে পারত না। বাবার কোলে চড়ে পরীক্ষা দিতে আসত।’’ কৃত্তিবাস মুখোপাধ্যায় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ পাত্র জানান, সৌরভের আলাদা পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লেখকের ব্যবস্থাও কয়েছে দিয়েছে। পরীক্ষার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী সৌরভ। অবশ্য পড়শি মানিক বাউরি, তাপস লোহারদের কথায়, ‘‘ও জীবনের বড় পরীক্ষায় সফল হয়ে গিয়েছে। মাধ্যমিক তো ভাল হবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Differently abled Student Madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE