Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
আড়শা পঞ্চায়েত সমিতি

সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা

বস্তুত তৃণমূল পরিচালিত আড়শা পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা নতুন নয়। কৌশল্যাদেবী সভাপতি হন আগের সভাপতি পুষ্পরানি মাহাতোকে অনাস্থায় অপসারিত করেই।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আড়শা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ১১:১০
Share: Save:

ফের অনাস্থা এল আড়শা পঞ্চায়েত সমিতিতে। এ বার বামফ্রন্টের সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলীয় সভাপতির অপসারণ চাইলেন তৃণমূলেরই কয়েকজন সদস্য।

তৃণমূলের পাঁচ ও বামফ্রন্টের ছ’জন সদস্য পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৌশল্যা সহিসের বিরুদ্ধে শুক্রবার অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন মহকুমা প্রশাসনের কাছে। তাঁরা অভিযোগ করছেন, কৌশল্যাদেবী সভাপতি পদের অপব্যবহার করে নিজের ইচ্ছা মতো একনায়কতন্ত্র কায়েম করে পঞ্চায়েতের আইন বহির্ভূত ভাবে ব্যক্তি স্বার্থে সমিতি পরিচালনা করছে। মহকুমাশাসক পুরুলিয়া (সদর) ইন্দ্রদেব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আড়শার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির অপসারণ চেয়ে কয়েকজন সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। প্রস্তাব খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

বস্তুত তৃণমূল পরিচালিত আড়শা পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা নতুন নয়। কৌশল্যাদেবী সভাপতি হন আগের সভাপতি পুষ্পরানি মাহাতোকে অনাস্থায় অপসারিত করেই। পুষ্পরানিদেবী সভাপতি হওয়ার দেড় বছরের মাথায় তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা এসেছিল। সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও একাধিকবার অনাস্থা এসেছে। প্রথমে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন অশোককুমার মাঝি। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে অপসারিত করা হয়। সেই সময়ে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন সুশীলা মাহাতো।

পরে ফের সুশীলাদেবীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়। জুলাই মাসে সুশীলাদেবীকে সরিয়ে ফের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হন অশোকবাবু। এক মাস পরে এ বার অনাস্থা এল সভাপতির বিরুদ্ধে। পঞ্চায়েত সমিতি ও তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, টেন্ডার কমিটি গঠন নিয়ে সভাপতির সঙ্গে কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যের মতান্তরের প্রেক্ষিতেই এ বার অনাস্থা এসেছে। তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্ব চেয়েছিলেন সমিতির টেন্ডার কমিটির সদস্য হোক পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ অশোককুমার মাঝি এবং বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ অঘোর মাহাতো।

আড়শার ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনন্দ মাহাতোর দাবি, ‘‘টেন্ডার কমিটিতে কোন দুই কর্মাধ্যক্ষ থাকবেন, তা নিয়ে সভাপতির মতামত চাওয়া হয়েছিল। দলকেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিলেন সভাপতি। সেই মতো স্থির হয়েছিল, পূর্ত এবং বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষেরা টেন্ডার কমিটিতে থাকবেন। কিন্তু কমিটি তৈরি হওয়ার পরে দেখা গেছে অন্য দুই কর্মাধ্যক্ষকে কমিটিতে রেখেছেন সভাপতি। দলেরই কয়েক জন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যেরা সভাপতির আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে অনাস্থা এনেছেন।” বিষয়টি তিনি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন।

তবে আনন্দবাবুর দাবি মানতে নারাজ কৌশল্যদেবী। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘টেন্ডার কমিটিতে কোন দুই কর্মাধ্যক্ষ থাকবেন, তা নিয়ে দল কারও নামই প্রস্তাব করেনি। বিধি অনুযায়ী, অর্থের স্থায়ী সমিতিতে যে দুই কর্মাধ্যক্ষর নাম স্থির হয়েছিল, তাঁরাই টেন্ডার কমিটির সদস্য হয়েছেন। যাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ হয়নি, তাঁরাই অনাস্থা এনেছেন।” ২৩ আসনের আড়শা পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল জিতেছিল ১৩টি আসনে। পরে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট থেকে দুই সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তৃণমূলের সদস্য মোট ১৫। বাকি আটটি আসন আছে বিরোধীদের দখলে। এই প্রসঙ্গ তুলে কৌশল্যাদেবীর দাবি, তৃণমূলের ১৫ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র পাঁচ জন অনাস্থায় সই করেছেন। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য তাঁর পক্ষেই আছেন। তিনি বলেন, ‘‘দলীয় নীতি ও আদর্শ মেনে আমি কাজ করছি। পুরো ঘটনা দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”

গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা আনা যাবে না বলে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার সতর্ক করলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। এ নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE