Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
নকল মহকুমাশাসকের সইও

খাস জমির জাল নথি করে ধৃত ১

পুলিশকে ওই চাষি জানান, গরু বেচে দু’কিস্তিতে তিনি ওই টাকা অজয়কে দেন। টাকা পাওয়ার কিছু দিন পরে অজয় অতিরিক্ত জেলাশাসকের (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সই ও অফিসের শিলমোহর দেওয়া নথি তাঁর হাতে তুলে দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০১:৪২
Share: Save:

টাকার অঙ্ক বেশি নয়। মোটে আট হাজার। সেই টাকা দিতেই সরকারি জমিতে নিশ্চিন্তে চাষাবাদ করতে ‘সরকারি নথিপত্র’ হাতে তুলে দিয়েছিল লোকটি। কিন্তু পুরুলিয়ায় ভূমি দফতরের অফিসে সেই নথি দেখাতেই জানা গেল, পুরোটাই ভুয়ো! জাল করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলাশাসকের (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সই ও অফিসের শিলমোহরও! অভিযোগ পেয়ে রীতিমতো কাঠখড় পুড়িয়ে ফাঁদ পেতে নাম-পরিচয় ভাঁড়িয়ে থাকা সেই প্রতারককে ধরল পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ। ধৃত দেবেন্দ্রনাথ মাহাতোর বাড়ি পুরুলিয়া মফস্সল থানার ঘাঘরজুড়ি গ্রামে। জেলে থাকা দেবেন্দ্রনাথকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে শুক্রবার আদালতে আবেদন জানাল পুরুলিয়া পুলিশ।

ভূমি দফতর ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বান্দোয়ান থানার ঘোড়াটিকা গ্রামের এক চাষি এলাকায় সরকারি জমিতে কিছুদিন ধরে চাষাবাদ করছেন। কিন্তু কোনও নথি তাঁর কাছে ছিল না। কয়েক মাস আগে ঝালদার কুশিগ্রামের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়ে অজয় বাউরি নামের এক ব্যক্তি তাঁকে আশ্বাস দেন, হাজার আটেক টাকা পেলে তিনি ভূমি দফতর থেকে ওই জমির নথি বের করে দেবেন। পুলিশকে ওই চাষি জানান, গরু বেচে দু’কিস্তিতে তিনি ওই টাকা অজয়কে দেন। টাকা পাওয়ার কিছু দিন পরে অজয় অতিরিক্ত জেলাশাসকের (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সই ও অফিসের শিলমোহর দেওয়া নথি তাঁর হাতে তুলে দেন। তখনই সে জানিয়েছিল, ওই জমি কিছুদিন পরে তাঁর নামে নথিভুক্ত হয়ে যাবে।

কিন্তু জমিটি আদৌ নথিভুক্ত হল কি না, তা নিয়ে চাষির মনে সংশয় ছিল। এ দিকে ভূমি দফতর থেকে কোনও চিঠি না পাওয়ায় তাঁর মনে সন্দেহ তৈরি হয়। অজয় নামের ওই ব্যক্তিকে এলাকায় দেখাও যাচ্ছিল না। শেষমেষ তিনি অজয়ের দেওয়া নথি হাতে করে সটান জেলা ভূমি দফতরে চলে যান। সেখানে ওই নথি দেখে ভূমি দফতরের কর্মীদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। দেখা যায়, অতিরিক্ত জেলাশাসকের সই ও দফতরের শিলমোহর— সব জাল।

এরপরেই ১২ মে অতিরিক্ত জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ পুরুলিয়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ঘোড়াটিকা গ্রামের ওই চাষিকে জেরা করে ওই প্রতারকের নাম, ঠিকানা সংগ্রহ করে। কিন্তু ঝালদার কুশি গ্রামে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, অজয় নামে সেখানে কেউ থাকেন না। পুলিশের বুঝতে অসুবিধা হয় না, মিথ্যা পরিচয় দিয়েই ওই ব্যক্তি প্রতারণা করেছে।

এ দিকে, প্রতারিত চাষিও লোকটির মোবাইল নম্বর খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কোথায় মিলবে তাঁকে? দুর্ভাবনায় পড়ে যায় পুলিশ। তবে হাল ছাড়েননি তাঁরা। কিছু দিন আগে সেই চাষি পুলিশকে একটি ফোন নম্বর দিয়ে জানান, ওই নম্বরেই তিনি যোগাযোগ করতেন। পুলিশ খোঁজ করে দেখেন, ওই নম্বর অজয় বাউরির নামে নয়, দেবেন্দ্রনাথ মাহাতোর নামে রয়েছে। তাঁর ঠিকানাও অন্য। পুলিশ ফোনের গ্রাহকের ছবি দেখাতেই চাষি চিনতে পারেন। তিনি নিশ্চিত করেন, নাম ভাঁড়িয়ে দেবেন্দ্রনাথই তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

এরপর পুলিশ সেই নম্বরে ফোন করে দেবেন্দ্রনাথকে জমির নথি বের করে দেওয়ার জন্য মোটা টাকার টোপ দেয়। তাতেই কাজ দেয়। গত শনিবার পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে আসতেই পুলিশ তাঁকে ঘিরে ফেলে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘দেবেন্দ্রনাথ এমন আরও কত প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত তা জানা দরকার। তাই তাকে নিজেদের হেফাজতে পাওয়ায় প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest Fake Documents Land জমি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE