Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

জমি আর টাকা পড়ে, স্কুল হয়নি দু’বছরেও

দমে না গিয়ে গ্রামবাসী নিজেরাই ‘পাচম্বা ডামরা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয় কমিটি’ গড়েন। ওই কমিটির সম্পাদক অজিত দুবে জানান, স্কুল গড়ার দাবিকে আরও জোরালো করতে নিজেদের মধ্যে থেকে চাঁদা তুলে একাধিকবার কলকাতার বিকাশ ভবন ও নবান্নে গিয়েছেন তাঁরা।

ধু-ধু: এই জমিতেই স্কুল গড়ে ওঠার কথা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

ধু-ধু: এই জমিতেই স্কুল গড়ে ওঠার কথা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
গঙ্গাজলঘাটি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ০৮:০০
Share: Save:

চতুর্থ শ্রেণির গণ্ডি পার হলেই গ্রামে আর পড়াশোনার সুযোগ নেই। পড়ুয়াদের ছ’কিলোমিটার পথ পার হয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে যেতে হয়। দীর্ঘ যুগ ধরে চলতে থাকা এই সমস্যা মেটাতে গ্রামে স্কুল গড়ার জন্য জমি দান করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্কুল গড়ার জন্য সর্বশিক্ষা মিশনও টাকা বরাদ্দ করে দিয়েছে দু’বছর আগেই। তবে এখনও স্কুলের জন্য দান করা গ্রামবাসীর দেওয়া জায়গায় একটিও ইট গাঁথা হয়নি।

এই ঘটনায় রীতিমত ক্ষুব্ধ গঙ্গাজলঘাটির প্রত্যন্ত এলাকা পাচম্বা ডামরার বাসিন্দারা। গ্রামের বাসিন্দা স্বপন দুবে, অজিত দুবে, মঙ্গলময় ঘোষালরা জানান, ২০১১ সালেই গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা প্রায় এক বিঘা জমি স্কুলের জন্য দান করেন। তার পরে ওই জায়গায় স্কুল গড়ার জন্য প্রশাসনের কাছে লাগাতার দাবি তুলেছেন তারা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামবাসীর দাবি মেনে জুনিয়ার হাইস্কুল গড়ার জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ৫ লক্ষ ৪৭ হাজার ও ২০১৫-র জানুয়ারিতে আরও ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ করে সর্বশিক্ষা মিশন। কিন্তু তার পরে আর কাজ শুরু হয়নি।

দমে না গিয়ে গ্রামবাসী নিজেরাই ‘পাচম্বা ডামরা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয় কমিটি’ গড়েন। ওই কমিটির সম্পাদক অজিত দুবে জানান, স্কুল গড়ার দাবিকে আরও জোরালো করতে নিজেদের মধ্যে থেকে চাঁদা তুলে একাধিকবার কলকাতার বিকাশ ভবন ও নবান্নে গিয়েছেন তাঁরা।

জমি দাতাদের মধ্যে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, প্রণব ভট্টাচার্য, সুবোধ ভট্টাচার্যরা বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের মানুষজন শিক্ষাপ্রেমী। এখানকার ছেলে মেয়েরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় গোটা ব্লকের নজর কাড়ে। অথচ ওদেরই গ্রাম থেকে ছ’কিলোমিটার দূরের বনয়াশুড়িয়া হাইস্কুলে পড়াশোনা করতে যেতে হয়।’’ গ্রামের পড়ুয়াদেত যাতে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া যায় সেই উদ্দেশ্যেই জমি দান করেছেন তাঁরা। গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী সাথী দুবে, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র কিংশুক ভট্টাচার্য, কৃষ্ণ কুণ্ডুদের কথায়, ‘‘গ্রামের আলপথ ধরে ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে স্কুলে যেতে হয় আমাদের। খুব সমস্যা হয়।’’

গ্রামবাসী প্রশ্ন তুলছেন জমি তৈরি আছে, টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে— তার পরেও কেন প্রশাসন স্কুল গড়ার কাজ শুরু করছে না?

বাঁকুড়া সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্প আধিকারিক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন ওখানে স্কুল গড়ার কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। বিডিও-কে বলেছি যাতে দ্রুত কাজ শুরু করা যায় তার ব্যবস্থা করতে।’’ স্কুল গড়তে সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে তা নিয়ে শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউরিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘‘ওখানে স্থানীয় একটা সমস্যা ছিল। পাচম্বা ডামরার পার্শ্ববর্তী কিছু গ্রামের মানুষ স্কুলটিকে অন্য জায়গায় গড়ার দাবি তুলছিলেন। তবে আলোচনার মাধ্যমে সবাইকে সহমতে আনা গিয়েছে।’’

বিডিও (গঙ্গাজলঘাটি) মৃণ্ময় মণ্ডলের কথায়, ‘‘সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাতে দ্রুত স্কুল গড়ার কাজ শুরু করা যায় সেই প্রচেষ্টা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

school Land
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE