Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মডেল বানিয়ে বিজ্ঞান মেলায় রাজ্যে দ্বিতীয় কুশল

হাতের নাগালে থাকা ৩০-৪০ টাকার জিনিস এবং স্মার্টফোনের ক্যামেরা কাজে লাগিয়ে বানানো সম্ভব একটা আস্ত একটা ডিজিটাল মাইক্রোস্কোপ— অবাক লাগলেও এমনটাই করেছে মহম্মদবাজার মালাডাং শেওড়াকুড়ি বংশীধর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র কুশল মণ্ডল!

বাড়িতে কুশল। নিজস্ব চিত্র।

বাড়িতে কুশল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৮
Share: Save:

হাতের নাগালে থাকা ৩০-৪০ টাকার জিনিস এবং স্মার্টফোনের ক্যামেরা কাজে লাগিয়ে বানানো সম্ভব একটা আস্ত একটা ডিজিটাল মাইক্রোস্কোপ— অবাক লাগলেও এমনটাই করেছে মহম্মদবাজার মালাডাং শেওড়াকুড়ি বংশীধর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র কুশল মণ্ডল!

কুশলের তৈরি বিজ্ঞান মডেল— ‘ডিজিটাল মাইক্রোস্কোপ’ রাজ্য ছাত্র-যুব বিজ্ঞান মেলায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নেতজি ইন্ডোরে আয়োজিত ওই বিজ্ঞান মেলায় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও লক্ষ্মীরতন শুক্লার কাছে থেকে পুরস্কৃত সে এবং তাঁর স্কুল। স্কুল পেয়েছে ৭৫ হাজার টাকা সঙ্গে স্মারক। একই স্মারক পেয়েছে কুশল এবং ৫ হাজার টাকা। সঙ্গে শংসাপত্র। জেলার একমাত্র কৃতী কুশলকে ঘিরে তাই যেমন উচ্ছ্বসিত তার পরিবার, স্কুল শিক্ষকেরা। খুশি জেলা যুব কল্যাণ দফতর।

জেলা যুব কল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য স্তরের ওই প্রতিযোগিতা তিনটি স্তরে হয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরে। জেলার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়— মোট ৯টি স্কুল-কলেজ অংশ নিয়েছিল। সেখানেই উচ্চমাধ্যমিকে দ্বিতীয় কুশল। জেলা যুব কল্যাণ আধিকারিক সৈকত হাজরা বলছেন, ‘‘কুশল জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে, বাকি ছাত্রদের কাছে অনুপ্রেরণাও। আমরা ওকে সংবর্ধিত করব।’’ ঠিক কী করছে কুশল?

আরও পড়ুন:

কানে আঙুল দিয়েও এড়ানো যাচ্ছে না এয়ার হর্নের দাপট

একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের কথায়, আমার লেগেছে দু’টি চৌকা আকৃতির বোর্ড (তার মধ্যে একটি ইলেকট্রিক ওয়ারিংয়ে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোর্ড অন্যটি স্বচ্ছ ফাইবার) চারটে লম্বা নাট বল্টু। দুটি লেন্স এবং এলইডি ল্যাম্প। নীচের অস্বচ্ছ বোর্ডের চার দিকে চারটে বল্টু ফিক্স করে সমান্তরাল দূরত্বে রেখে তার একদিকে ছোট্ট দুটি লেন্স বসানো। ঠিক তার নীচেই বাসানো হয়েছ একটা স্লাইড ক্যারিয়ার। নাট ঘুরিয়ে ক্যারিয়ার উপরে নিচে করা যায়। কুশল জানায়, ‘‘স্লাইড ক্যারিয়ার এবং লেন্সের লাইনে একেবার নীচের বোর্ডে স্থাপিত ওই এলইডি ল্যাম্প। লাইট জ্বাললেই কোষের গঠন বৈচিত্র্য ধরা পড়ে লেন্সে। কিন্তু সেখানে চোখ নয় মোবাইল ক্যামেরা প্লেস করলেই কেল্লা ফতে। মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠছে কোষের গঠনের খুঁটিনাটি এমনকী নিউক্লিয়াস পর্যন্ত। সেটা ভিডিও বা স্টিল ছবিতে ফোনের মোমোরি কার্ডে রেকর্ড করে দিব্যি দেখা যায়।’’ কুশলের কথায়, মোবাইল সফ্টওয়ারের সাহায্যে প্রেজেক্টারে ফেলা বা অনলাইন দেখানোও সম্ভব। মাস কয়েক আগে কথাটি যেদিন বিজ্ঞানের শিক্ষক শৈলেন মণ্ডলে কুশল দেখিয়ে ছিল, অবাক হয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষক! ছাত্রের আবিস্কারে উৎসাহী হয়ে তিনিই জেলা ছাত্র যুব বিজ্ঞান মেলায় সেটা দিতে বলেছিলেন ছাত্রকে। সাঁইথিয়া অভাদানন্দ মাহাবিদ্যালয়ে ডিসেম্বরে আয়োজিত সেই প্রতিযোগিতায় জেলার সেরা হয়েছিল কুশলের তৈরি মডেল। একটু উন্নত করা সেই মডেল এবার রাজ্যে স্থান পাওয়ায় খুশি শৈলেনবাবু। শৈলেনবাবু বলেন, ‘‘ওই করেছে। জীববিজ্ঞান পড়াতে গেলে মাইক্রেস্কোপ মাস্ট। অনেক কম খরচে ও যেটা ও করেছে সেটা অনবদ্য।’’

আদতে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা হলেও একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের পড়াশুনা পুরোটাই বীরভূমেই। বর্তমানে সিউড়িতে পিসির বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করে। বাবা পঞ্চানন মণ্ডল ঝাড়খণ্ডের রানিশ্বরে এবং মা অর্চনা মণ্ডল মহম্মদবাজারের মুরালপুরে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তাঁরা বলেন, ‘‘ছোট থেকেই যে কোনও খেলনা ঘন্টা খানেকও টিকত না তার হতে। যতক্ষণ দেখা হচ্ছে কী কী রয়েছে তার মধ্যে। কোনটার কী কাজ। আজ মনে হচ্ছে খেলনা ভেঙে ঠিকই করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Science Model Kushal Mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE