Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বাঁকুড়া মেডিক্যাল

মুমূর্ষু রোগী ভর্তি নিয়ে টানাপড়েন

মুমূর্ষু রোগীকে যেখানে কাগজপত্রে লেখালেখি না করা পর্যন্ত আইসিসিইউ-তে ভর্তি করা যাবে না বলা হচ্ছিল, বাঁকুড়া মেডিক্যালের কর্তাদের কাছে সভাধিপতির ফোন যেতেই নিমেষে তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হল।

চিকিৎসাধীন: বাঁকুড়া মেডিক্যালে গদাধর দুবে। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসাধীন: বাঁকুড়া মেডিক্যালে গদাধর দুবে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০৮:০০
Share: Save:

যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে রোগী। কিন্তু কাগজপত্র তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছিল না। তা দেখে রূপালি পর্দার মুন্নাভাই সরব হয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে নিয়মের কড়াকড়িতে এখনও যে হাসপাতালে আসা রোগীদের ভুগতে হচ্ছে, রবিবার তেমনই অভিযোগ উঠল বাঁকুড়ায়।

মুমূর্ষু রোগীকে যেখানে কাগজপত্রে লেখালেখি না করা পর্যন্ত আইসিসিইউ-তে ভর্তি করা যাবে না বলা হচ্ছিল, বাঁকুড়া মেডিক্যালের কর্তাদের কাছে সভাধিপতির ফোন যেতেই নিমেষে তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হল। যদিও প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনায় কোনও দোষ ধরা পড়েনি বলেই দাবি করেছেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান।

ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন? রোগীর আত্মীয়েরা জানাচ্ছেন, রবিবার সকালে হঠাৎই বুকের ব্যাথায় আক্রান্ত হন মেজিয়ার বেলবরিয়া গ্রামের প্রৌঢ় গদাধর দুবে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁর পরিজনেরা গাড়ি ভাড়া করে বাঁকুড়ার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে আসেন। গদাধরবাবুর ছেলে বিপ্লব দুবে এ দিন বাঁকুড়া মেডিক্যালের লোকপুর ইউনিটের আইসিসিইউ বিভাগের সামনে দাঁড়িয়া জানান, নার্সিংহোমে ইসিজি করার পরেই রোগীর অবস্থা খারাপ জানিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন সেখানকার চিকিৎসক।

বিপ্লববাবুর কথায়, ‘‘গোবিন্দনগর ক্যাম্পাসের জরুরি বিভাগ রোগীকে পরীক্ষা করে সিসিইউ-তে ভর্তি করতে বলে। সিসিইউ-তে আধ ঘণ্টা ধরে রোগীকে ফেলে রাখার পরে জানানো হয়, লোকপুরের আইসিসিইউ-তে নিয়ে যেতে হবে। আমরা রোগীকে নিয়ে আইসিসিইউ-তে গেলে সেখান থেকে ফের বলা হয়, গোবিন্দনগরের ক্যাম্পাসের জরুরি বিভাগে গিয়ে কাগজপত্র ঠিক করিয়ে আনতে হবে। কাগজ ঠিক করিয়ে না আনা পর্যন্ত রোগীকে ভর্তি নেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেন উপস্থিত চিকিৎসকেরা।’’

রোগী পক্ষের দাবি, বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি নিয়ে যখন এই টানাপড়েন চলছে, তখন রোগী বুকের অসহ্য ব্যথায় কাতর হয়ে চিৎকার করে চলেছেন। ঠিক সেই সময়ই রোগীর ছেলে ফোন করে পুরো ঘটনাটি জানান বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকে। সব শুনে সভাধিপতি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও জেলাশাসককে ফোনে বিষয়টি জানান। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শেষে আইসিসিইউ-তে ভর্তি করে নেন চিকিৎসকেরা। বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘সভাধিপতি যদি না থাকতেন, তাহলে হয়তো হাসপাতালের নিয়ম পালন করতে গিয়ে সময় নষ্ট করে বাবার চিকিৎসাই করাতে পারতাম না।’’

পুরো ঘটনাটিকে অমানবিক বলে উল্লেখ করেছেন সভাধিপতি। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার রোগীর পরিষেবায় ডাক্তারদের মানবিক হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। অথচ একশ্রেণির চিকিৎসকের মানসিকতার বদল হচ্ছে না। বুকের ব্যথায় কাতর এক হৃদ্‌রোগীকে রোগীকে ভর্তি না নিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে আনতে বলছেন ডাক্তাররা!’’ তিনি যুক্ত করেন, ‘‘আমি গোটা ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি হাসপাতালের অধ্যক্ষকে।’’

যদিও ভর্তি নিতে না চাওয়া বা চিকিৎসা না করে রোগীকে ফেলে রাখার অভিযোগ মানতে চাইছেন না মেডিক্যালের অধ্যক্ষ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিসিইউ থেকে আইসিসিইউ-তে রোগীকে বদলি করার সময় একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল মাত্র। তবে রোগীকে আইসিসিইউ-তে নিয়ে আসা মাত্রই বিভাগীয় প্রধান নিজে রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা করেন।’’ তাঁর দাবি, আইসিসিইউ কর্তৃপক্ষ রোগীর চিকিৎসা শুরু করার পরেই রোগীর আত্মীয়দের জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তির কাগজপত্র ঠিক করে আনতে বলেছিলেন। যদিও গোটা ঘটনায় রোগীর আত্মীয়দের তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ জানানো হয়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন অধ্যক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE