Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অনলাইন জালিয়াতি, এক বছরে ১২ মামলা

অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে কোনও দিনই এটিএম কার্ডের পিন বা সিভিভি নম্বরের মতো গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য কোনও ব্যাঙ্কই চায় না। তা চাওয়ার কোনও কারণও নেই।

বার্তা: গ্রাহকদের সচেতন করতে পুলিশের লিফলেট। নিজস্ব চিত্র

বার্তা: গ্রাহকদের সচেতন করতে পুলিশের লিফলেট। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৬
Share: Save:

অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে কোনও দিনই এটিএম কার্ডের পিন বা সিভিভি নম্বরের মতো গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য কোনও ব্যাঙ্কই চায় না। তা চাওয়ার কোনও কারণও নেই। কার্ডে লেখা নির্ধারিত দিনের আগে এটিএমের মেয়াদও ফুরোতে পারে না। তার পরেও ব্যাঙ্কের হেড অফিসের কর্মী বা খোদ ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের পরিচয় দিয়ে ফোন করে অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসলে ওই সব তথ্যই বিনা বাক্যে তুলে দিচ্ছেন গ্রাহকদের একাংশ। আর গ্রাহকদের সেই নির্বুদ্ধিতার সুযোগ নিয়ে মিনিট কয়েকের মধ্যেই অ্যাকাউন্ট থেকে বড় অঙ্কের টাকা গায়েব করে দিচ্ছে দুষ্কৃতী-চক্র!

সেই ফাঁদে পা দিয়ে সদ্য লাখ খানেক টাকা খুইয়েছেন দুবরাজপুরের এক মহিলা। মাস দুয়েক আগে একই কায়দায় খয়রাশোল স্কুলের এক শিক্ষকের প্রায় ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সম্প্রতি টাকা লোপাট হয়েছে বোলপুর ও রামপুরহাট এলাকার দুই যুবকেরও। প্রতিটি ঘটনাই জেনেছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। প্রতারণা ও সাইবার ক্রাইমের ধারা দিয়ে পুলিশ মামলাও রুজু করেছে। জেলা পুলিশের তথ্য বলছে, মার্চ ২০১৬ থেকে মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত বীরভূমে এমন অপরাধের সংখ্যা মোট ১২। কিন্তু ঘটনার নেপথ্যে থাকা দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা, ব্যবস্থা নেওয়া বা টাকা ফেরত পাওয়ার নজির নেই। সচেতনতার পাঠ নিয়ে বন্ধ হচ্ছে না গ্রাহকদের এমন বোকা বনে যাওয়াও।

কী ভাবে চলে গ্রাহকদের বোকা বানানোর এই কারবার?

জেলা পুলিশের সূত্রের খবর,

প্রথমেই ভুয়ো নথি দিয়ে বা অন্য কারও নথি জাল করে তোলা হয় সিম। সেই সিম থেকেই ফোন করে টার্গেট তোলে এই চক্র। ফলে মোবাইল নম্বরটি পুলিশ ট্র্যাক করতে পারলেও প্রকৃত ব্যবহারকারীকে পুলিশ কোনও ভাবেই চিহ্নিত করতে পারে না। এ দিকে, গ্রাহকদের থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় করার পরে দুষ্কৃতীরা হয় বড় অঙ্কের অনলাইন কেনাকাটা করে নয়তো বিভিন্ন ই-ওয়ালেটে (পেটিএম, এমপয়সা, এয়ারটেল মানি, আইডিয়া মানি, ওলা মানি, য়ুবর মানি, আইসিআইসিআই, অক্সিজেন ওয়ালেট ইত্যাদি) টাকা ট্রান্সফার করে নেয়। বহু ক্ষেত্রে সেই ট্রান্সফারের পরে দুষ্কৃতীরা অনলাইনে কেনাকাটা করে নেয়। পুলিশ বলছে, এ ক্ষেত্রেও সিমের প্রকৃত ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করা মুশকিল। ওয়ালেটের কাছে আইপি অ্যাড্রেস চাইলেও ঘুরে সেই সিম নম্বরই পাওয়া যাবে।

এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হয়। সেই দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টটি আবার তদন্তের পরে বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ছাত্র বা নিরীহ কোনও ব্যক্তির নথি ব্যবহার করে খোলা হয়েছিল। কখনও কমিশন দেওয়ার শর্তে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে চলে এই লোক ঠকানোর কারবার। ফলে অ্যাকাউন্টের হদিস মিললেও মূল অপরাধী আড়ালেই থেকে যায়।

তা হলে উপায়?

পুলিশের বক্তব্য, একটাই উপায়— কোনও অবস্থাতেই নিজের ওই গোপন তথ্য কাউকে না দেওয়া। কারও ফোন বা মএসএমএস পেয়ে কোনও সংশয় তৈরি হলে সরাসরি ব্যাঙ্কে এসে খোঁজ করা। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘প্রত্যেক গ্রাহককে ব্যাঙ্ক থেকে স্পষ্ট বলা হয়, কাউকে এটিএমের পিন নম্বর দেবেন না। এটা একটা সুরক্ষিত সিস্টেম। তার পরেও গ্রাহক যদি সেই সুরক্ষা নিজেই ভাঙেন, তাকে আর যা-ই হোক প্রতারণা বলাই উচিত নয়।’’ এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে ইতিমধ্যেই নানা পদক্ষেপ করেছে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলছেন, ‘‘আমাদের তরফে গত দুর্গাপুজোয় মণ্ডপে মণ্ডপে এ ব্যাপারে নির্দেশিকা দেওয়া হ্যান্ডবিল বিলি করা হয়েছিল। ব্যাঙ্কও তাদের লেনদেন স্লিপের পিছনে এই সতর্কতা আঞ্চলিক ভাষায় দিলে ভাল হয়।’’

তাঁর পরামর্শ, ঘটনার অব্যবহিত পরেই গ্রাহক ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট নিয়ে পুলিশের কাছে আসলে বহু ক্ষেত্রেই ওই লেনদেনকে অবৈধ চিহ্নিত করে বাতিল করা সম্ভব হয়। যে কোনও কারণেই কারণ হোক না কেন, গ্রাহকদের মধ্যে যে এ নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে, তা মানছেন জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দীপ্তেন্দ্রনারায়ণ ঠাকুরও। তিনি মানছেন, ‘‘এ নিয়ে সচেতনতা জরুরি। ব্যাঙ্কের তরফে চেষ্টাও করা হয়। তবে তুলনায় তা যথেষ্ট নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Online Defrauding
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE