বিজ্ঞপ্তি: ঝালদার একটি মন্দিরে। নিজস্ব চিত্র
ঝালদায় মন্দিরের দরজায় লেখা— ‘প্রণামী হিসেবে খুচরো দেবেন না’। কেন এমন নির্দেশ? পুরোহিত শম্ভুনাথ আচার্য বলেন, ‘‘খুচরো বাজারে চালানো মুশকিল হচ্ছে। তাই প্রণামী হিসেবে না দিতে বলা হয়েছে।’’ সেই কবে ভারতচন্দ্র লিখে গিয়েছিলেন, ‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়’, তার আর এক দফা হাতেনাতে নজির মিলল হালের ‘খুচরো-বিপত্তি’-তে।
সম্প্রতি মন্দিরে গিয়ে দেখা গেল, পুজো দিয়ে বেরোচ্ছেন ঝালদা পুর শহরের বাসিন্দা চণ্ডীচরণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই পুজো দিতে আসছি। এমন নোটিস দেখে অবাক হয়েছিলাম। পুরোহিত বললেন, খুচরো না দিলেই ভাল হয়। সত্যি, খুচরো নিয়ে আমাদেরও ঝামেলা কম হচ্ছে না।’’ পুরশহরের আর এক বাসিন্দা গীতা চট্টোপাধ্যায়ও মন্দিরে পুজো দিতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘খুচরো নিয়ে মুশকিল হচ্ছিল ঠিকই। তবে মন্দিরেও যে এমন নোটিস টাঙানো হবে ভাবিনি।’’
খুচরো নিয়ে গড়িমসি এখনও লেগেই রয়েছে পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায়। ক্রেতা বিক্রেতা— সবাই গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ। পুরুলিয়ার বাসিন্দা পরিমল দাস বলেন, ‘‘বাজারে এক টাকার ও দু’টাকার কয়েন অচল বলে চাউর হয়ে গিয়েছে।’’
অল্প দূরত্বে যেতে খুচরো দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতেন যে টোটো চালকেরা, তাঁদের অনেকেই এখন কয়েন দেখলে আঁতকে উঠছেন।
পুরুলিয়া শহরের হাসপাতাল মোড়ে সংবাদপত্র বেচেন মহম্মদ জাকির।
তাঁর কথায়, ‘‘খুচরো নিয়ে খুবই মুশকিলে পড়েছি আমরা। কাগজের দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা। সবাই কাগজ নিয়ে খুচরো দিয়ে যাচ্ছেন। তিন টাকার জন্য তো আর দশ টাকার নোট চাওয়া যায় না সব সময়ে। এ দিকে আমাদের কাছে কয়েন জমে যাচ্ছে। সেই খুচরো আর কোথাও চালাতে পারছি না।’’
শহরের আর এক সংবাদপত্র বিক্রেতা অসীম হালদারের কথায়, ‘‘খুচরো নিলেও সমস্যা, আবার না নিলেও সমস্যা। আমাদের কথা কেউ চিন্তা করছে না।’’ ঝালদার পুরসভা সংলগ্ন চায়ের দোকানদার রঞ্জিত কান্দু বলেন, ‘‘আমার খুচরো নিয়েই কারবার। খদ্দেরের থেকে খুচরো নিয়ে চা বেচছি। কিন্তু সেগুলো নিয়ে চা পাতা, চিনি এই সব কিনতে গেলে দোকানদার আর নিতে চাইছে না।’’
আনাজের ব্যবসায়ীদের অবস্থাও একই রকমের। পুরুলিয়া শহরে গ্রাম থেকে আনাজ বেচতে আসেন সুবল মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসা করি বলে খুচরো নিতে হয়। কিন্তু আমরাও তো গেরস্ত। কিছু কিনতে গেলেই তখন ঝকমারি হচ্ছে।’’
কাশীপুরের পেট্রোল পাম্প ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলের দাবি, খুচরো নিয়ে এখন অন্য রকমের গড়িমসি করছে ব্যাঙ্ক। সোজাসাপটা নেওয়া হবে না বলছেন না কেউ। বলা হচ্ছে, মোট যত টাকা জমা করা হবে, তার একটা নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত খুচরো দেওয়া যাবে।
এই অভিযোগ শুনে জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার শ্রীকান্তমোহন মাহাতো বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক খুচরো নিলেও সেই খুচরো রিজার্ভ ব্যাঙ্কে পাঠাতে অনেক ঝকমারি হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তো গুনে খুচরো নেয় না। অনেক খুচরো ওজন করে লেনদেন করা হয়। ব্যাঙ্কের পক্ষে সব কাজ সামলে, সমস্ত নিয়মকানুন মেনে সেই ব্যবস্থা করা প্রায় অসম্ভব। তাই সমস্যা হচ্ছে।’’
এসডিও (রঘুনাথপুর)-এর সঙ্গে এই ব্যাপারে বৈঠক হয়েছে বলে জানান তিনি। সেখানে এলাকায় গিয়ে প্রচার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিডিও-দের। কিন্তু খোদ ব্যাঙ্কে সমস্যার সুরাহা না হলে তাতে কাজ কতটা হবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন জেলার অনেকেই।
এসইউসি-র ঝালদা লোকাল কমিটির নেতা তপন রজক বলেন, ‘‘খুচরো পয়সার সঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতির গভীর যোগ রয়েছে। আমরা ঝালদার মহকুমাশাসকের কাছে বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছি। কাজ না হলে পথে নামতে বাধ্য হব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy