Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রং-তুলিতে ভোলবদল জয়চণ্ডীর

পর্যটনের মরসুম শুরুর আগে জয়চণ্ডী পাহাড়কে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে শিল্পীদের নিয়ে এই কাজে নেমেছেন মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায়।

রঙিন: পর্যটনের মরসুম শুরুর আগে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে এ ভাবেই সেজে উঠছে জয়চণ্ডী পাহাড়ের টিলা। নিজস্ব চিত্র

রঙিন: পর্যটনের মরসুম শুরুর আগে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে এ ভাবেই সেজে উঠছে জয়চণ্ডী পাহাড়ের টিলা। নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৪৪
Share: Save:

রুক্ষ পাহাড়ের ঢাল সেজে উঠছে শিল্পীর তুলির রঙে। এ ভাবে বদলে যাচ্ছে জয়চণ্ডী পাহাড়। নেপথ্যে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন। পর্যটনের মরসুম শুরুর আগে জয়চণ্ডী পাহাড়কে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে শিল্পীদের নিয়ে এই কাজে নেমেছেন মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায়।

প্রথাগত কোনও প্রশিক্ষণ নেই। স্রেফ ভাল লাগার আনন্দেই তাঁরা পাহাড়ের টিলায়, মাটির বাড়ির দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলেন আদিবাসী সংস্কৃতির ছবি। এ বার সেই অখ্যাত শিল্পী তথা পড়ুয়াদের স্বীকৃতি দিল প্রশাসন। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের প্রতাপপুর গ্রামের ওই স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের দিয়ে জয়চণ্ডী পাহাড়ের টিলায় আদিবাসী সংস্কৃতির বিভিন্ন ছবি আঁকানোর কাজ শুরু করিয়েছেন মহকুমাশাসক। সম্প্রতি সেই কাজ শুরু হয়েছে। এখন প্রায় শেষের মুখে। জয়চণ্ডী পাহাড়ের এক প্রান্তে রাজ্য পর্যটন দফতরের কটেজের পাশে টিলার উপরে ছবি আঁকা হচ্ছে। এতে কটেজে আসা পর্যটকদের কাছে আদিবাসী সংস্কৃতির ছবি তুলে ধরা যাবে বলে আশাবাদী মহকুমা প্রশাসন।

পড়াশোনা তাদের ভাল লাগে না। বরং অনাবিল আনন্দ মেলে ছবি আঁকায়। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নীলডি পঞ্চায়েতের প্রতাপপুর গ্রামে ফ্রি কোচিং সেন্টার চালাতে গিয়ে এ রকমই পাঁচ পড়ুয়াকে খুঁজে পেয়েছিলেন ওই এলাকারই বাসিন্দা চেলিয়ামা বিজলিপ্রভা হাইস্কুলের শিক্ষক অভিষেক মিশ্র। মানভূম উত্তরণ নামের একটি সংস্থা চালান তিনি। ওই সংস্থারই উদ্যোগে আদিবাসী অধ্যুষিত প্রতাপপুর গ্রামে ফ্রি কোচিং সেন্টার চলে। গ্রামের ৬০ জন পড়ুয়াকে পড়ানো হয় সেখানে।

অভিষেকবাবু জানাচ্ছেন, গ্রামে পড়াতে গিয়ে লক্ষ্য করেন ১২-১৪ বছরের পাঁচ পড়ুয়ার লেখাপড়ার প্রতি টান নেই। পড়ার সময়ে খাতায় ছবি আকঁতেই পছন্দ করে তারা। ওদের ভাললাগাটা ছবি আঁকার দিকে বুঝে তাদের দিয়ে প্রথমে প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দাদের দেওয়ালে ছবি আঁকানোর কাজ শুরু করিয়েছিলেন অভিষেকবাবু। তার মধ্যেই জুটে গিয়েছিল প্রতাপপুর গ্রামেরই আরও দুই যুবক। দেবদুলাল হাঁসদা কলেজের পড়া অসমাপ্ত রেখে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আর অজিত হাঁসদা রঘুনাথপুর কলেজে কলা বিভাগের তৃতীয়
বর্ষের ছাত্র।

দেবদুলাল ও অজিতের প্রথাগত কোনও প্রশিক্ষণ না থাকলেও তাদের আঁকার হাত বেশ ভাল। তাঁদেরই প্রশিক্ষক করে ওই পাঁচ পড়ুয়াকে আঁকার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। শিক্ষক ও ছাত্র— এই সাত জনের দলকে নিয়ে প্রথমে প্রতাপপুর গ্রামের পাশেই নীলডি পাহাড়ের টিলায় আদিবাসী সংস্কৃতির ছবি আঁকার কাজ শুরু করেছিলেন অভিষেকবাবুরা। প্রতাপপুর গ্রামে প্রশাসনিক কাজে গিয়ে তা নজরে আসে মহকুমাশাসকের। সেই কাজের তদারকি করতে গিয়েই এলাকার ছাত্রদের পাহাড়ের আঁকা ছবি চোখে পড়েছিল বিডিও (রঘুনাথপুর ২) সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর উৎসাহে দ্বিগুন উদ্যমে পাহাড়ের টিলায় ছবি আঁকার কাজ শুরু হয়েছিল।

ওই এলাকার ছাই ইটের কারখানা উদ্বোধনে গিয়ে পাহাড়ের টিলার ছবি দেখেছিলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়, রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায়েরা। ওই পড়ুয়াদের ডেকে তাদের উৎসাহ দেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। তারপরেই জয়চণ্ডী পাহাড়ের টিলায় ওই ছাত্রদের দিয়ে ছবি আঁকানোর সিদ্ধান্ত নেয় মহকুমা প্রশাসন।

গত কয়েকদিন ধরে টিলার তিন দিক জুড়ে রং-বেরঙের ছৌ মুখোশ, আদিবাসীদের শিকারে যাওয়ার দৃশ্য, আদিবাসী নাচের দৃশ্য, গাছকে পুজো করার ছবি, ফুল, আলপনা ফুটিয়ে তুলছে দেবদুলাল, অজিতেরা। সাথে রয়েছে উজ্জল হাঁসদা, বিমল হাঁসদা, মনোরঞ্জন বাস্কের মতো ওই পাঁচ স্কুল পড়ুয়া।

দেবদুলালদের কথায়, ‘‘আদিবাসী সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে ছবি আঁকার চলটা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেটাই ফের তুলে ধরার চেষ্টা করছি।” স্কুল শিক্ষক অভিষেকবাবু বলেন, ‘‘নিছকই খেয়ালের বশে ছেলেগুলোর আঁকার প্রতি আগ্রহকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে প্রতাপপুরে এই ছবি আঁকা শুরু করিয়েছিলাম। প্রশাসনের তরফে এ ভাবে স্বীকৃতি মিলবে ভাবিনি।” অপেশাদার সাত শিল্পী রং-তুলির সৃজনশীলতায় ক্রমশ রঙিন হচ্ছে জয়চণ্ডী পাহাড়ের
টিলার পাথর।

মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘প্রতাপপুর গ্রামের ওই সাত জনের কেউই পেশাদার নয়। ছবি আঁকার প্রথাগত প্রশিক্ষণও তাঁদের নেই। তা সত্ত্বেও নিপুণ হাতে আদিবাসী সংস্কৃতির ছবিতে পাহাড়ের টিলা ভরিয়ে তুলেছে।” মহকুমাশাসক জানাচ্ছেন, ছবি আঁকার পরে রুখা, ন্যাড়া টিলার পরিবেশটাই বদলে গিয়েছে। ছবির হাত ধরে একই সঙ্গে জয়চণ্ডীও পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Joychandi Pahar Decoration Colours
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE