Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আজ বর্ধমানে মমতা, ‘মাথাব্যথা’ দুই ব্লক

কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট এবং আউশগ্রাম—এই তিন বিধানসভা এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি, তৃণমূল নেত্রী ‘স্নেহধন্য’ অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল। পূর্ব বর্ধমানের বাকি অংশ এক দিকে, ওই তিন বিধানসভা এলাকা যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। জেলার কোনও শীর্ষ নেতাই ওই তল্লাটের ঘটনার দায় নিতে চান না।

প্রস্তুতি: মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগে তোড়জোড়। বর্ধমান পুলিশ লাইনে বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

প্রস্তুতি: মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগে তোড়জোড়। বর্ধমান পুলিশ লাইনে বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০১:৪১
Share: Save:

সেই কেতুগ্রাম-মঙ্গলকোটই ‘মাথাব্যথা’।

আজ, বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের প্রশাসনিক বৈঠকের আগে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের অন্দরে চিন্তা-উদ্বেগ ওই দুই ব্লককে ঘিরে। কারণ, বাম জমানার শেষ দিকে তো বটেই, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও অজয়-ভাগীরথীর তীরবর্তী ওই দুই তল্লাটে হিংসার বিরাম নেই। রোগ সারবে কোন দাওয়াইয়ে, জানা নেই কারও। কয়েক মাস পরেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগেই শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বারবার মাথাচাড়া দিয়েছে এই দুই অঞ্চলে। জেলা ভাগের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সফরের ঠিক পরেই কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি জাহের শেখ খুন হন। কয়েক দিন আগে গুলি করে মারা হয় মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি ডালিম শেখকে। দু’টি খুনেই নাম জড়িয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের।

সব মহলেই প্রশ্ন, ওখানে কি শান্তি ফিরবে না? সেই খুনোখুনির রাজনীতিই কি ‘শাসন’ করে চলবে ওই দুই এলাকা? অতএব শাসকদলের জেলা নেতৃত্ব তো বটেই, কেতুগ্রাম-মঙ্গলকোটের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়তে হবে কিনা, ভাবাচ্ছে জেলা পুলিশ-প্রশাসনকেও। হাঁসখালির তৃণমূল নেতা খুনের পরে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়েছিল নদিয়া পুলিশ। এরই পুনরাবৃত্তি হয়েছিল হাওড়ায়।

কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট এবং আউশগ্রাম—এই তিন বিধানসভা এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি, তৃণমূল নেত্রী ‘স্নেহধন্য’ অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল। পূর্ব বর্ধমানের বাকি অংশ এক দিকে, ওই তিন বিধানসভা এলাকা যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। জেলার কোনও শীর্ষ নেতাই ওই তল্লাটের ঘটনার দায় নিতে চান না। জেলার নেতাদের আশঙ্কা, কেতুগ্রাম-মঙ্গলকোটের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। মঙ্গলকোট ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী বলছেন, “বৃহস্পতিবারের সভায় মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন, দেখা যাক। প্রশাসন তো রিপোর্ট দিয়েছে।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ও স্বরাষ্ট্র দফতরে ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। দু’টি খুনের ঘটনায় বেশ কয়েক জনকে ধরাও হয়েছে।”

বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ হলেও কেতুগ্রাম ‘চালাতেন’ জাহের শেখ। তিনি আবার বিধায়কের ভাই কাজল শেখের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন। বীরভূমের নানুরে অনুব্রত-কাজলের দ্বন্দ্বের রেশ ছড়িয়েছিল কেতুগ্রামেও। বিধায়ক বুধবার বলেন, “জাহেরই কেতুগ্রাম দেখত। আমাকে তাকাতে হয়নি। সে চলে যাওয়ায় সাংগঠনিক ভাবে আমার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। তবে, এখন কেতুগ্রামের মানুষ শান্তিতেই বাস করছেন।” অনুব্রতরও দাবি, “কেতুগ্রামে আর কোনও সমস্যা নেই। আমার হস্তক্ষেপে মঙ্গলকোটেও শান্তি ফিরেছে।” মঙ্গলকোটের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নজর আছে। আগের চেয়ে মঙ্গলকোট অনেক শান্ত।”

ডালিম শেখের খুন যদিও সে কথা বলছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE