Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রসিকদের মন মজাতে আম দরবার

শুরু দিন ঢুঁ মেরে দেখা গেল, প্রেক্ষাগৃহের এক পাশে রকমারি আমের স্টল। অন্যদিকে হস্তশিল্প, খাবারের স্টল রয়েছে বটে, তবে ভিড় আমের দিকেই।

আমজনতা: পুরুলিয়ার আম মেলায়। ছবি: সুজিত মাহাতো

আমজনতা: পুরুলিয়ার আম মেলায়। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ১৩:১৫
Share: Save:

রবীন্দ্রভবন চত্বরে আম দরবার। শুক্রবার থেকে সেখানে শুরু হয়েছে আম উৎসব। ল্যাংড়া, হিমসাগর, মল্লিকা, আম্রপালি আর আলফানসোর গন্ধে মম করছে বাতাস। কোনওটিই বাক্সবন্দি হয়ে বাইরে থেকে আসেনি। খুঁটিয়ে দেখলে আমের গায়ে পুরুলিয়ার লাল মাটির দেখা মিলতেও পারে। সার দিয়ে রসিকদের জন্য সাজানো রয়েছে সেই সম্ভার। সৌজন্যে উদ্যানপালন দফতর। সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন।

শুরু দিন ঢুঁ মেরে দেখা গেল, প্রেক্ষাগৃহের এক পাশে রকমারি আমের স্টল। অন্যদিকে হস্তশিল্প, খাবারের স্টল রয়েছে বটে, তবে ভিড় আমের দিকেই।হুড়ার কুলাবহাল গ্রামের বাগানের ফলা ল্যাংড়া মেলায় এনেছিলেন লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো। বিকেলের আগেই সব শেষ। বললেন, ‘‘প্রায় এক কুইন্ট্যাল আম অনেছিলাম। নিমেষেই উড়ে গেল।’’ বছর সাত-আষ্টেক আগে বাগান করেছিলেন লক্ষ্মীকান্তবাবু। আর ঝালদা ১ ব্লকের মেট্যালা গ্রামের অনিলচন্দ্র মাহাতো বাগান করেছিলেন বছর দশেক আগে। খানিকটা শখ করেই পরীক্ষামূলক ভাবে বিঘা তিনেক জমিতে গাছ লাগিয়েছিলেন এক সরকারি আধিকারিকের পরামর্শে। অনিলবাবু ছেলে হেমন্ত জানান, পরে বাগানের জমি বেড়েছে। বেড়েছে গাছের সংখ্যাও। মেলায় আম্রপালি, মল্লিকার সঙ্গে তিনি এনেছিলেন হিমসাগর। বললেন, ‘‘তিন কুইন্ট্যাল এনেছিলাম। সামান্যই পড়ে রয়েছে।’’ কেন্দার হরিহরপুর গ্রামের আলম আনসারি মেলায় এনেছিলেন প্রায় তিন ক্যুইন্টাল মল্লিকা ও আম্রপালি। তিরিশ থেকে চল্লিশ টাকা দরে হুহু করে বিকিয়ে গিয়েছে তাঁর পসরা। পড়ে রয়েছে অল্প কিছুটা।

মেলার উদ্বোধন করতে এসে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, ‘‘আমাদের জেলার আম এ বার কলকাতার আম মেলাতেও নজর কেড়েছে। এটা আমাদের বা জেলার চাষিদের সাফল্য। পুরুলিয়ার মাটিতে এমন আম ফলতে পারে, সেটা তাঁরাই করে দেখিয়েছেন।’’ মন্ত্রী, জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্ত, পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস, জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো-সহ অনেকেই এ দিন বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখে চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন। আলফানসো দেখে জেলাশাসক জানতে চান, পুরুলিয়ার মাটিতে এই আমও ফলছে কি না? আধিকারিকেরা জানান, রঘুনাথপুরে পরীক্ষামূলক ভাবে আলফানসো চাষ করা হচ্ছে। উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক সুদীপ ভকত জানান, আলফানসো, হিমসাগর, লক্ষ্মণভোগ, মল্লিকা, আম্রপালি, নীলম, দশেরি, ফজলি, সুরমা-ফজলি মিলিয়ে মোট ১৩টি প্রজাতির আম নিয়ে প্রদর্শনী করা হয়েছে। তার অধিকাংশই জেলার মাটিতে ফলা। বাকিগুলি চাষিদের চেনানোর জন্য রাখা হয়েছে।

পুরুলিয়ায় যে সমস্ত ব্লকের আমের ফলনের জন্য নামডাক রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম পুঞ্চা, কাশীপুর, বরাবাজার, ঝালদা ১ ও ২, বাঘমুণ্ডি প্রভৃতি। ওই ব্লকগুলি থেকে আম আনা হয়েছে মেলায়। আম নিয়ে মেলা থেকে বেরোনোর পথে জয়পুরের বিধায়ক শক্তিপদ মাহাতো বলেন, ‘‘জেলার বাগানের আমের এত সুন্দর গন্ধ! আশা করি রসিকদের মন মজাবে।’’

থলি ভর্তি আম নিয়ে হাসিমুখে বেরনো পথে পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা গোপাল দত্ত, স্বাতী দত্তরা বলেন, ‘‘সটান বাগান থেকে এসেছে এই সমস্ত আম। কোনও কেমিক্যালের কারিকুরি নেই। মন ভরে কিনেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE