Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দীপাবলি এলে পুতুল গড়েন দুবরাজপুরের সাবিত্রী পণ্ডিত

দুর্গাপুজোর আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয় তাঁর। মাটি মেখে প্রথমে ছাঁচে পুতুলের শরীর তোলা।

নিমগ্ন: এক মনে পুতুল গড়ে চলেছেন সাবিত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

নিমগ্ন: এক মনে পুতুল গড়ে চলেছেন সাবিত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

মাটির তৈরি মেয়ে পুতুলটির মাথায় মুকুট। কোমর থেকে নীচের অংশটি ঘাঘরার মতো। পুতুলের হাত দুটি মাথার উপর অর্ধগোলাকৃতি করে ধরা। তার উপর লাগোনো পঞ্চ-প্রদীপ।

বর্ণনা শুনে যে মেদিনীপুরের যে কেউ বুঝবেন দিওয়ালি পুতুলের কথাই বলা হচ্ছে। শুধুমাত্র ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা এলাকা বা পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর এলাকায় অপরিচিত না হলেও তেমনভাবে দিওয়ালি পুতুলের চল নেই রাঢ় বঙ্গে। অনেকে নামও হয়তো শোনেননি।

বীরভূমের ছবিটাও একই। কিন্তু বছর বিশেক ধরে এক মহিলার প্রচেষ্টায় জেলার এক প্রান্তের লোকজনের কাছে দিওয়ালি পুতুলের পরিচিতি ও চাহিদা বেড়েছে। তিনি দুবরাজপুরের সাবিত্রী পণ্ডিত।

দুর্গাপুজোর আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয় তাঁর। মাটি মেখে প্রথমে ছাঁচে পুতুলের শরীর তোলা। সেটা কিছুটা শুকিয়ে গেলে মাথার উপর অর্ধগোলাকৃতি হাতের উপর প্রদীপগুলি বাসানো। ফের শুকানো। ভাটিতে পোড়ানো। এবং সবশেষে রঙের প্রলেপ। ফি বছর প্রায় সাত আটশো দিওয়ালি পুতুল তিনি একাই বানান। সাবিত্রীদেবীর বাড়ি গিয়েও সেই প্রস্তুতির ছাবিটা চোখে পড়ল। আপন মনে পুতুল গড়ছেন তিনি। সাবিত্রীদের অবাঙালি ওই পরিবারটি আদতে কুমোর-ই। বছর বিশেক আগে বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর থেকে দুবরাজপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বড় ছেলে ওমপ্রকাশ পণ্ডিত পারিবারিক পেশা পরিবর্তন করলেও সাবিত্রীদেবীর স্বামী দশরথ পণ্ডিত, ছোট ছেলে মনোহর পণ্ডিতরা এখনও বছরভর, মিস্টি, দইয়ের ভাঁড়, চায়ের খুড়ি, প্রদীপ-সহ নানা ধরণের মাটির জিনিস তৈরি ও বিক্রি করেন। কিন্তু বছরের এই সময়টায় দিওয়ালি পুতুল তৈরি করেন শুধুমাত্র সাবিত্রীদেবীই। তিনি বলছেন, ‘‘আমার বাপের বাড়ি আসানসোল থেকেই শিখেছি। বানাতে ভাল লাগে তাই আর ছাড়তে পারিনি।’’ ওঁর স্বামী দশরথ পণ্ডিত বলছেন, ‘‘৪২ বছর বিয়ে হয়েছে আমাদের। বিয়ের পরে যখন দিওয়ালি পুতুল বানাবে বলল খুশি হয়েছিলাম। এখনও সেটাই চলছে। জেলায় এই কাজ আমার স্ত্রী-ই করতে পারে।’’

পরিবারটি জানিয়েছে, পাইকারি হলে ১০ টাকা দরে বিক্রি হয় প্রতিটি পুতুল। এবং খুচরো হলে ১৫-২০ টাকায় প্রতি পুতুল বিক্রি হয়। তাঁরা বলেন, ‘‘চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এর থেকে বেশি বানানো সম্ভব নয়।’’ সাবিত্রীদেবীর আক্ষেপ সেখানেই। তিনি বলছেন, ‘‘বয়স বাড়ছে প্রচুর খাটতে হয় বলে পরিবারের আর কেউই এই পুতুল বানানো শেখায় আগ্রহী হয়নি। ক্ষমতা চলে গেলে আর হবে না।’’

ওই মহিলা দুবরাজপুরে না এলে সত্যিই অপরচিত থেকে যেত দিওয়ালি পুতুল। বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধু দিওয়ালি নয়, ছট পুজোয়ও যথেষ্ট সংখ্যায় এখন দিওয়ালি পুতুলের চল বেড়েছে। সাবিত্রীদেবী দিওয়ালি পুতুল গড়ে চলুন আনেককাল, বলছেন দুবরাজপুরের বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Diwali Toys Birbhum বীরভূম
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE