Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি সভাপতির

কর্মাধ্যক্ষকে মারধরে ধৃত পাঁচ তৃণমূল কর্মী

শাসকদলের অভিযুক্তদের ধরতে কিছুটা অন্তত সক্রিয়তা দেখাল বাঁকুড়ার পাত্রসায়র পুলিশ। দু’মাস আগে পাত্রসায়র ব্লক অফিসের ভিতরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও দুই কর্মাধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনার পরেও যে পুলিশকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে, সেই পুলিশই এ বার অভিযুক্তদের ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে।

বিষ্ণুপুর আদালতে ধৃতেরা। বুধবার।— নিজস্ব চিত্র।

বিষ্ণুপুর আদালতে ধৃতেরা। বুধবার।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র ও রাইপুর শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০০
Share: Save:

শাসকদলের অভিযুক্তদের ধরতে কিছুটা অন্তত সক্রিয়তা দেখাল বাঁকুড়ার পাত্রসায়র পুলিশ। দু’মাস আগে পাত্রসায়র ব্লক অফিসের ভিতরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও দুই কর্মাধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনার পরেও যে পুলিশকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে, সেই পুলিশই এ বার অভিযুক্তদের ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে। পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির শিশু ও নারী কল্যাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ সুনীতি মুখোপাধ্যায়কে মারধরের ঘটনায় বুধবার পাঁচ তৃণমূল কম়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

অন্য দিকে, রাইপুরেও এক বিজেপি কর্মীকে মারধরের অভিযোগে পুলিশ ভূতনাথ বেরা, তাঁর ছেলে একান্ত বেরা ও রাজু সিংহ নামে তিন জনকে ধরেেছ। ধৃতেরা সকলেই গোলোর গ্রামের বাসিন্দা। এলাকায় তাঁরাও তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত।

পাত্রসায়রের হামলায় ধৃত জয়দেব মুখোপাধ্যায়, রাজীব ওরফে রাজু রায়, বাপন মালি, পরিমল ওরফে ছোটমাল মিদ্যা ও রঞ্জিত মালিও এলাকায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক হিসাবেই পরিচিত। জয়দেবের বাড়ি পাত্রসায়র থানার আলিপুর গ্রামে। বাকি চারজনের বাড়ি বেতুড় গ্রামে। বুধবার বেতুড় এলাকা থেকেই তাঁদের ধরা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। ঘটনার জেরে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই বেতুড় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।

পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে দেখে পাত্রসায়র, সোনামুখী, ইন্দাস থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় টহলাদারি শুরু করে। অভিযুক্তদের খোঁজে রাতভর তল্লাশি চালায়। বুধবার ধৃতদের বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের পাঁচ দিন জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই কর্মাধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ জনকে ধরা হয়েছে। বাকিরা পলাতক। তাদের খোঁজে জোর তল্লাশি চালানো হচ্ছে। নতুন করে গণ্ডগোল হয়নি। গ্রামে পুলিশের টহলদারি চলছে।”

মঙ্গলবার বিকেলে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে প্রকাশ্যে বেতুড় গ্রামের রাস্তায় ফেলে সুনীতিদেবীকে বেধড়ক মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে মার খান তাঁর মা সন্ধ্যাদেবীও। সুনীতিদেবীর দু’টি পা ও বাঁ হাত ভেঙে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনায় প্রহৃত সুনীতিদেবীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেই রাতেই সুনীতিদেবীর মা সন্ধ্যাদেবী থানায় গ্রামেরই মৃত্যুঞ্জয় রায়, জয়দেব মুখোপাধ্যায়, বাপন মালি, ভাস্কর রায়, রাজীব রায়, ছোটমাল মিদ্যা, রঞ্জিত মালি সহ ১১ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার জেরে বুধবার পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, মহকুমাশাসক, জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে পঞ্চায়েত সমিতির সকল সদস্যকে নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানিয়ে ফ্যাক্স পাঠিয়েছেন।

সুনীতিদেবীর অভিযোগ, “আমি স্নেহেশদার (ব্লক তৃণমূল সভাপতি) অনুগামী। তাই বাবলু সিংহের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমাকে এমন ভাবে মারল। আমার সম্মানহানির চেষ্টা করল।” ঘটনা হল, ওই এলাকায় দলের গোষ্ঠী রাজনীতিতে সুনীতিদেবী পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী। এ দিন চেষ্টা করেও স্নেহেশবাবুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বারবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও অন্য তৃণমূল নেতা বাবলু সিংহ ফোন ধরেননি। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব ঘটনার পিছনে সিপিএমের দুষ্কৃতীরা জড়িত বলে দাবি করলেও স্নেহেশবাবুর অনুগামীদের দাবি, ‘‘দলেরই এক নেতা কিছু দুষ্কৃতীকে নিয়ে তৃণমূলেরই অন্য গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের উপরে হামলা করাচ্ছেন। ওই নেতা আসলে দলের সর্বনাশ করতে নেমেছেন! জেলা নেতৃত্ব হাল না ধরলে আখেরে আমাদের দলের ক্ষতি হয়ে যাবে।’’

দেরিতে হলেও পুলিশ এ বার নড়েচড়ে বসায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শাসকদলের একটা বড় অংশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রকাশ্যে দিনের আলোয়, রাতের অন্ধকারে যারা এলাকায় লাঠি, বোমা, অস্ত্র দেখিয়ে অশান্তি জিইয়ে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের আগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। এ বার ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে দেরিতে হলেও এটা মন্দের ভাল। একই সঙ্গে সংশয়, দু’-একজনকে ধরে কি পুলিশ ফের হাত গুটিয়ে নেবে?

বাঁকুড়ারই জঙ্গলমহলের রাইপুর থানার গোলোর গ্রামে সোমবার রাতে মিশির ওরফে অন্ধ সিংহ নামে এক বিজেপি কর্মীর উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মিশিরবাবু বর্তমানে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর স্ত্রী জোৎস্না সিংহ মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের কাছে গ্রামেরই ভূতনাথ বেরা সহ ২১ জন তৃণমূল কর্মী সমর্থকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। খাতড়ার এসডিপিও কল্যাণ সিংহ রায় বলেন, “ওই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে।” যদিও ঘটনার পর থেকেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রাইপুর ব্লক তৃণমূল নেতা তথা মেলেড়া পঞ্চায়েত প্রধান রাজকুমার সিংহ এ দিনও দাবি করেন, “মিশির ওরফে অন্ধ সিংহ একসময় সিপিএমের সশস্ত্র দুষ্কৃতী দলের নেতা ছিলেন। এলাকায় বহু কুকর্মের সঙ্গে সে জড়িত। বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্যই আমাদের দলের নিরীহ নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করিয়েছে।’’ এ দিন খাতা আদালতে ধৃতদের তোলা হলে বিচারক তাদের পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

হার ছিনতাই। ফের ভরসন্ধ্যায় গলা থেকে হার ছিনতাই হল এক মহিলার। পুরুলিয়া শহরের নীলকুঠিডাঙা এলাকায় মঙ্গলবারের ঘটনা। নীলকুঠিডাঙারই বাসিন্দা সুমিত রায়ের অভিযোগ, ‘‘আমার মা সন্ধ্যায় শহরের ট্যাক্সিস্ট্যান্ড থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। মূল রাস্তা ছেড়ে পাড়ার রাস্তা ধরে হেঁটে আসার সময় উল্টোদিক থেকে আসা দুই মোটরবাইক আরোহী মায়ের গলা থেকে হার ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। পুলিশকে ঘটনাটি জানানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সম্প্রতি পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ভল্ট ভেঙে টাকা লুঠ হয়। তার পরেই শহরের ভাগাবাঁধপাড়ায় এক ব্যবসায়ীর মোটরবাইক ও টাকা ছিনতাই করে দুই দুষ্কৃতী। কয়েক মাস আগেও পুরুলিয়া শহরে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল। ফের এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় বাসিন্দারা সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE