Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকল্পের টাকা কে পেল, শুরু তদন্ত

সরকারের ওয়েবসাইটে বাড়ির ছবি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে কাশীপুরের কালীদহ পঞ্চায়েতের অজিত মুদির ইন্দিরা আবাস যোজনার বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তাঁর বাড়ি তৈরিই হয়নি। এখনও তিনি জরাজীর্ণ বাড়িতেই বাস করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাশীপুর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

সরকারের ওয়েবসাইটে বাড়ির ছবি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে কাশীপুরের কালীদহ পঞ্চায়েতের অজিত মুদির ইন্দিরা আবাস যোজনার বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তাঁর বাড়ি তৈরিই হয়নি। এখনও তিনি জরাজীর্ণ বাড়িতেই বাস করেন। তাঁর আবেদন পেয়ে ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তে নেমেছে প্রশাসন। এ বার আদালতের নির্দেশে ওই ঘটনার তদন্তে নামল পুলিশও।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করেছে। প্রতারণা-সহ তফসিলি জাতি, উপজাতি আইনেও (দ্য শিডিউলড কাস্ট অ্যান্ড দ্য শিডিউলড ট্রাইবস প্রিভেনশন অব অ্যাট্রোসিটিস অ্যাক্ট, ১৯৮৯) মামলা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তদন্ত করতে পারেন এসডিপিও বা ডিএসপি পদমর্যাদার কোনও অফিসার। এই মামলারও তদন্তকারী অফিসার রঘুনাথপুরের এসডিপিও অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি কেলাহি গ্রামের বাসিন্দা অজিত মুদির নামে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি বরাদ্দ করে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। অথচ অজিতবাবুর অভিযোগ, স্থানীয় এক ব্যক্তির মারফৎ তিনি জানতে পারেন, কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন দফতরের ওয়েবসাইটে তাঁর নামে বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে ছবি-সহ উল্লেখ করা হয়েছে। এ বাবদ ধাপে ধাপে প্রকল্পের ৭৫ হাজার টাকাও দেওয়া হয়ে গিয়েছে বছর দুয়েক আগে। তিনি বলেন, ‘‘টাকাও হাতে পাইনি, বাড়িও তৈরি হয়নি। আমার নাম যে ওই প্রকল্পে অনুমোদন পেয়েছে, তাও পঞ্চায়েত থেকে আমাকে জানানো হয়নি।’

এক চিলতে জমিতে চাষ আর অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে দিন গুজরান করেন অজিতবাবু। তাঁর নামে বাড়ি তৈরি হয়েছে শুনে পঞ্চায়েতে খোঁজ করতে গেলে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিজেপি নেতা হরেন্দ্রনাথ মাহাতোর দাবি, ‘‘ইন্দিরা আবাস যোজনা নিয়ে যে দুর্নীতি হচ্ছে, এই ঘটনায় তা সামনে এসেছে। কিন্তু প্রশাসন এত দিনেও দোষী খুঁজে ব্যবস্থা নিতে পারল না।’’ যদিও অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্ত দাবি করেছেন, ‘‘তদন্ত চলছে।’’

তবে প্রশাসনের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, অজিতবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঠিক না থাকায়, কোনও টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা করা যায়নি। তাঁকে ঠিক অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা করতে ব্লক অফিস থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। হরেন্দ্রনাথবাবুর প্রশ্ন, ‘‘তা হলে গ্রামোন্নয়ন দফতরের ওয়েবসাইটে তাঁর নামে কী করে টাকা বরাদ্দ করার কথা, বাড়ি তৈরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে?’’

পীযূষকান্তি রজক নামে এক নির্মাণ সহায়ক নতুন বাড়ি সরেজমিন তদন্ত করে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছেন বলে ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে। যদিও পীযূষবাবু দাবি করেছেন তিনি কাশীপুরেরই অন্য একটি পঞ্চায়েতে নির্মাণ সহায়ক হিসেবে কাজ করলেও কোনও দিনই কালীদহ পঞ্চায়েতে ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘‘কী ভাবে আমার নাম এই প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট প্রাপকের বাড়ির তদন্তকারী হিসেবে ওয়েবসাইটে স্থান পেয়েছে, তা আমার কাছেও রহস্যের। আমি ওই ব্যক্তির বাড়ি নির্মাণের কোনও তদন্ত করিনি।’’ তিনি জানান, চিঠি দিয়ে তাঁর বক্তব্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধান, জেলাশাসক, মহকুমাশাসক-সহ প্রশাসনিক কর্তাদের জানিয়েছেন।

পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের উত্তম মণ্ডল দাবি করেছেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। যা বলার পঞ্চায়েতের সচিবই বলতে পারবেন।’’ পঞ্চায়েতের সচিব শঙ্কর বাউরির মন্তব্য, ‘‘কোনও ভাবে অনিচ্ছাকৃত এই ভুল হয়ে
থাকতে পারে।’’

শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও প্রশাসনের তদন্তে কী উঠে আসে, তার দিকে নজর সবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE