Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
চুরি উত্তরায়ণের কাছেই, প্রশ্নের মুখে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা

ফের কোপ চন্দন গাছে

ফের চুরি বিশ্বভারতীতে! উত্তরায়ণ লাগোয়া এলাকা থেকে এ বার কেটে চুরি গেল একটি চন্দন গাছ। সোমবার গভীর রাতের ওই ঘটনায় অবশ্য চোরের দল পুরো গাছটিকে নিয়ে যেতে পারেনি। লাগোয়া কর্মী আবাসন থেকে চেঁচামেচি শুরু হতেই চন্দনগাছের দু’টি গুঁড়ির একটিকে মাটিতে ফেলেই চম্পট দিয়েছে চোরেরা। রাতেই খোঁজ শুরু করলেও বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা কর্মীরা কাউকে ধরতে পারেনি। মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্র এবং বোলপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০০:৪৩
Share: Save:

ফের চুরি বিশ্বভারতীতে!

উত্তরায়ণ লাগোয়া এলাকা থেকে এ বার কেটে চুরি গেল একটি চন্দন গাছ। সোমবার গভীর রাতের ওই ঘটনায় অবশ্য চোরের দল পুরো গাছটিকে নিয়ে যেতে পারেনি। লাগোয়া কর্মী আবাসন থেকে চেঁচামেচি শুরু হতেই চন্দনগাছের দু’টি গুঁড়ির একটিকে মাটিতে ফেলেই চম্পট দিয়েছে চোরেরা। রাতেই খোঁজ শুরু করলেও বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা কর্মীরা কাউকে ধরতে পারেনি। মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্র এবং বোলপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে। বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা আধিকারিক সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, “বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাঁদের নির্দেশ মেনে গোটা ঘটনার কথা পুলিশে লিখিত ভাবে জানোন হয়েছে।” দিন দু’য়েক আগেই সিউড়িতে খোদ ডিএফও বাংলো থেকেও দু’টি চন্দন গাছ চুরি গিয়েছে।

এ নিয়ে কম করে পাঁচ বার ক্যাম্পাসে থাকা একাধিক চন্দন গাছ চুরি গেল বিশ্বভারতীতে। কয়েক লক্ষ টাকা দামের ওই চন্দন গাছ উত্তরায়ণের মতো ‘হাই সিকিউরিটি জোনে’র পাশ থেকে চুরি যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ আশ্রমিক থেকে পড়ুয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই। আশ্রম এবং ঠাকুর পরিবারের দুর্মূল্য জিনিসপত্র কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। অভিযোগ, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ফাঁক থেকে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পদক চুরি যাওয়ার পরে একাধিক বার বড় চুরির ঘটনা ঘটলেও টনক নড়েনি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। তাই বিশ্বকবির পদক খুঁইয়েও বিশ্বভারতী নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ।

বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যায় ঝড় জলের কারণে এলাকায় অনেক রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। স্থানীয় শ্রীপল্লির কর্মী আবাসনে অনেকেই জেগে ছিলেন। ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ ১১ নম্বর আবাসনের পিছনে এবং উত্তরায়ণ লাগোয়া এলাকায় কাঠ কাটার শব্দ শুনতে পান বিশ্বভারতীর উপ-কর্মসচিব দেবাশিস চক্রবর্তী। তিনি চিৎকার করলে আশপাশের বাসিন্দারাও চেঁচামেচি শুরু করেন। খবর যায় বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা বিভাগে। বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা আধিকারিক সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়, সুপারভাইসর বুদ্ধদেব কুমার নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী এবং বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী নিয়ে ছুটে আসেন। দেখা যায় একটি প্রায় দশ ফুট উঁচু চন্দন গাছের একটা দিকের প্রায় সবই কেটে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। কর্মীরা এক ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েও চন্দন চোরদের ধরতে পারেননি।

বিশ্বভারতীর ভিতর থেকে চন্দন গাছ চুরির ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। একাধিক বার এ রকম ঘটনা ঘটতে দেখেছেন আশ্রমিকেরা। শেষ বার ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের ১০০ মিটারের মধ্যে উত্তরায়ণ চত্বর থেকেই চুরি যায় আস্ত দু’টি চন্দন গাছ। এ রকম একটি ‘হাই সিকিউরিটি জোন’-এ কড়া নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে লোহার তারের বেড়া কেটে চন্দন গাছ দু’টি চুরি গেল, সে প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। কোন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তা নিয়ে আজও প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বভারতীর একাধিক মহল। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পদক চুরির পর, এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শ কাতর এলাকার থেকে, বারে বারে চুরির ঘটনায় যারপনায় ক্ষুব্ধ প্রবীণ আশ্রমিক থেকে প্রাক্তনী এবং এলাকার একাধিক বিদ্বজনেরা।

ঘটনা হল, নোবেল চুরির পরে ২০০৪ সালে বিশ্বভারতীর তৎকালীন আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নির্দেশে সিবিআই-এর প্রাক্তন যুগ্ম অধিকর্তা তথা ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর প্রাক্তন অধিকর্তা সুজিত ঘোষের সভাপতিত্বে আট সদস্যের এক উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছিল। কমিটিতে ছিলেন ভারতীয় জাদুঘরের প্রাক্তন অধিকর্তা শ্যামল চক্রবর্তী, অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস হরিপদ রায়ের মতো বাঘাবাঘা লোক। তিন মাসের মধ্যেই কমিটি বিশ্বভারতীর নিরাপত্তাকে জোরদার করে তুলতে ৩৭টি সুপারিশ-সংবলিত ৪৬ পাতার একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। সেই সুপারিশের অনেকগুলিই এখনও কার্যকর করা যায়নি বলে অভিযোগ।

বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট ২১০ জন সরকারি নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে। তবে, নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী এবং এনভিএফ কর্মীর সংখ্যা বেশ কম। প্রায় ৩০ জন করে। রবীন্দ্রভবন যেখানে রয়েছে, সেই উত্তরায়ণ চত্বরে তিনটি শিফটে দু’জন করে এনভিএফ কর্মী থাকেন। তিন শিফটে তাঁদের সঙ্গে থাকেন তিন সুপারভাইজার, তিন জন করে (মোট ৯ জন) বন্দুকধারী, চার জন করে সাধারণ কর্মী। সেই সঙ্গে দিনভর থাকেন এক জন এক্স-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার, পাঁচ সাধারণ নিরাপত্তা রক্ষী এবং দু’জন মহিলা রক্ষী। নিরাপত্তা বিভাগের হাতে রয়েছে দু’টি স্নিফার ডগও। বিশ্বভারতীর বিভিন্ন মোড়ে রয়েছে চেকপোস্ট। রাতে গাড়িতে নজরদারিও চালানো হয়। তার পরেও কোন ফাঁক গলে বিশ্বভারতী চত্বরে চুরির ঘটনা ঘটছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন আশ্রমিকেরা।

এ দিনের চুরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বভারতীর জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি। কমিটির পক্ষে কিশোর ভট্টাচার্য, আনন্দদুলাল মিত্র এবং দেবব্রত হাজারী বলেন, “কর্তৃপক্ষের কাছে গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আবেদন করেছি। দোষীদের চিহ্নিত করে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিক বিশ্বভারতী। তবে, বারবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটনায় এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক।’’ বিশ্বভারতীর নিরাপত্তায় কোথাও একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন আশ্রমিক সুবোধ মিত্র। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘বারবার এ রকম অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে। নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই। নিশ্চিয় কোথাও একটা গাফিলতি রয়েছে। যার ফাঁক গলে দুষ্কৃতীরা অপকর্ম করছে।’’ ঘটনার পর থেকেই যদিও মুখে কুলুপ এঁটেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা। যোগাযোগ করা হলে উপ-কর্মসচিব দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ নিয়ে আমি কোনও কথা বলতে পারি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE