Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গণপিটুনি কাণ্ডে ধৃত দশ জন

শুক্রবার রাতভর তল্লাশি চালিয়ে তাঁদের ধরা হয়। ধৃতদের শনিবার বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হয়। আদালতের এসিজেএম আনন্দ দুলাল সিংহ মহাপাত্র তাদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ঘটনাচক্রে ওই পড়ুয়া সৌম্যপ্রসাদ দে-কে এ দিনই দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আদালতে: বিষ্ণুপুরে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র

আদালতে: বিষ্ণুপুরে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০২:০৬
Share: Save:

ছেলেধরা সন্দেহে বিএড পড়ুয়াকে গণপিটুনি দেওয়ার অভিযোগে পাঁচ মহিলা-সহ দশ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শুক্রবার রাতভর তল্লাশি চালিয়ে তাঁদের ধরা হয়। ধৃতদের শনিবার বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হয়। আদালতের এসিজেএম আনন্দ দুলাল সিংহ মহাপাত্র তাদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ঘটনাচক্রে ওই পড়ুয়া সৌম্যপ্রসাদ দে-কে এ দিনই দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিষ্ণুপুর শহরে হাঁড়িপাড়া দিয়ে সাইকেলে যাওয়ার সময় সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় দলমাদল রোডের বাসিন্দা সৌম্যর সাইকেলের ধাক্কায় এক শিশু পড়ে যায়। অভিযোগ, সৌম্য শিশুটিকে মাটি থেকে তুলতে গেলে উল্টে তাকেই ছেলেধরা বলে সন্দেহ করে এলাকার লোকজন চড়াও হন। বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে সৌম্যকে বেদম মারধর করা হয়। পুলিশই তাঁকে প্রায় অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে।

ওই ঘটনায় নাম ধরে ধরে অভিযোগ করা হলেও পুলিশ কেন গ্রেফতার করছে না, এ নিয়ে বিষ্ণুপুরের বাসিন্দাদের অনেকেই মিছিল করে থানায় দাবি জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও দ্রুত গ্রেফতারির দাবিতে তাঁরা চিঠিও দেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সৌম্যর পরিবারও। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) লাল্টু হালদার অবশ্য আশ্বাস দিয়েছিলেন, নিরীহ লোক যাতে হেনস্থা না হন, সে জন্য তাঁরা একটু সময় নিয়ে প্রকৃত দোষীদেরই গ্রেফতার করতে চাইছেন।

অবশেষে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার স্বস্তি পেয়েছেন সৌম্যর পরিজনেরা। শনিবার সৌম্যর বাবা তীর্থপ্রসাদ দে বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাজে আমরা খুশি। আর কেউ দোষী থাকলে, তাদেরও এ বার ধরা হোক। এক জনও যেন বাইরে না থাকে। আমার ছেলের মতো আর কাউকে যেন ওই রকম লোকের হাতে গুজবে বেঘোরে মার না খেতে হয়।’’ তিনি জানান, সৌম্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেদিন তাঁর সাইকেলে ধাক্কা খাওয়া বাচ্চাটা কেমন আছে, তা বাবার কাছে জানতে চেয়েছেন সৌম্য।

এ দিন কিছুটা ছন্দে ফিরেছে হাঁড়িপাড়াও। দোকান খুলেছে, মহল্লায় একে একে পুরুষরাও ফিরছেন। অম্বুবাচী পুজোর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) বলেন, ‘‘গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার বাঁকুড়া সদর থানার ওসি-র সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, ধৃতেরা হলেন সানু দাস, মুন্না দাস, নিমাই সাঁতরা, মিতা মাঝি, চন্দনা সাঁতরা, রিঙ্কু সাঁতরা, শিল্পা মাঝি, কালু মাঝি, গৌতম সাঁতরা, কাঞ্চন সাঁতরা। হাঁড়ি পাড়ার বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদ করে গণপিটুনিতে জড়িত আরও নাম পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের খোঁজও শুরু হয়েছে।

সৌম্য পাশে দাঁড়িয়ে সুবিচার চেয়ে যাঁরা বিষ্ণুপুরের পথে নেমেছিলেন, তাঁরা জানাচ্ছেন, দেরিতে হলেও অভিযুক্তেরা ধরা পড়ায় স্বস্তি বোধ করছেন। প্রশাসনের উপর তাঁদের ভরসা ফিরছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE