Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জোড়া খুনে ধৃত দুষ্কৃতী

নানা অপরাধ মূলক কাজের জন্য মাঝেমধ্যেই জেলে থাকতে হতো জিকরিয়াকে। সম্প্রতি বোলপুর থানা এলাকায় একটি বেআইনি অস্ত্র কারবারের মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে যায় জিকরিয়া। কিন্তু তার সন্দেহ ছিল, তার অনুপস্থিতির সুযোগে অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন চুরকি। সেই রাগেই মা-ছেলেকে খুনের পরিকল্পনা করে সে।

বন্দি: শনিবার দুবরাজপুর আদালতে শেখ জিকরিয়া। নিজস্ব চিত্র

বন্দি: শনিবার দুবরাজপুর আদালতে শেখ জিকরিয়া। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০৩:৫০
Share: Save:

নিহত মা ও ছেলের পরিচয় জানার সুবাদেই জোড়া খুনের মুল অভিযুক্তকে ধরল বীরভূমের দুবরাজপুর থানার পুলিশ। ধৃত শেখ জিকরিয়ার বাড়ি পাড়ুই থানা এলাকার যাদবপুরে। দাগি অপরাধী জিকরিয়াকে ধরা হয় শুক্রবার রাতে।

বৃহস্পতিবার সকালে দুবরাজপুরের নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতালের অদূরে, পাহাড়িয়া জঙ্গল থেকে এক অজ্ঞাতপরিচয় মহিলা ও বালকের দেহ উদ্ধারকে ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ। কিন্তু সবার আগে দরকার ছিল নিহতদের পরিচয় জানার। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে নিহত মহিলার নাম চুরকি মুর্মু (৩০)। বালকটি তাঁর ছেলে সোমনাথ মুর্মু (১১)। চুমকিদেবীর শ্বশুরবাড়ি পাড়ুইয়ের রাইপুরে। পুলিশ সূত্রের দাবি, স্বামী বেঁচে থাকতেই লাগোয়া যাদবপুর গ্রামের বিবাহিত জিকরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন চুরকি। জিকরিয়ার ভরসায় শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বছর কয়েক আগে শান্তিনিকেতন থানা এলাকায় ছেলেকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন বধূটি। স্বামীর মৃত্যর পরেও চুরকি-জিকরিয়ার সম্পর্ক অটুট ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তাতে ফাটল দেখা দেয়।

নানা অপরাধ মূলক কাজের জন্য মাঝেমধ্যেই জেলে থাকতে হতো জিকরিয়াকে। সম্প্রতি বোলপুর থানা এলাকায় একটি বেআইনি অস্ত্র কারবারের মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে যায় জিকরিয়া। কিন্তু তার সন্দেহ ছিল, তার অনুপস্থিতির সুযোগে অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন চুরকি। সেই রাগেই মা-ছেলেকে খুনের পরিকল্পনা করে সে।

ঘর: পারুলডাঙায় চুরকির ঘর। নিজস্ব চিত্র

জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমারের দাবি, ‘‘সোমনাথকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বুধবার শান্তিনিকেতন থানা এলাকা থেকে মা ও ছেলেকে নিয়ে বেরিয়েছিল জিকরিয়া। পর দিন জঙ্গলে দেহ মেলে দু’জনের। ঠিক কী ভাবে খুন করা হয়েছে, তা দেখা হচ্ছে।’’ শনিবার দুবরাজপুর আদালতের বিচারক ধৃতকে ছ’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

পারুলডাঙার যে এলাকায় ওই আদিবাসী মহিলা থাকতেন বলে পুলিশ জেনেছে, সেখানে এ দিন গিয়ে চুরকি সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। একটি একচালা মাটির বাড়ি দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, ‘‘এলাকায় ওই মহিলাকে সবাই ‘দেয়াসি মা’ বলত। উনি ওই বাড়িতে শনি, মঙ্গলবার আসতেন। মনসা মূর্তি বসিয়েছিলেন। অনেকে লোক আসত ওঁর কাছে।’’ জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জেরায় তারা জেনেছে, গত বুধবার পারুলডাঙা থেকে মোটরবাইকে চাপিয়ে মা-ছেলেকে বোলপুর, ইলামবাজার হয়ে দুবরাজপুরে নিয়ে যায় জিকরিয়া। রাতে তারা দুবরাজপুরের একটি ধাবায় খাওয়াদাওয়া করে।

বৃহস্পতিবার দুবরাজপুরের পাহাড়িয়া জঙ্গলে মেলে মা-ছেলের লাশ। দু’জনের পায়েই চটি ছিল। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘জিকরিয়া পুরনো অপরাধী। তাই পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য যতটা চেষ্টা করার, করেছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE