আগেই সতর্ক করেছিলেন কারাখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হুঁশ ফেরেনি দাবিদাওয়া আদায়ে অনড় শ্রমিক সংগঠনের। উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত আনাড়ায় পাটিল রেল ইনফ্রাস্টাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের রেলের স্লিপার তৈরির কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেল।
সেই সঙ্গে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল প্রায় আড়াইশো শ্রমিকের ভবিষ্যৎ-ও। বৃহস্পতিবার ওই কারখানার দরজায় সাঁটানো হয়েছে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-র নোটিস। অন্যদিকে তাঁদের মজুরি-বৃদ্ধি সহ অন্যান্য দাবি আঞ্চলিক শ্রম মহাধ্যক্ষের কাছে জানিয়েছেন শ্রমিকদের একাংশ। প্রশাসন সূত্রের খবর, সমস্যা মেটাতে আগামী বুধবার মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের বৈঠক ডেকেছেন আঞ্চলিক শ্রম মহাধ্যক্ষ।
আনাড়ার রেল ইয়ার্ডের পাশেই রেলের স্লিপার তৈরির ওই বেসরকারি কারখানায় স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা দু’শোর কিছু বেশি। ঠিকা শ্রমিক জনা পঞ্চাশেক। কারখানায় আগে তৃণমূলের একটি শ্রমিক সংগঠন থাকলেও সম্প্রতি তৈরি হয়েছে এসইউসি-র শ্রমিক সংগঠন। মালিকপক্ষের সঙ্গে নানা দাবিতে বিরোধ বেধেছে এসইউসি-র শ্রমিক সংগঠনের। ওই সংগঠনের সদস্যদের দাবি, যেহেতু কারখানায় কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থার পণ্য উৎপাদিত হয়, তাই তাঁদের মজুরি দিতে হবে কেন্দ্র সরকারের নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরির হারে। পাশাপাশি শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ার দাবি, সুলভ ক্যান্টিন শুরুর দাবিও জানিয়েছে ওই সংগঠন।
ঘটনা হল, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষের ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মেয়াদ ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার পর থেকেই ওই দাবিগুলি নিয়ে সরব হয়েছে এসইউসি প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন। এ ক্ষেত্রে আবার রাজ্যের শ্রম দফতরের পরিবর্তে তাঁরা দাবিসনদ পেশ করেছে আসানসোলের আঞ্চলিক শ্রম মহাধ্যক্ষর (কেন্দ্র) কাছে।
পাটিল রেল ইনফ্রাস্টাকচার প্রাইভেট লিমিটেড স্থায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রবীর মাহাতোর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্র সরকারের ন্যূনতম মজুরি হারের থেকে প্রায় অর্ধেক হারে এখানে মজুরি দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র সরকারের ওই হারে মজুরি চেয়ে আমরা অন্যায্য কিছু দাবি জানাইনি। কিন্তু মালিকপক্ষ তাতে আমল দিচ্ছেন না।”
অন্য দিকে, কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী নতুন চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত পুরনো চুক্তি অনুযায়ী কাজ করার কথা শ্রমিকদের। কিন্তু শ্রমিকদের একাংশ তাতে রাজি না হয়ে উল্টে কারখানার উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে অসীম চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘দৈনিক তিনটে শিফটে ২৬০টি স্লিপার তৈরির কথা। শ্রমিকদের একাংশ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কারখানায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক স্লিপার তৈরি হচ্ছে। এতে প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।’’ তিনি জানান, সাসপেনশন অব ওয়ার্ক-এর বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে তাঁরা নোটিস দিয়ে শ্রমিকদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন করার আবেদন করেছিলেন। এও বলা হয়েছিল, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরে মজুরি বাড়লে শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে।
কারখানায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন অবশ্য মনে করছে, এই বিরোধের জেরে আখেরে সমস্যায় পড়তে হল শ্রমিকদেরই। কারখানায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি তথা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের পুরুলিয়ার জেলা সভাপতি প্রফুল্ল মাহাতো বলেন, ‘‘দাবি আদায়ে উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার রাস্তায় না গিয়ে শ্রম দফতরের উপস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায়ের রাস্তা খোলা ছিল। উৎপাদন কমিয়ে হঠাকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy