Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পাত্রসায়র থেকে শুরু হচ্ছে জেলা পুলিশের নতুন প্রকল্প ‘উজ্জীবন’

অসহায় বয়স্কদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার ভরসা এ বার পুলিশ

বাঁকুড়া জেলায় অসহায় বয়স্ক মানুষজনের নানা দুর্দশার ঘটনা একাধিকবার সামনে এসেছে। সব ক্ষেত্রেই পুলিশ বা প্রশাসনকে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ করতে দেখা গেলেও এর স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। এ বার দেখা গেল।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪৩
Share: Save:

কখনও বৃদ্ধা মা খুন হয়েছেন ছেলের হাতে, কখনও একাকিত্বের জেরে অবসাদে ভুগতে ভুগতে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন। বাড়ির কেউ নিতে না আসায় সুস্থ হয়ে গিয়েও দিনের পর দিন হাসপাতালে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বৃদ্ধ, বৃদ্ধাদের। বাঁকুড়া জেলায় অসহায় বয়স্ক মানুষজনের নানা দুর্দশার ঘটনা একাধিকবার সামনে এসেছে। সব ক্ষেত্রেই পুলিশ বা প্রশাসনকে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ করতে দেখা গেলেও এর স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। এ বার দেখা গেল।

ঘরে ঘরে নানা সমস্যায় ভুগতে থাকা বয়স্ক মানুষজনের খোঁজ রাখতে বিশেষ দল গঠনে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশ। প্রকল্পের পোশাকি নাম দেওয়া হচ্ছে ‘উজ্জীবন’। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা জানান, জেলায় প্রাথমিক ভাবে শুধু পাত্রসায়র থানায় এই প্রকল্প শুরু করা হচ্ছে। পাত্রসায়র থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে রুটিন মাফিক চিহ্নিত করা বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের বাড়ি পরিদর্শন করার কাজ চলছে। মঙ্গলবার পাত্রসায়র থানায় এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা পুলিশ সুপারের। ধীরে ধীরে গোটা জেলার সব ক’টি থানাতেই উজ্জীবন প্রকল্প শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি পাত্রসায়র থানার ওসি মানস চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এলাকার ৭৫টি গ্রামে সমীক্ষা চালিয়ে ২৮১ জন বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চিহ্নিতদের সবাই একা থাকেন। কারও ছেলে বাইরে রয়েছেন, মাঝে মাঝে এসে খবর নিয়ে যান। কাউকে আবার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কারও নিজের বলতে কেউ নেই। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় এক জন করে গ্রামীণ পুলিশের নেতৃত্বে ১০ জন করে সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে একটি করে দল গড়া হয়েছে পাত্রসায়রে। ওই দল এলাকায় ঘুরে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছে। কথা বলার সময় ছবি তুলে রাখা হচ্ছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পুলিশ কর্মীদের মোবাইল নম্বর দিয়ে বলা হচ্ছে, যে কোনও অসুবিধায় তাঁরা যেন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ সুপার জানান, বৃয়স্কদের সমস্যা শুনে দরকার হলে পুলিশ তাঁদের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলবে। কাউকে যদি বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পেলে পুলিশ গিয়ে ব্যবস্থা নেবে। এমনকী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে অসুবিধে হলে পুলিশ তাঁদের নিয়ে যাবে।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি, বয়স্ক মানুষজন নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হন। তাঁদের সমস্যার কথা কেউ জানতেই পারেন না। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা থানাতেও আসতে পারেন না। তাই পুলিশের সঙ্গে দুরত্ব ঘোচানো ও তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে এই প্রকল্প নিয়েছি আমরা।’’

যদিও জেলা পুলিশের পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে পুলিশের এই উদ্যোগ নিয়মিত চালানো যাবে কি না প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। এই ব্যাপারে পুলিশ সুপারের বক্তব্য, পাত্রসায়রে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রকল্প চালু করা হয়েছে। সেখানে কতটা সফল হয় তা দেখেই অন্য থানায় এই প্রকল্প নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Care Elderly People Emergency Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE