মায়া-রং: নন্দনের প্রদর্শনী থেকে প্রাক্তনীর ছবি। নিজস্ব চিত্র
বরাবর রোগা পাতলা অবাঙালি ছাত্রটি অসুস্থ হয়ে পড়লে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তেন মাস্টারমশাই। দ্রুত সুস্থ করার জন্য লুকিয়ে তাঁকে খাবার খাওয়াতেন। মাস্টারমশাইয়ের নাম নন্দলাল বসু। আর ছাত্র কৃষ্ণ রেড্ডি। সোমবার থেকে শান্তিনিকেতনের নন্দন গ্যালারিতে এই প্রাক্তনীরই ছবির প্রদর্শনী শুরু হল। উদ্যোক্তা বিশ্বভারতীর কলাভবন।
প্রিন্ট মেকিং বা ছাপাই শিল্পের জগতে, শিল্পী ও শিক্ষক কৃষ্ণ রেড্ডির অবদান অতুলনীয়। বিরানব্বই বছরের এই প্রাক্তনীর কাজ দেশের অন্য জায়গায় প্রদর্শীত হলেও শান্তিনিকেতনে এই প্রথম। এ দিন নন্দনে, যার উদ্বোধন করেন শিল্পী ও শিক্ষক সনৎ কর।
কিছুদিন আগে বর্তমানে আমেরিকার বাসিন্দা শিল্পী এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশ্বভারতী। কলাভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিশির সাহানা আমেরিকায় তাঁর স্ত্রী জুড়িথ রেড্ডি সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শিল্পীর বাড়িতে শিল্পীর সঙ্গে কথা বলেন শিশির বাবু। নিজের শিল্প কর্মের প্রদর্শনী বিশ্বভারতীতে করার প্রস্তাব সম্মতি দেন কলাভবনের এই প্রাক্তনী। এ দিন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি নিজে অবশ্য আসতে পারেননি। শিল্পী সনৎ কর কলাভবনের পুরনো সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। উঠে আসে কৃষ্ণ রেড্ডি নানা স্মৃতি। নন্দলাল, বিনোদবিহারী এবং রামকিঙ্করের মতো বিশিষ্ট শিল্পীদের ছাত্র কৃষ্ণ রেড্ডির শিল্প কর্ম নিয়ে এ দিন আলোচনা হয়। অধ্যাপক শিশির সাহানা জানান, শিল্পীর ছাত্রাবস্থা থেকে শুরু করে ১৯৩৮ সালের পরের প্রায় দেড়শো শিল্প কর্ম এবং সৃষ্টি স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। বর্তমান আমেরিকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ৯২ বছরের এই শিল্পী ও শিক্ষক, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকাকালীন সেখানে প্রিন্ট মেকিং বিভাগ তৈরি করেন। দেশ বিদেশের প্রত্যেক শিল্প-শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে তাঁর শিল্প কর্ম এবং সৃষ্টি নিয়ে আজও সমান চর্চা হয়। শিল্পী কেউ কেউ বলেন, জিঙ্ক প্লেটের ওপর নাইট্রিক অ্যাসিড দিয়ে এচিং করে শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলাতেই ছিল শিল্পী রেড্ডির আলাদা কদর। যা আজও পড়ুয়া এবং গবেষকদের কাছে সমান প্রাসঙ্গিকতা রাখে। ললিতকলা অ্যাকাডেমির আঞ্চলিক কেন্দ্র, কলকাতা ও বিশ্বভারতীর কলাভবনের যৌথ উদ্যোগে এবং মুম্বইয়ের স্যার জে জে স্কুল অফ আর্ট অ্যান্ড ক্লার্ক হাউস ইনিসিয়েটিভের সহযোগিতায় নন্দনে এই শিল্প প্রদর্শনী চলবে ১৬ তারিখ পর্যন্ত। ছিলেন ললিত কলা একাডেমীর প্রশাসক সি এস কৃষ্ণা সেট্টি, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সিদ্ধার্থ ঘোষ, অধ্যাপক আনন্ত নিক্কন, কলাভবনের অধ্যক্ষ দিলীপ মিত্র প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy