ঝামেলার সূত্রপাত বেআইনি ভাবে বালি তোলা নিয়ে। এক দিনেই সেই জল গড়াল অনেক দূর। শনিবার সকালে প্রায় সাত ঘণ্টা তালড্যাংরা-বাঁকাদহ রাস্তার সাবড়াকোন মোড়ে পথ অবরোধে আটকে নাজেহাল হতে হল যাত্রীদের। যদিও অবরোধ তুলতে এলাকায় যেতে দেখা গেল না পুলিশকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার তালড্যাংরার সাবড়াকোনের রাসতলা সংলগ্ন একটি জোড়খালে বেআইনি ভাবে বালি তোলা হচ্ছে দেখে বাধা দিতে গিয়েছিলেন এলাকার কয়েক জন সিভিক ভল্যান্টিয়ার। সেই সময়ে স্থানীয় কিছু লোকজন তাঁদের উপরে চড়াও হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চার জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। শুক্রবারই গ্রেফতার করা হয় এক অভিযুক্তকে।
সেই ঘটনার পরেই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তাঁরা দাবি করেন, স্থানীয় আমড্যাংরা গ্রামের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ওই বালি তুলছিলেন। তাঁরা শৌচালয় গড়ার কাজের সঙ্গে যুক্ত। ওই গোষ্ঠীর সদস্যারা দাবি করেন, বালি কেনার ক্ষেত্রে টাকার টানাটানি হওয়ায় জোড় খাল থেকে বালি তুলছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে সিভিক ভল্যান্টিয়াররা গিয়ে তোলা চান। না দেওয়ায় পরে পুলিশ গ্রামে ঢুকে অত্যাচার করে বলে তাঁদের অভিযোগ। আর সেই অভিযোগ তুলেই শনিবার সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে সাবড়াকোন মোড়ে তালড্যাংরা-বাঁকাদহ রাস্তায় অবরোধ শুরু হয়। অবরোধে সামিল হন আমড্যাংরা পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান তৃণমূলের অভিজিৎ পাঁজাও।
তবে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মতে, এই ক্ষোভ-বিক্ষোভের গোড়াতেই রয়েছে একটি বেআইনি ঘটনা। ওই জোড়খাল থেকে বালি তোলার কোনও অনুমতিই নেই বলে তিনি জানান। বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “বালি পাওয়া নিয়ে যদি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কোনও সমস্যা হয় তাঁরা সেটা আমাদের জানান। কিন্তু নিয়ম ভেঙে বালি তোলার অধিকার কারও নেই।” পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি ওই জোড়খাল থেকে বালি তোলা শুরু হয়েছে। অবৈধ ভাবে ট্রাক এবং ট্রাক্টরেও বালি পাচার হচ্ছে। তাতে বাধা পড়ায় এই ঘটনা বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মীদের অনেকে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “অবৈধ ভাবে বালি তোলা রুখতে আমরা সব সময়ই কড়া ব্যবস্থা নেব। এ ক্ষেত্রে কাউকে রেয়াত করা হবে না।”
এ দিকে, শনিবারের অবরোধের পরে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। প্রায় সাত ঘণ্টা অবরোধ চললেও সেখানে পুলিশ যায়নি। একটা সময়ের পরে অবরোধকারীরা নিজেরাই সরে যান। এই ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি কোনও পুলিশ কর্তাই।
অবরোধে সামিল ছিলেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান শাসকদলের অভিজিৎ পাঁজা। এ মাসের গোড়াতেই জেলায় সুনুকপাহাড়িতে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথ অবরোধ আইন বিরুদ্ধ বলে জানিয়েছিলেন এই সমস্ত ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। গত বছরের জেলা সফরে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী বালি নিয়ে বেআইনি কাজ বন্ধ করতে প্রশাসনকে কড়া হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরেও শাসক দলেরই পঞ্চায়েতের উপ-প্রধানকে এ দিন দেখা যায় পথ অবরোধে সামিল হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে। আর সেই ঘটনার গোড়াতেও রয়েছে বেআইনি ভাবে বালি তোলার ঘটনা। অভিজিৎবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা গ্রামবাসীর স্বার্থে পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবরোধ করেছি।’’
তবে বিষয়টি ভাল ভাবে দেখছে না দলের জেলা নেতৃত্ব। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী জানান, ওই উপ-প্রধানের ভূমিকা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করে কেউ পথ অবরোধ করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি গোটা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। ওই উপপ্রধানের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy