কথা: মহকুমাশাসক (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
প্লাস্টিক বা থার্মোকলের জিনিসপত্রের ব্যবহার বন্ধ, কড়া নজরদারি ও নিয়মিত সাফাই অভিযান— এই তিন কৌশলেই গত পর্যটন মরসুমে মুকুটমণিপুরের ছবিটা অনেক বদলে গিয়েছিল। প্রশাসনের কড়াকড়িতে পিকনিক পার্টি বা পর্যটকেরাও নিয়ম মেনেছিলেন। যদিও জেলার আরেক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থল শুশুনিয়া পাহাড়ের ভোল বদলানো যায়নি। এ বছর তাই মরসুম শুরু হওয়ার আগেই শুশুনিয়ার পরিচ্ছন্নতা রক্ষার গেমপ্ল্যান বানানো শুরু করে দিল জেলা প্রশাসন।
সোমবারই মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা শুশুনিয়া পর্যটনস্থল পরিদর্শন করেন। সঙ্গে ছিলেন বিডিও (ছাতনা) মলয় চট্টোপাধ্যায়। মহকুমাশাসক বলেন, “কোনও ভাবেই এ বার পর্যটক বা পিকনিক পার্টিগুলিকে নিয়ম ভাঙতে দেওয়া হবে না। কড়া নজরদারি থাকবে।” তিনি জানান, পর্যটনস্থল সংলগ্ন সমস্ত দোকান থেকেই সাত দিনের মধ্যে প্লাস্টিক বা থার্মোকলের থালা, বাটি গ্লাস সরিয়ে ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার বদলে দোকানগুলিতে যথেষ্ট শালপাতার থালা, কাগজের গ্লাস মজুত করতে বলা হয়েছে।
আবর্জনা ফেলার জন্য পাহাড়ের কোলে আলাদা জায়গা গড়ার পাশাপাশি ব্লক দফতরকে পর্যটন স্থলের বিভিন্ন জায়গায় বড় ডাস্টবিন বসানোরও নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমাশাসক। পর্যটন মরসুমে নিয়মিত যাতে এলাকা পরিষ্কার করা হয়, সে জন্য স্বনির্ভর দলগুলিকে দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে।
পর্যটনস্থলে প্লাসটিক বা থার্মোকলের জিনিসপত্র ব্যবহার না করা, আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা সহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রচারে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার বানানোর নির্দেশও দিয়েছেন ব্লক দফতরকে। সেই সঙ্গে গোটা পর্যটন মরসুম জুড়ে পাহাড় কোলে মাইক নিয়ে পিকনিক পার্টি ও পর্যটকদের সচেতন করা হবে বলে জানিয়েছেন অসীমবাবু। তিনি বলেন, “বাঁকুড়া শহর থেকে শুশুনিয়ায় আসার রাস্তার পাশে বিভিন্ন জায়গায় হোর্ডিং দিয়ে প্লাসটিক ও থার্মোকল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হবে। পর্যটনস্থলে নজরদারি চালানোর জন্য সিভিক পুলিশ মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কেউ নিয়ম ভাঙলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি যুক্ত করেন, “শুশুনিয়ার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। কোনও অনিয়ম মানা হবে না।”
শীতের আমেজ গায়ে লাগিয়ে পাহাড়ের টানে পর্যটন মরসুমে প্রতি দিনই হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন শুশুনিয়ায়। পিকনিক পার্টির ফেলে যাওয়া নোংরা আবর্জনায় গোটা মরসুম জুড়েই পাহাড় কোলের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। বাতাসে ভেসে বেড়ায় মুরগির ছাড়ানো পালক, ইতিউতি পড়ে থাকে থার্মোকলের এঁটো থালা, বাটি, গ্লাস। এই ঘটনায় বিরক্ত হন পর্যটকেরা। পরিবেশ প্রেমীরা দীর্ঘ দিন ধরেই এই সব বন্ধ করতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলে আসছেন।
ঘটনা হল, গত পর্যটন মরসুমে প্রশাসনের কড়া মনোভাবে জেলার আরেক পর্যটন স্থল মুকুটমণিপুরের হাল অনেকটাই বদলেছে। পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে খাতড়া মহকুমা প্রশাসন মুকুটমণিপুরকে প্লাস্টিক, ধুমপান ও মদ্যপান মুক্ত এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের নির্দেশ মেনে প্লাস্টিক বা থার্মোকলের বদলে শালপাতা বা কাগজের থালা, বাটি, গ্লাস বিক্রি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। পর্যটনস্থলে ঢোকার আগেই পর্যটক বা পিকনিক পার্টিদের বুঝিয়ে দেওয়া হতো নিয়মকানুন। নজরদারিও চালানো হতো জলাধারের আশপাশে।
এই সমস্ত কারণে মুকুটমণিপুর জলাধার সংলগ্ন এলাকা অনেকাংশেই দুষণ মুক্ত ছিল গত বছর। এমনকী প্রশাসনের কথা মেনে বহু পিকনিক পার্টি সাউন্ড বক্স পর্যন্ত বাজানো বন্ধ রেখেছিল। মহকুমাশাসক (খাতড়া) তনয়দেব সরকার বলেন, “গত বছর সাধারণ মানুষকে একটা মনোরম পরিবেশ দিতে পেরেছিলাম। এ বছরও আমাদের সেই লক্ষ্য রয়েছে।” বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “মুকুটমণিপুরের মতো শুশুনিয়াকেও এ বার আমরা সম্পূর্ণ প্লাস্টিক মুক্ত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। প্লাসটিক বা থার্মোকলের জিনিসপত্র ব্যবহার বন্ধ করে সেখানে যাতে পরিবেশ বান্ধব জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয় আমরা তার ব্যবস্থাও করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy