Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কয়েক হাজার বইয়ের ক্যাটালগ গড়ে ডিজিটাল হওয়ার পথে একধাপ এগোল জেলার চার কলেজ লাইব্রেরি

বাড়িতে বসেই মিলছে লাইব্রেরির বইয়ের খোঁজ

ডিজিটাল হওয়ার দিকে একধাপ এগিয়ে গেল বীরভূমের চারটি কলেজের লাইব্রেরি। কয়েক হাজার বইয়ের সম্ভারযুক্ত ওই লাইব্রেরিগুলির অধিকাংশেরই ‘ডিজিটাল ক্যাটালগ’ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। তার মধ্যে দু’টি কলেজে ছাত্রছাত্রীরা তা ব্যবহারও করতে পারছেন।

জোরকদমে: হেতমপুরে চলছে কাজ। নিজস্ব চিত্র

জোরকদমে: হেতমপুরে চলছে কাজ। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০১:০০
Share: Save:

ডিজিটাল হওয়ার দিকে একধাপ এগিয়ে গেল বীরভূমের চারটি কলেজের লাইব্রেরি।

কয়েক হাজার বইয়ের সম্ভারযুক্ত ওই লাইব্রেরিগুলির অধিকাংশেরই ‘ডিজিটাল ক্যাটালগ’ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। তার মধ্যে দু’টি কলেজে ছাত্রছাত্রীরা তা ব্যবহারও করতে পারছেন। একটি কলেজ আবার লাইব্রেরির পাশাপাশি অনলাইনেও ওই ডিজিটাল ক্যাটালগ ব্যবহার করার পথও খুলে দিয়েছে।

‘ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’কে (নাক) দিয়ে মূল্যায়ন করাতে হলে কলেজের লাইব্রেরিকে ডিজিটাইজ করে ফেলা অন্যতম মানদণ্ড। সেই দলেই নাম লিখিয়েছে হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজ, লাভপুর শম্ভুনাথ কলেজ, মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা-লপসা হেমব্রম মহাবিদ্যালয় এবং সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ। হেতমপুর কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘নাক-এর ভিজিট করানোর আবেদন আমরা করেছি। তবে, শুধু সে কারণেই লাইব্রেরি ডিজিটাইজ করার দিকে আমরা এগোইনি। উনিশ শতকের এই কলেজকে একবিংশের আধুনিকতায় উন্নীত করাই মূল উদ্দেশ্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নির্ভর নানা কর্মকাণ্ড কলেজের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনায় চলছে। লাইব্রেরিকে ডিজিটাল করা তার অন্যতম অঙ্গ।’’

১৮৯৭ সালে দুবরাজপুরের হেতমপুর রাজপরিবার প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরির প্রায় ৩৪ হাজার বইয়ের ‘ডিজিটাল ক্যাটালগ’ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। গত দু’মাস ধরে এ কাজ করছে বর্ধমানের একটি সফট‌য়্যার সংস্থা। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যেই তা সাধারণ পাঠকেরা ব্যবহার করতে পারবেন। অন্য দিকে, লাইব্রেরিকে ‘ডিজিটাল’ করার দিকে জোর দিয়েছে বাকিরাও। ডিজিটাল ক্যাটালগ তৈরি করে তা পড়ুয়াদের জন্য খুলে দিয়েছে লাভপুর শম্ভুনাথ কলেজ এবং মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা-লপসা হেমব্রম মহাবিদ্যালয়। অনলাইনেও তা ব্যবহার করতে পারছেন লাভপুর কলেজের পড়ুয়ারা। যাতে বাড়িতে বসেই এক জন পড়ুয়া তাঁর পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে জেনে নিতে পারেন, তিনি যে বই খুঁজছেন, সেটি লাইব্রেরিতে আছে কিনা। কাজ চলছে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজেও।

লাইব্রেরি ডিজিটাল হলে ঠিক কী কী সুবিধা মেলে?

কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং ডিজিটাইজেশনের কাজে নিযুক্ত সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমত, লাইব্রেরিতে মজুত সব ক’টি বইয়ের আলাদা ‘বার-কোড’ দেওয়া হয়। কোন বই কোন তাকে, কতগুলি বইয়ের পরে রয়েছে, তার তথ্য থাকে ডিজিটাল ডেটা ব্যাঙ্কে। একই ভাবে প্রত্যেক পড়ুয়ার লাইব্রেরি কার্ডেও একটি নির্দিষ্ট ‘বার-কোড’ দেওয়া হয়। পড়ুয়ারা কম্পিউটারে বইয়ের নাম বা লেখকের নাম টাইপ করলেই জানতে পারবেন, সেই বইটি আদৌ গ্রন্থাগারে রয়েছে কিনা। থাকলেও ঠিক কোথায়। আবার বই লাইব্রেরি থেকে তোলা হলে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডারে বইয়ের সংখ্যা কমে যাবে। কোন পাঠক বইটি তুলেছেন, তা-ও দেখাবে। বই ফেরত দিলে আবার আগের অবস্থায় ফিরবে। এতে করে অনেক শৃঙ্খলাযুক্ত লাইব্রেরি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

তবে এই ব্যবস্থা গড়ে তুললেই যে তা ঠিক ভাবে চালানো যায়, এমনটা নয়। কারণ, যে কোনও লাইব্রেরি সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ এবং পাঠক— দু’পক্ষকেই সমান সচেতন এবং দায়িত্বশীল হতে হবে। যেমন, জেলার নবীনতম কলেজ মল্লারপুরে এবং লাভপুরের কলেজে এই ব্যবস্থা ঠিক ভাবে কার্যকর থাকলেও বিদ্যাসাগর কলেজে তা পুরোপুরি মানা যায়নি। তার অন্যতম কারণ, বইগুলিতে বার-কোড দেওয়া হলেও কলেজের পড়ুয়ারা মূল লাইব্রেরিতে ঢুকে যথাস্থানে বই না রাখায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

মল্লারপুর ও লাভপুরে পড়ুয়াদের মূল লাইব্রেরিতে ঢোকার অধিকার নেই। কম্পিউটার দেখে বই নির্বাচন করলে বা ফেরত দিলে বাকি কাজটা করেন গ্রন্থাগারিক এবং কর্মীরা। ফলে বই অগোছালো হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। বই দেওয়া ও ফেরতের কাজ হয় ‘বার-কোড ডিকোডা’র নামক ছোট্ট যন্ত্রের মাধ্যমে। মল্লারপুর কলেজের শিক্ষক সুমন মুখোপাধ্যায় এবং লাভপুরের শিক্ষক সপ্তর্ষি চক্রবর্তীরা বলছেন, ‘‘এতে পড়ুয়া এবং শিক্ষক দু’পক্ষই প্রভূত সুবিধা পাচ্ছেন।’’ হেতমপুর কলেজে দীর্ঘ দিন গ্রন্থাগারিক হিসাবে ছিলেন শ্যামল ঠাকুর। অবসরের পরেও লাইব্রেরি দেখাশোনা করেন। তিনি বলছেন, ‘‘আমরাও টুরকু হাঁসদা ও শম্ভুনাথের পথেই হাঁটব।’’ তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া সোমনাথ মজুমদার, প্রথম বর্ষের পূজা রক্ষিতরা বলছে, ‘‘গ্রন্থাগার ডিজিটাল হলে বই বাছাইয়ের সময় ও পরিশ্রম দুই-ই বাঁচে।’’

কেবল ক্যাটালগ গড়েই থামা নয়, আগামীতে দুষ্প্রাপ্য ও প্রাচীন গ্রন্থগুলি ডিজিটাইজ করে সংরক্ষিত করার পরিকল্পনাও রয়েছে কলেজগুলির। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের বহু প্রাচীন পুথি ও গ্রন্থ রয়েছে। হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের নিজস্ব সংগ্রহের বড় ভাণ্ডার আছে। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ কালচারাল টেক্সট অ্যান্ড রেকর্ডস’-এর মতো কারও পরামর্শে ভবিষ্যতে আমরা এই কাজ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Digital Birbhum Library
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE