Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
গ্রেফতার পাঁচ জন

সামনে এল চার ভুয়ো নার্সিং-স্কুল

পুলিশ জানিয়েছে, কিছু দিন আগে স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। পুলিশের দাবি, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গে সেই বিজ্ঞাপনের সম্পর্ক রয়েছে।

ঝালদার এই ওষুধ-দোকানের মালিক ধরা পড়েছে। নিজস্ব চিত্র

ঝালদার এই ওষুধ-দোকানের মালিক ধরা পড়েছে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০২:১১
Share: Save:

এ যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে!

শুধু হুড়ার লালপুরেই নয়, পুরুলিয়া জেলার আরও চারটি জায়গায় ভুয়ো নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালানোর অভিযোগ উঠল আসানসোলের তিন বোনের বিরুদ্ধে। তদন্তে নেমে তাঁরা এমনই জানতে পেরেছে বলে দাবি করল পুলিশ। হুড়া-সহ ওই পাঁচটি কেন্দ্র চালানোয় যুক্ত থাকার অভিযোগে আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত জয়দেব মণ্ডলের বাড়ি হুড়ার লালপুরে। লালপুরে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়কের পাশে তাঁর বাড়িতেই ভাড়ায় ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছিল। বাকি ধৃতেরা হলেন বান্দোয়ানের বাসিন্দা মমতাজ আনসারি, বলরামপুরের প্রধান মহান্তি, ঝালদার মুকেশকুমার চন্দ্র এবং সাঁওতালডিহির জুলি রায়। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘ধৃত বোনদের জেরা করে বাকি পাঁচ জনের জড়িত থাকার কথা জানা গিয়েছে।’’

বুধবার গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে হুড়ার লালপুরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে থানার ওসি রামগোপাল পাল ও হুড়ার বিডিও শুভায়ু কাশ্যপি সরেজমিন তদন্তে গিয়ে নার্সিং প্রশিক্ষণ চালানোর প্রয়োজনীয় নথি দেখতে পাননি। সে দিনই পুলিশ এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত তিন মহিলাকে গ্রেফতার করে। মামণি বন্দ্যোপাধ্যায়, শিল্পী বন্দ্যোপাধ্যায় ও চৈতালি বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এই তিন বোনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলাও শুরু করে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, কিছু দিন আগে স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। পুলিশের দাবি, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গে সেই বিজ্ঞাপনের সম্পর্ক রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনে ঝালদার একটি ওষুধের দোকানের নামের উল্লেখ রয়েছে। যদিও এই বিজ্ঞাপনে সরাসরি কোথাও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নামের উল্লেখ নেই। সেখানে কেবলমাত্র চাকরির সুযোগের কথা লেখা রয়েছে। আর কয়েকটি ফোন নম্বর রয়েছে।

ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার এই দোকানের মালিক মুকেশকুমারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ওষুধের দোকানের লাগোয়া একটি নার্সিংহোমও রয়েছে। তার মালিক মুকেশবাবুর বাবা। এই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে আবার কয়েক মাস আগে পাড়া থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তির চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে দৃষ্টিশক্তি হারানোর অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে স্বাস্থ্য দফতর।

মুকেশবাবুর বাবা বীরেনচন্দ্র এ দিন বলেন, ‘‘আসানসোলের তিন মহিলা এসে এখানে নার্সিং প্রশিক্ষণ চালাবে বলেছিল। তাঁরাই প্রশিক্ষণ চালাচ্ছিলেন। আমি কেবলমাত্র ঘর ভাড়া দিয়েছিলাম। ওঁদের যে নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালানোর অনুমতিই নেই, তা আমি জানতাম না।’’ এ দিন এই নার্সিং হোমের এক কর্মী দাবি করেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের ইচ্ছে ছিল না আমরা ওই নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ব্যাপারে মাথা ঘামাই। তাই সেখানে কী হতো জানি না।’’

পুলিশ জানাচ্ছে, বলরামপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি লজেও চলত নার্সিং প্রশিক্ষণের কাজ। সেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালানোর অভিযোগেই পুলিশ প্রশান্ত মহান্তি নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছে। এখানেও ওই বোনেদের যাতায়াত ছিল বলে পুলিশের দাবি। এ দিন এই লজে যোগাযোগ করলে কর্মীরা স্বীকার করেছেন যে সেখানে কয়েক মাস ধরে প্রশিক্ষণ চলছিল। বান্দোয়ান ও সাঁওতালডিহিতেও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ওই দুই কেন্দ্রের জন্য ঘর ভাড়া দেওয়ায় দুই মহিলাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার মধ্যে জুলি রায় আবার শিক্ষার্থী জোগাড় করে আনতেন।

পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে ১৮ মাসের কোর্সের জন্য ফি ছিল ৫০০০ টাকা। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মাসে পাঁচশো টাকা করে দিতে হতো। ধৃত পাঁচ জনকে শনিবার পুরুলিয়া আদালতে তোলা হয়। তাঁদের সবার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ। বিচারক প্রত্যেকেরই শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করেন। তবে সপ্তাহে দু’দিন করে হুড়া থানায় তদন্তকারী অফিসারের কাছে হাজিরা দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিশদ তদন্তের জন্য এ দিন পুলিশ আদালতের কাছে চৈতালি বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের নিজেদের হেফাজতে চায়। বিচারক চৈতালিকে দু’দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি দুই বোন জেলে রয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE