ধোঁয়া: পুরসভার সামনে চলছে মশা মারার কাজ। নিজস্ব চিত্র
গরমের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টিতে এসেছিল স্বস্তি। কিন্তু বৃষ্টির জমা জলে জন্মানো মশার উৎপাতে এখন অতিষ্ঠ রঘুনাথপুরের বাসিন্দারা। কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে দু’কথা লিখে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করছেন। যদিও পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, মশার বাড়বাড়ন্ত তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন না। তবে মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় রাসায়নিক ছড়াতে শুরু করেছে পুরসভা।
রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মে মাসের প্রথম থেকে মশা ও মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। কিন্তু গরমের শুরুতেই যাতে মশার প্রকোপ না বাড়ে, সে জন্য নর্দমাগুলোতে তেল ছড়ানোর কাজ শুরু করা হয়েছে।”
রঘুনাথপুর শহর অবশ্য ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গি প্রবণ এলাকা বলে চিহ্নিত নয়। পুরসভার দাবি, অতীতে শহরে একসঙ্গে অনেকে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন এমন ঘটনা ঘটেনি। গত বছর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার জ্বরের উপসর্গ দেখে ডেঙ্গি হয়েছিল বলে সন্দেহ করেছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু ওই ব্যক্তি বাইরে থেকে অসুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরেছিলেন।
তবে রোগ না ছড়ালেও সাবধানতার মার নেই। তাই শহরের মধ্যে জমা আবর্জনায় মশার উৎপাত গরমে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুরসভা। সম্প্রতি মশার উপদ্রবে নাজেহাল হয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কৌশিক সরকার। স্কুল শিক্ষক কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘এই শহরের প্রায় প্রতিটি হাইড্রেনের মধ্যেই জল জমে থাকছে। বিভিন্ন এলাকায় আবর্জনা নিয়মিত সাফাই হয় না। জলাশয়গুলিও সংস্কারের অভাবে দূষিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে গরমের শুরুতেই মশার উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে। গরমের মধ্যেই বিকেলের পর থেকেই দরজা, জানলা কার্যত বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে।”
তবে পুরকর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাইচ্ছে না। পুরপ্রধানের দাবি, জমির অভাবে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করতে না পারায় শহরের আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা সম্ভব হচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু আবর্জনা নিয়মিত সাফাই করে শহরের বাইরে ফেলা হয়।’’ পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ জানাচ্ছে, চলতি মাসের গোড়াতেই রাজ্য থেকে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পুরসভায় চলে এসেছে।
সেই তহবিল থেকে মশা মারার রায়ায়নিক তেল ও ফগিং অয়েল কেনা হয়েছে। পুরসভার ১৩টি ওয়ার্ডের জন্য দু’টি ফগিং মেশিন অর্থাৎ মশা মারার কামান আছে। অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে থেকে ১২জনকে নিয়ে দু’টি দলে ভাগ করে নর্দমায় তেল ছড়ানো ও ছোঁয়া দেওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে।
স্থির হয়েছে, জলাশয়, হাইড্রেন, আবর্জনা জমে থাকে এই ধরনের এলাকায় কর্মীরা গিয়ে মশা মারার তেল ছড়াবে। প্রয়োজনে রাসায়নিক ধোঁয়া দেবে।
পুরসভা সূত্রের খবর, গরমের শুরুতে ও বর্ষার সময়ে মশার উপদ্রব বেশি দেখা যায়, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেদিয়াপাড়া, ৮ নম্বরের চাঁদাগড়িয়া, ১১ নম্বরের তেনজিং গ্রাউন্ড বস্তি ও ১৩ নম্বরের ব্লক ডাঙা বস্তি ও বুন্দলা বস্তিতে। ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের মশা নিয়ন্ত্রণে কী করা উচিত, তা নিয়ে সচেতন করতে প্রচারপত্র ছাপিয়ে ফেলেছে পুরসভা। পরবর্তী পর্যায়ে ওই এলাকায় ঢোল বাজিয়ে ও মাইকে প্রচার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পুরপ্রধান জানান, পুরসভার স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মীরা বাড়িতে প্রচারপত্র বিলি করার পাশাপাশি মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কী করা উচিত তা নিয়ে সচেতন করার চেষ্টা চালাবেন। তবে রঘুনাথপুরের১৩টি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা কমবেশি পঁচিশ হাজার হলেও পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের ফিল্ড ওয়ার্কার মাত্র ১৬ জন। পুরসভা সূত্রেই জানা যাচ্ছে, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি এক হাজার বাসিন্দা বা দুশো পরিবার পিছু একজন স্বাস্থ্যকর্মী থাকার দরকার।
সেই তুলনায় কর্মী সংখ্যা কম হওয়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ কতটা করতে পারবে পুরসভা, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy