Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডুবল লাঘাটা সেতু, বিচ্ছিন্ন লাভপুর

গত কয়েকদিন ধরেই নদীতে জল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই আশংকায় সত্যি হল। শনিবার ভোরে তলিয়ে গেল সেতু।

বাঁধ ভাঙার পরে জলের তোড়। নিজস্ব চিত্র

বাঁধ ভাঙার পরে জলের তোড়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০২:৪৪
Share: Save:

আশঙ্কাই সত্যি হল। এ বারও কুঁয়ে নদীতে তলিয়ে গেল লাভপুরের লাঘাটার সড়ক সেতু। এর ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সিউড়ি-কাটোয়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। তার জেরে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়লেন বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ। জলের তোড়ে তলিয়ে গেলেন এক তরুণী। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ওই তরুণীর নাম শতাব্দী বাজিকর। বাড়ি লাভপুরের শীতলগ্রামে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এলাকার বাসিন্দাদের এই দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের। কারণ লা’ঘাটায় একটি নীচু সেতুর উপর দিয়ে চলে গিয়েছে সিউড়ি-কাটোয়া সড়ক। প্রায় প্রতিবছর বর্ষার মরসুমে কূঁয়ে নদীতে তলিয়ে যায় সেই সেতু। তখন নদীর জল না কমা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিপদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পারাপারের পরে বাস যোগাযোগের নাগাল পান ওই রুটের যাত্রী। অথচ প্রশাসনের সকল স্তরে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ।

গত কয়েকদিন ধরেই নদীতে জল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই আশংকায় সত্যি হল। শনিবার ভোরে তলিয়ে গেল সেতু। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ গিয়ে দেখা গেল সেতুর দুই পাড়ে বাস থেকে নেমে দোটানায় পড়েছেন অধিকাংশ যাত্রী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাণ হাতে নিয়ে নৌকায় নদী পেরিয়ে অন্যপারের বাস ধরছেন। কেউ বা ফিরে যাচ্ছেন বাড়ি।

এ দিন বহুরুপী দেখিয়ে তেমনই বাড়ি ফিরছিলেন শতাব্দী। গ্রামের রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ে বিকেলের দিকে। গ্রাম ঢোকার মুখে একটি ছোট সেতুর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর পা হড়কে যায়। স্রোতের টানে ভেসে যান তিনি। লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বলেন, ‘‘ওই তরুণীর খোঁজে এলাকায় বোট পাঠানো হয়েছে।’’

কীর্ণাহারের দিকের বাসে এসে নৌকায় নদী পার হয়ে অন্যদিকের বাসে উঠলেন চৌহাট্টা হাইস্কুলের স্কুলের শিক্ষক নানুরের সজলেন্দু সাহা, কুনিয়ারা হাইস্কুলের শিক্ষক সাকুলিপুরের পিন্টু কারক। তাঁরা জানান, প্রতিবছরই নৌকাডুবির কথা শুনি, তবু আমাদের এভাবেই প্রাণ হাতে নিয়ে নৌকায় নদী পেরিয়েই স্কুলে যেতে হয়। কারণ, দু’একদিনের ব্যাপার হলে হয়তো ছুটি নেওয়া যেত। কিন্তু অনির্দিষ্টকাল তো ছুটি নিয়ে বসে থাকা যায় না।

একইভাবে ৭ বছরের ছেলে শুভমকে নিয়ে নৌকায় নদী পার হতে দেখা গেল সস্ত্রীক বর্ধমানের কোমরপুরের বাসিন্দা শ্যামলকান্তি মজুমদারকে। তাঁদের গন্তব্য সিউড়ি। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘আমাদের নৌকায় নদী পারাপারের অভ্যেস নেই, তাই খুব ভয় করছিল। কিন্তু না গিয়েও উপায় নেই। ছেলেকে দেখানোর জন্য ডাক্তারের কাছে নাম লেখানো রয়েছে।’’ অন্যদিকে স্কুলব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা গেল লাভপুর বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পলশা গ্রামের সুলতা মণ্ডল, টুসি সরকারদের। তাঁরা বলেন, ‘‘প্রতিবছর আমাদের এইভাবে নদী পাড় থেকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়। নৌকায় নদী পারাপার করতে খুব ভয় লাগে।’’

আমোদপুরে মেয়ের বাড়ি যাব বলে বেরিয়ে নদীর পাড় থেকে ফিরে যেতে হল ধ্রুববাটির বৃদ্ধা দয়াময়ী দাসীকেও। তিনি বলেন, ‘‘না জেনে এসে চরম হয়রানির শিকার হতে হল। আবার একদিন কষ্ট করে আসতে হবে।’’ লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘‘যাত্রীদের হয়রানি রুখতে চারটি নৌকা পারাপার করছে। মজুত রাখা হয়েছে আরও ২টি নৌকা। নিরাপত্তার জন্য এলাকায় পুলিশ প্রশাসনের কর্মী মোতায়ন করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Lavpur heavy rain লাভপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE