Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ফাল্গুনী-স্মরণে উদাসীন প্রশাসন, ক্ষুব্ধ অনুরাগীরা

তাঁর লেখা উপন্যাস অবলম্বনে উওমকুমার–সুচিত্রা সেন অভিনীত ‘শাপমোচন’ সিনেমা তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কিন্তু, মাসিকপত্র ‘বঙ্গলক্ষ্মী’র সম্পাদক তথা বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক তারাদাস মুখোপাধ্যায় কার্যত বিস্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছেন। এমনকী, ব্রাত্য থেকে গিয়েছেন নিজের জন্মস্থানেই!

অরুণ মুখোপাধ্যায়
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

তাঁর লেখা উপন্যাস অবলম্বনে উওমকুমার–সুচিত্রা সেন অভিনীত ‘শাপমোচন’ সিনেমা তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কিন্তু, মাসিকপত্র ‘বঙ্গলক্ষ্মী’র সম্পাদক তথা বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক তারাদাস মুখোপাধ্যায় কার্যত বিস্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছেন। এমনকী, ব্রাত্য থেকে গিয়েছেন নিজের জন্মস্থানেই!

তারাপদবাবুকে অবশ্য ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় নামেই চেনে বাইরের জগৎ। ওই নামে একের পর এক উপন্যাস লিখে এক সময় কলেজ স্ট্রিটের বেস্ট সেলার হয়েছিলেন তিনি। জন্ম বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকের নাকড়াকোন্দা গ্রামে। তাঁর মাটির বাড়ি বর্তমানে ভগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটি অংশে অবশ্য ‘ফাল্গুনী স্মৃতি পাঠাগার’ হয়েছে। এটুকুই যা সান্ত্বনা। কিন্তু সাহিত্য অনুরাগীদের আক্ষেপ, খয়রাশোলে দু’জন বিখ্যাত সাহিত্যিকের জন্ম। ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় এবং শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়। শৈলজানন্দের বাড়ি রূপুসপুর গ্রামে। সেখানে তাঁর নামে একটি হাইস্কুল গড়ে উঠেছে। কিন্তু ফাল্গুনী তাঁর নিজের এলাকাতেও যেন এখনও ‘অপরিচিত’ই রয়ে গিয়েছেন। ভাড্ডি রামের সাংস্কৃতিক কর্মী তথা কবি অসীম শীলের কথায়, ‘‘আগের ও বর্তমান রাজ্য সরকার ফাল্গুনীবাবুর নামটাই বোধহয় জানে না। তা হলে ওঁর স্মৃতির জন্য কিছু একটা প্রকল্প করা যেত।’’

কিছুই যে হয়নি, তা নয়। বাম সরকার খয়রাশোলে ফাল্গুনী-শৈলজা কলেজ তৈরি করেছে। কিন্তু তার বেশি কিছু হয়নি। কলেজের টিচার ইনচার্য নির্মল সাহু বলছেন, ‘‘ওই লেখকদের জন্মদিন পালিত হয় কলেজে। গ্রন্থাগারে ওঁদের কিছু বইও আছে। তবে সেগুলো পড়ার আগ্রহ কারওই নেই।’’ ফাল্গুনীকে নিয়ে চর্চা করেন নাকড়াকোন্দা হাইস্কুলের শিক্ষক তথা এলাকার বাসিন্দা বিকাশ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর লেখা কিশোরদের অ্যাডভেঞ্চারের গল্পগুলি অবশ্যই স্কুলের পাঠ্যসূচিতে রাখা উচিত।’’

ফাল্গুনীর ‘জীবন ও সাহিত্য’ নিয়ে গবেষণা করছেন বীরভূমের বড়শাল হাইস্কুলের শিক্ষক প্রভাত সিকদার। তিনি এবং তাঁর গাইড হেতমপুর কলেজের অধ্যাপক তপন গোস্বামী জানান, ফাল্গুনীর একমাত্র মেয়ে অচিরার নাম রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর বিয়ে হয়েছিল কলকাতায়। তিনি প্রয়াত হয়েছেন। অচিরাদেবীর এক মেয়ে আছেন। কিন্তু তঁর নাম-ঠিকানা এলাকার কেউ-ই জানেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফাল্গুনীর শেষ জীবনটা কেটেছে নাকড়াকোন্দা গ্রামে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ও জোতিষ চর্চা করে।

অনুগামীদের দাবি, ফাল্গুনীর স্কুলে কিংবা এলাকার কোনও জায়গায় তাঁর একটি মূর্তি স্থাপন করা হোক। প্রতি বছর প্রশাসনিক ভাবে তাঁর জন্মদিনে একটি অনুষ্ঠানও হোক। এলাকার বিডিও তারকনাথ চন্দ্র অবশ্য বলেন, ‘‘ওঁর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না। স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্যোগ নিলে নিশ্চয় সাহায্য করবো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Falguni Mukhopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE