Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রাঙামাটির কড়চা

তাঁর স্বভাব চুপটি করে অন্যের কথা শোনা। আর সেই শুনতে শুনতেই গল্পের জাল বুনে ফেলা। তিনি গল্পকার মুক্তি মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি শান্তিনিকেতনের পেনসিল বুকস থেকে প্রকাশিত হয়েছে এই প্রবীণ গল্পকারের গল্প সংকলন ‘মন’।

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

গল্পের ‘মন’

তাঁর স্বভাব চুপটি করে অন্যের কথা শোনা। আর সেই শুনতে শুনতেই গল্পের জাল বুনে ফেলা। তিনি গল্পকার মুক্তি মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি শান্তিনিকেতনের পেনসিল বুকস থেকে প্রকাশিত হয়েছে এই প্রবীণ গল্পকারের গল্প সংকলন ‘মন’। শোভন প্রচ্ছদটি অর্পণ মুখোপাধ্যায়ের করা। এক ডজন গল্পের সংকলনের এমন নাম কেন? লেখক ভূমিকায় লিখছেন, ‘‘আসলে, মানুষের মন বড় অবুঝ। তাই হয়তো জীবনের বাঁকে বাঁকে প্রায় প্রতিটি মানুষই খুঁজে খুঁজে ফেরে হারানো কিছুকে। অপেক্ষা করে। এ অপেক্ষার শেষ নেই।...’’ মুক্তিবাবুর গল্পের চরিত্ররা, তাঁর প্লট সবই চারপাশ থেকে নেওয়া। তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থও রয়েছে, ‘বাজেকথা’ ও ‘পরকীয়া’। রয়েছে দুটি গল্প সংকলন ‘চোখের আড়ালে’ এবং ‘উজান গাঙে পাড়ি’। ছোট ছোট বাক্যে, সংলাপে ভেঙে ভেঙে ঋজু গতিতে এগোয় তাঁর গল্প। শান্তিনিকেতনের সীমান্তপল্লিতে তাঁর বাড়ির নামও ‘গপ্পো’!

বোলপুর কথা

ট্রেন থেকে স্টেশনে পা রাখলেই টোটো কোম্পানির হামলা! দর নিয়ে রিকসার হুজুতি। পথের দু’পাশে ভিড় আর বহুতলের পাড়া। নির্মাণে মুখ ঢেকেছে ভুবন ডাঙার মেঘলা আকাশ। চেনা দায় কাছারিপট্টি, উকিলপট্টি, হরগৌরীতলার পল্লি। কয়েক দশকেই কেমন করে যেন বদলে গেল বোলপুর। কেমন ছিল সেকালের এই জনপদ— ‘ফেলে আসা দিন, ফেলে আসা সময়’ ছুঁয়ে ছুঁয়ে ইতিকথায়, স্মৃতিকথায় সে প্রশ্নের উত্তরই খুঁজেছেন মুক্তিপদ দে তাঁর ‘প্রাচীন বোলপুর’ গ্রন্থে। রাজ্য সরকারের পর্যটন বিভাগের আধিকারিক ছিলেন তিনি বহুকাল। এ শহরকে দেখছেনও দশকের পর দশক। তাঁর এই গ্রন্থ তাই ফিরে দেখার স্মৃতি-পাঠও। এতে সংক্ষিপ্ত ভাবে তাঁর দেখা ও জানা বোলপুরের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ যেমন আছে, জায়গা করে নিয়েছে শহরের সাবেক প্রতিষ্ঠানগুলির গোড়ার কথাও। এ শহরের ধর্ম, সংস্কৃতি, শান্তিনিকেতন আশ্রমের সঙ্গে যোগাযোগ, এমনকী নানা প্রতিষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কের দিকটিও তুলে ধরেছেন মুক্তিবাবু। বোলপুরের নাট্যচর্চা কিংবা প্রথম দিকের ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা লিখেছেন সুখপাঠ্য গদ্যে।

ব্রতকথা

শুভেন্দু মাইতির ব্যবস্থাপনায়, লালন আকাদেমি প্রকাশ করল বোলপুরের বাচিক শিল্পী শুভব্রত রায়চৌধুরীর আবৃত্তির সিডি ‘ব্রতকথা।’ কিণাঙ্ক নাট্যগোষ্ঠী কর্ণধার শুভব্রত নব্বইয়ের দশক থেকে বাচিক শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। নাট্য চর্চার পাশাপাশি জেলা ও জেলার বাইরে শহর কলকাতায় নানা অনুষ্ঠানে তাঁর গলায় শঙ্খ ঘোষ, পূর্ণেন্দু পত্রী, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শুনতে শুনতে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়েছেন বার বার। খাদ থেকে তার সপ্তক ছুঁয়ে খেলা করে যায় তাঁর গলা। উচ্চারণে শোনা যায় শব্দের গহন ধ্বনি। ছবির পরে ছবি এসে দাঁড়ায় শ্রোতার মনের কিনারে। নতুন সিডিটিতে শুভব্রত আবৃত্তি করেছেন ‘ছন্নছাড়া’, ‘বাবুমশাই’, ‘কর্ণ’, ‘যে টেলিফোন আসার কথা ছিল’, ‘মহাভারতের অপ্রকাশিত পর্ব’ প্রভৃতি। প্রিয় কবিতার এমন আবৃত্তি সংকলনে প্রতিটি কবিতায় শিল্পীর নিজস্বতার ছাপ। যে ছাপ তাঁর ‘ব্রত’কেই চেনায়।

উলুবেড়ের আদি পর্ব

পূর্ব ভারতের পুরাতাত্ত্বিক গবেষণা কোন খাতে বইছে, ওড়িশা ও বীরভূমের জৈন স্থাপত্যের প্রকৃতিই বা কেমন, কোন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে হাওড়ায় মৃৎশিল্প তৈরি হল-এমনই জিজ্ঞাসার খোঁজ করল ‘তারাপদ সাঁতরা স্মারক নিধি’র দশম জাতীয় আলোচনাসভা। সহযোগিতায়, সেন্টার ফর আর্কিওলজিক্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিং। আলোচনার নান্দীমুখে বিশ শতকের কয়েকটি উপন্যাস এবং তার আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটের সম্পর্কের সন্ধান করেন মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার লৌকিক দেবতা ধর্ম ঠাকুর আদতে বৌদ্ধ দেবতা কি না, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। সেই বিতর্কের মধ্যেই নতুন ভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবার অবকাশ করে দিল এই সভাটি। বীরভূম, দাঁইহাটের মন্দিরের টেরাকোটা নিয়েও কথা ওঠে। সভায় সংবর্ধনা জানানো হয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি’ বিভাগের অধ্যাপক দীপকরঞ্জন দাসকে। স্মারকনিধির সম্পাদক সোমনাথ রায় জানান, সভায় শতাধিক প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন। আলোচক হিসেবে যোগ দেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়, বালকনাথ ভট্টাচার্য, উৎপল বিশ্বাস, অমিতা মজুমদার, অরুণিমা সিংহ প্রমুখ। দুর্গাপুরের গোপালমাঠে আয়োজিত এই সভাটির সবথেকে বড় কৃতিত্ব, অগ্রন্থিত তারাপদ সাঁতরাকে পাঠকের সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। উলুবেড়িয়ার ‘সমবেত মন’ নামে একটি সংস্থায় একবার বক্তব্য রেখেছিলেন তারাপদবাবু। বিষয় ছিল ‘উলুবেড়ের আদিপর্ব’। কমিটি ভাষণটিই নতুন ভাবে প্রকাশ করল।

লেখার উৎসব

পাড়ার পুজোর শারদ পত্রিকা মানেই পাতার পর পর বিজ্ঞাপন, পুজো কমিটির নামের তালিকা, পুজোর নির্ঘন্ট, উৎসবের দিনগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সূচি, আয়-ব্যয়ের হিসাব! এসবেরই মাঝে কয়েক পাতাজুড়ে যখন গল্প-কবিতা মেলে, পত্রিকার কদরই যায় বেড়ে। শান্তিনিকেতনের পশ্চিম গুরুপল্লির এ বারের শারদ পত্রিকা ‘স্বপ্ন ছোঁয়া সত্যি’ ঠিক তেমন। সম্পাদক অর্ণব ঘোষাল। ‘বাঙালির সার্কাস ও জাগলিং’, ‘পুরাকালের দুর্গা’-এর মতো লেখা যেমন জায়গা করে নিয়েছে সংকলনে, দু’ মলাটে রয়েছে সুখপাঠ্য গল্প, কবিতাও। লিখেছেন নির্মলেন্দু প্রধান, অজিতকুমার ঘোষাল, মানস চট্টোপাধ্যায়, সুশান্ত রাহা, অশোককুমার দাস, প্রবীর দাস প্রমুখ। পড়শি পল্লি বাগানপাড়া-ইন্দিরাপল্লি দুর্গোৎসব কমিটির পত্রিকা ‘শরণ্যা’ও ঠিক তেমন। অলংকরণ এই পত্রিকার সম্পদ। ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে শিল্পী তালিকায় নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, সুশোভন অধিকারী প্রমুখ। লিখেছেন অশোককুমার দাস, রামবহাল তেওয়ারি প্রমুখ। সম্পাদক স্বপনকুমার ঘোষ ও সন্তোষকুমার কর্মকার।

রাসু সহিসের ছৌ

গ্রামে গাজনে সেবার গান গাইতে এসেছিলেন কাশীনাথ দেবনাথ, চাঁদ মহম্মদ, দিলীপ চট্টোপাধায়ের মতো প্রখ্যাত তিন কবিয়াল। আঠাশ বছর আগে দাদুর সঙ্গে খয়ারাশোলের পাঁচড়ায় অনাদীনাথ তলার গাজনেই সেই প্রথম কবিয়ালদের গান শুনেছিল গ্রামের কিশোর অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়। মুগ্ধ করেছিল তাঁকে কবিগান। মুগ্ধতা থেকে কবিগানের শিল্পীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগযোগ বাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কবিয়ালদের হাত ধরেই লোকসংস্কৃতির নানা অঙ্গের বহু বিখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে তাঁর। নিজে জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতর থেকে পুরস্কৃত এবং বঙ্গীয় কবিয়াল পরিষদের সদস্যও বটে। বর্তমানে অবশ্য ব্যবসা করেন মধ্য চল্লিশের অভিজিৎ। কিন্তু মন পড়ে থাকে মাটির গানে। অবশ্য শুধু নিজে নয়, গ্রামের আপামর মানুষকেও লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন পরতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলেন তিনি। রাজ্যের বিভিন্ন লোকশিল্পীর সঙ্গে সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে গ্রামেই বসালেন লোকসংস্কৃতির আসর। পাঁচড়ায় এখন চলছে সেই উৎসব। ২২-২৬ অক্টোবর পাঁচদিনের সেই উৎসব সাজানো বাউল, ছৌ নৃত্য, রামায়ণ গান, ঝুমুর, ভাওয়াইয়া এবং অবশ্যই কবিগানে। উদ্বোধন করলেন জেলার এক বিখ্যাত লোকশিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী। শেষ দিনে আসছেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কবিয়াল অসীম সরকার ও অমল সরকারেরা। অভিজিৎ বলছেন, ‘‘সকলের সহযোগিতায় লোকসংস্কৃতি উৎসব করছি। এই নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ল উৎসব। চাইব আগামী দিনে আরও বড় মাপের অনুষ্ঠান করাতে।’’ উৎসবের মরসুমেই গ্রামে এমন লোকসংস্কৃতির উৎসবে গ্রামের মানুষের কাছে বাড়তি পাওনা। পুরুলিয়া ১ ব্লকের বালিগাড়া গ্রামের রাসু সহিসের ছৌ নৃত্য দল মহিষাসুরমর্দিনী পরিবেশন করেছিল রবিবার সন্ধ্যায়। পড়শি গাঁ-ঘরও ভিড় করে এসেছিল তাই দেখতে।

কবিস্মরণ

ষাটের দশকের কবি অমরশংকর দত্তর কবিতা ও জীবন নিয়ে আলোচনা একটি সভা হল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মানবাজারের হাসপাতাল রোডে কবিরই নামাঙ্কিত মঞ্চে। কবির কাব্য চর্চার আলোচনায় উঠে এল দক্ষিণ পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার কাব্য চর্চার বহু অজানা তথ্য। অমরশংকর ছিলেন স্থানীয় হাইস্কুলের করণিক। কবিতার হাত ধরে তাঁর লেখালিখি বাংলার আনাচে কানাচে নানা পত্র-পত্রিকায়। একসময় কবির সান্নিধ্যে সময় কাটিয়েছেন বিষ্ণুপুর ঘরানার বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী গোরাচাঁদ নারায়ণ দেব, ছড়াকার এবং কবি গৌতম দত্ত, অসীমকাজল মহান্তীরা। গৌতম বলেন, ‘‘অমরশংকরের কবিতা বর্শার ফলার মত বিদ্ধ করে।’’ কবির অনুরাগীরা বলেন, ‘‘অমরশংকর কখনও কবি কখনও ছাপোষা মানুষ আবার কখনো জল কাদা মেখে ধানের চারা পুঁতছেন।’’ বৃহস্পতিবার অমরশংকর স্মৃতি মঞ্চে এভাবেই তাঁকে স্মরণ করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ এ অমরশংকর প্রয়াত হন।

মাঠের চিরকুমার স্মরণ

চলে গেলেন বর্ধমানের খেলার মাঠের ‘চিরকুমার খেলোয়াড়’ নামে পরিচিত বারীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (৮৮)। রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শহরের একটি নার্সিংহোমে তাঁর মৃত্যু হয়। বেশ কিছু দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন বারীন্দ্রবাবু।

এক সময়ে মাঠ দাপানো এই খেলোয়াড় পরবর্তী সময়ে মাঠের বাইরেও সমান ভাবে দাপিয়েছেন। ফুটবলে মাঝমাঠের খেলোয়াড় বারীন্দ্রবাবু জেলা দলের হয়ে আইএফএ শিল্ডে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে চাকরির পাশাপাশি ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও নিজের দক্ষতার পরিচয় রেখেছিলেন। নিজের উদ্যোগে ১৯৪০ সালে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ওয়েস্ট বর্ধমান অ্যাথলেটিক ক্লাব। টানা ৩০ বছর ধরে তিনি ছিলেন বর্ধমান জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি। জেলার বিভিন্ন খেলার উন্নয়নে তাঁর প্রচেষ্টা ছিল নিরন্তর। খেলায় আধুনিকতার ধারা আনা, মাঠে দর্শকদের টেনে আনায় তাঁর জুড়ি মেলা ছিল ভার। বর্ধমানের রাধারানি স্টেডিয়ামের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণে তাঁর উদ্যোগ ছিল অগ্রণী।

তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে জেলায় ক্রীড়া জগতে শোকের ছায়া নেমে আসে। নার্সিংহোমে ছুটে যান ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা ও ক্রীড়াপ্রেমারা। ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। অনেক ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক তাঁর শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন। পরে রবিবার রাতেই বর্ধমানের নির্মল ঝিল শ্মশান ঘাটে বারীন্দ্রবাবুকে দাহ করা হয়।

রঙ্গতীর্থের বিজয়া সম্মেলন। সাঁইথিয়ায় ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE