Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
পান্নালাল বলেছিলেন, ‘টুপি বুনতে পারবি?’

তালপাতার শিল্পেই পেট চলে ষষ্ঠীপদর

কয়লার উনুন ধরছিল না কিছুতেই। উনুনের মুখে একটু হাওয়া দিতে প্রয়োজন ছিল তালপাতার পাখার। বাড়িতে পাখা না থাকায়, ৫০ পয়সা দামের তালপাতার পাখাই সেদিন ৫ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছিল।

শিল্পী: গরম পড়তেই বাজারে বেড়েছে পাখার চাহিদা। নিজের ঘরে পাতার পাখা, টুপি, চাটাই করে চলেছেন শিল্পী। নিজস্ব চিত্র

শিল্পী: গরম পড়তেই বাজারে বেড়েছে পাখার চাহিদা। নিজের ঘরে পাতার পাখা, টুপি, চাটাই করে চলেছেন শিল্পী। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭ ০১:১৮
Share: Save:

কয়লার উনুন ধরছিল না কিছুতেই। উনুনের মুখে একটু হাওয়া দিতে প্রয়োজন ছিল তালপাতার পাখার। বাড়িতে পাখা না থাকায়, ৫০ পয়সা দামের তালপাতার পাখাই সেদিন ৫ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছিল। চার দশক আগে বর্ধমানের রানিগঞ্জে দিদির বাড়িতে ওই ঘটনাই পেশা ঠিক করে দিয়েছিল বছর বাইশের এক তরুনের।

পাখা তৈরি করতে করতে যখন একটু পরিচিতি জুটেছে, বিশিষ্ট স্বধীনতা সংগ্রামী পান্নলাল দাশগুপ্ত শান্তিনিকেতন থেকে একটা টুপি এনে বলেছিলেন, টুপি বুনতে পারবি? ষষ্ঠীপদ সেও শিখে নিলেন। তখন থেকেই তালপাতার নানা সামগ্রী বানিয়েই সংসার প্রতিপালন করছেন বীরভূমের ষষ্ঠীপদ সিংহ।

হরেক ধরনের তালপতার পাখা, টুপি, জলের ঢাকা, সাজি, চাষের টুপি থেকে উপনয়ণের ছাতা সবই। তালপাতা দিয়ে তৈরি হয় এমন যে কোনও সামগ্রী বানাতে সিদ্ধহস্ত দুবরাজপুরের প্রতাপপুর গ্রামের ওই বৃদ্ধ। এখন বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুতের আলো, পাখা। কিন্তু গরমকাল এলে এখনও অনেকে তালপাখার পাখার খোঁজ করেন। চাহিদা আছে তালপাতার টুপি এবং তালপাতা দিয়ে তৈরি উপনয়ণের ছাতারও। কিন্তু তালপাতা দিয়ে সামগ্রী তৈরি করার কারিগর ক্রমশ কমেছে। বীরভূমের বোলপুরে তালপাতা দিয়ে সামগ্রী তৈরির লোকজন থাকলেও দুবরাজপুরে ব্লকে এমন কুটির শিল্পী নেই বললেই চলে। সেখানেই ব্যতিক্রম ষষ্ঠীবাবু। গোটা গ্রামে তো বটেই রাজপুত সম্প্রদায়ভূক্ত একমাত্র ষষ্ঠীবাবুই একাজ করে থাকেন।

বছরের সেরা মরসুম সামনে। তালপাতার পাখা, টুপির চাহিদা এই সময়টাই বাড়ে। সামগ্রী তৈরির ব্যস্ততা তুঙ্গে। তার ফাঁকে কেন তালপাতা দিয়ে তৈরি কুটির শিল্পের উপর নির্ভর করে গোটা জীবন পার করছেন সেটাই রবিবার সকালে বলছিলেন ওই প্রবীণ কুটির শিল্পী। বছর ৬৭ -র বৃদ্ধ শিল্পী বলেন, ‘‘ছোট থেকে হাতের কাজ করতে ভাল লাগত। কিন্তু বহুবছর আগে দিদির বাড়িতে তালপাতার পাখার এত দাম নেওয়ায় খুব খারাপ লেগেছিল। ভেবেছিলাম আরে এই কাজ তো আমিই পারি। সেই শুরু। পান্নালালবাবু বলার পরে একে একে নিজেই সব শিখেছি।’’

বহুবছর আগেই স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে। তিনটি মেয়েকে বড় করেছেন তালপাতায় ভরসা করে। বড় মেয়ে শুক্লা ও মেজ ঝুম্পার বিয়ে দিয়েছেন। বাকি ছোট মেয়ে টুম্পা। তারাও সবাই একই কাজ শিখেছে। কিন্তু সারা বছর কি বাজার থাকে? শিল্পী বললেন, ‘‘গরমকালে কাজ বাড়ে। তবে বছরভর তালপাতার নানা সামগ্রী তৈরি করি। দুবরাজপুর সিউড়ির গোটা সাতেক দোকানে আমার জানিস বিক্রি হয়। আগে জেলার বাইরেও যেতাম। এখন বয়স বেড়েছে। একমাত্র সিউড়িতেই সপ্তাহে দুটো দিন নিজে ফেরি করি। চলে যায় সংসার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Thatch art Hand Fan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE