প্রতীকী ছবি।
ক্রমাগত প্রচার ও রোগ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবে আত্মতুষ্টির কোনও অবকাশ নেই। মশাবাহিত ওই রোগের প্রকোপ নিয়ে এমনই অবস্থান জেলা স্বাস্থ্য দফতরের।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘সংখ্যা কমলেও এখনও ডেঙ্গিতে বিচ্ছিন্নভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা সমান তৎপর। জেলায় বুধবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪৪। আশার কথা একটাই, ডেঙ্গিতে এই জেলায় কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।’’
প্রসঙ্গত চলতি বছরে ডেঙ্গি রোগের প্রকোপ শুরু হয়েছিল জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে। অগস্ট মাসজুড়ে মাশাবাহিত ওই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা হুহু করে বেড়েছে। অগস্টের ২৫ তারিখ জেলাজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শ দুয়েক। উদ্বেগ ছিল দুবরাজপুর পুরসভাকে ঘিরেই। আক্রান্তের মধ্যে শুধুমাত্র দুবরাজপুরের পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৪ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল।
তার পর থেকে মেডিক্যাল ক্যাম্প, মশার বংশবৃদ্ধি রুখতে রাসায়নিক স্প্রে, কামান দাগা এবং সচেতনতা প্রচার কিছুই বাদ দেয়নি স্বাস্থ্য দফতর। এলাকা পরিচ্ছন্নতায় সঙ্গী ছিল দুবরাজপুর পুরসভাও। কিন্ত এলাকাবসীর মধ্যে রোগ সম্পর্কে সচতনতার ঘটতি থাকায় প্রথমদিকে কিছুতেই সাফাল্য মিলছিল না।
বাড়ি বাড়ি প্রাচার, এলাকবাসীর মধ্যে রোগ প্রতিরোধে কী করণীয় তা বোঝানো, মশার বংশবৃদ্ধি রুখতে প্রয়োজনীয়, জ্বর হলেই রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা এমন সর্বাত্মক চেষ্টায় পরিস্থিত বদলাতে থাকে অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। সেপ্টেম্বরের পরে ওই ওয়ার্ডে নতুন করে আক্রান্ত হননি।
দুবরাজপুরে আক্রান্ত ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের সতর্কতা ছিল, ডেঙ্গি রোগের জীবাণুর ধারক মানুষ। কিন্তু রোগ ছড়ানোয় মূল ভূমিকা থাকে এডিস প্রজাতির মশার। খুব ছোট্ট শরীরে সাদাসাদা স্পট যুক্ত অত্যন্ত চঞ্চল মশাগুলি। ওই মশা সংক্রামিত মানুষকে কামড়ালে ডেঙ্গির জীবাণু ঢোকে মশার শরীরে। এরপর যতগুলি মানুষকে সেই পূর্ণাঙ্গ মশা মানুষকে কামড়াবে জীবাণু ছাড়াবে ততগুলি শরীরে। একবার শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু প্রবেশের ৮-১০ দিনের মধ্যেই রোগ প্রকাশ পায়। ডিমপাড়ার আগে পুষ্টির একটি স্ত্রী এডিস মশা অন্তত পাঁচটি মানবশরীর থেকে রক্ত চোষে। জমা পরিস্কার জলে একবারে ১০০-১৫০টি ডিম পাড়ে একটি এডিস মশা। জীবদ্দশায় মোট তিনবার ডিমপাড়ে।
একটি পূর্ণাঙ্গ বাহক মশা কত সংখ্যক ডেঙ্গি জীবাণু বাহি মশা সৃষ্টি করে। রোগটি সংক্রামিত হয় দাবাললের মতো।
একমাত্র উপায় মাশার বংশ বৃদ্ধি রোধ। সেটা হতে পারে একমাত্র লার্ভা থাকা অবস্থায় সেগুলিকে যদি নষ্ট করে দেওয়া বা ডিম পাড়ার সুযোগ না দেওয়া। তাই বাড়ির আশাপাশে কোনও পাত্রে জল জমে থাকতে দিলে হবে না। তাতেই কাজ হয়। শেষ বেলায় সহায় আবাহাওয়া। কিছুদিনের জন্য বৃষ্টির বিরাম এবং কড়া রোদ মশার বংশ বৃদ্ধির অনুকূলে না থাকা।
কিন্তু দুবরাজপুরের ওই বিশেষ ওয়ার্ড বা দুবরাজপুর পুরএলাকায় যে উদ্যোগ মিলিত ভাবে নেওয়া সম্ভব হয় হয়েছিল, প্রচার চললেও গোটা জেলা জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে রাশ পড়ছে।
তবে গোটা জেলার নানা প্রান্তে বিচ্ছিন্ন ভাবে জেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে চলেছে এখনও। বর্ষা বিদায় এখনও নেয়নি সেই কারণেই পরিস্থিতিকে হালকাভাবে দেখতে রাজি নয় স্বাস্থ্য দফতর।
ডেপুটি সিএমওএইচ শকুন্তলা সরকার বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে এখনও সচেতনতা প্রচার চলছে। জ্বর আক্রান্তের খবর পেলেই রোগীকে নজরদারি রাখা হচ্ছে। তবে ঘিঞ্জি শহুরে এলাকা, যেখানে এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি সহজ সেখানেই রোগের প্রাদূর্ভাব ঘটে। আমরা ফের বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১২ থেকে ১৮ তারিখ শেষ দফায় ৬টি পুর এলাকায় বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা চালাব। চলবে সচেতনতা প্রচারও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy