Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শব্দবাজির জোগান দিচ্ছে গৃহস্থ

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩৮
Share: Save:

সর্ষের মধ্যেই ভূত। পুলিশি কড়াকড়িতে এ বারে বাঁকুড়ার প্রায় কোনও ব্যবসায়ীই শব্দবাজির ধারে কাছে যাননি। কিন্তু এই সুখবরে বাঁকুড়াবাসীর হাঁফ ছাড়ার জো নেই। কারণ, শব্দবাজি নিয়ে বাড়িতে বসেই কারবার ফেঁদেছেন কিছু গৃহস্থ।

তবে কড়ি ফেললেই যে হাতে হাতে শব্দবাজি মিলে যাবে, এমনটাও নয়। সূত্রের খবর, এই কারবার চলে একটা চেনের মতো। নিজেদের চেনাশোনার মধ্যে শব্দবাজি বিক্রি করছেন গৃহস্থরা। সেই ক্রেতারাই আবার এজেন্টের মতো কাজ করছেন। নিয়ে আসছেন তাঁদের চেনাশোনা লোকজনকে। এর বাইরে কেউ যদি শোনা কথায় দুম করে গিয়ে শব্দবাজি চেয়ে বসেন, বেমালুম অস্বীকার করবেন ওই কারবারিরা। শহরে এখন কেউ শব্দবাজি চাইলে প্রথমে ওই এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তাঁরা কারবারিদের বাড়ি থেকে নগদ টাকা দিয়ে শব্দবাজি কিনে এনে সাধারণের হাতে দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ক্রেতাদের কি কমিশন থাকছে? এজেন্ট হিসেবে কাজ করা বাঁকুড়া শহরের এক ব্যক্তি বলেন, “আমরা বিক্রেতার কাছে প্যাকেট পিছু কিছুটা কম দামই পাচ্ছি। সাধারণ ক্রেতাকে প্যাকেটে লেখা দামই দিতে হচ্ছে। ফলে লাভ কিছুটা তো হচ্ছেই ।”

তবে শহরে এ বার শব্দবাজির চাহিদা বেশ কিছুটা কমেছে বলেই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ঝুঁকি নিয়েও গত বছর বাঁকুড়ার কিছু ব্যবসায়ী আড়ালে আবডালে শব্দবাজি বিক্রি করেছিলেন। এ বার তাঁদের কেউই সেই পথে হাঁটছেন না।

ওই ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এ বারে দুর্গাপুজোর সময় থেকেই ফানুস, হরেক রঙের জেনারেটর তুবড়ি, রংমশালের চাহিদা তুঙ্গে। মুড়ি বা কালীপটকা ছেড়ে কচিকাঁচারা মেতেছে চুড়মুড় রোশনাইতে। এতে কম শব্দ হচ্ছে, কিন্তু অনেক কম। বেরোচ্ছে ঝর্নার মতো আলো। ফলে রোশনাই আর কানসই শব্দ— দু’য়েরই খুশি মিলে যাচ্ছে।

বাঁকুড়া শহরের সত্যপীরতলা এলাকার বাজি ব্যবসায়ী প্রিয়ব্রত দত্ত বলেন, “পুজোর মরসুম থেকেই চুটিয়ে ফানুস বিক্রি করেছি। এ বছর যোগান বেশি থাকায় ফানুসের দামও অনেক কমেছে।” শহরের বড়বাজার এলাকার বাজি ব্যবসায়ী অরূপ রক্ষিত বলেন, “জেনারেটর তুবড়ি, চুড়মুড়, ফানুস, রংমশালের বাজার তুঙ্গে। গত বারের থেকেও এ বার এই সবের বিক্রি বেশি।” শহরের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত বছর পর্যন্ত অনেকেই শব্দবাজি রয়েছে কি না খোঁজ নিতে আসত। এ বার তার বালাই নেই। ব্যবসায়ীদের দাবি, শব্দবাজি থেকে একটা বড় অংশের ক্রেতাই যে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এই ঘটনাই তার প্রমাণ। বাঁকুড়ার কলেজ ছাত্র শুভ্রদীপ গোস্বামী, বিকাশ পণ্ডিতরাও বলেন, “শব্দবাজি ফাটানোর চেয়ে ফানুস ওড়ানোয় মজা অনেক বেশি। এতে পরিবারের সবাই এক সঙ্গে মিলেমিশে মজা করা যায়।”

যদিও দুর্গাপুজোর ভাসান বা অষ্টমীর সন্ধি পুজোর সময়ে শহরের রাজপথে অনেকেই শব্দবাজি ফাটিয়েছিলেন। দুর্গাপুজোয় শব্দবাজি বা বেলাগাম সাউন্ড বক্স রুখতে বাঁকুড়া পুলিশ যে সফল হয়নি তা স্বীকার করে নিয়েছিলেন জেলা পুলিশের কর্তাদের অনেকেই। কালীপুজোতে নিষিদ্ধ শব্দবাজি রোখাকে কার্যত চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছে বাঁকুড়া পুলিশ। দুর্গাপুজোর পরে এখনও পর্যন্ত দু’জনকে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। লক্ষাধিক টাকার শব্দবাজি আটক করেছে বাঁকুড়া পুলিশ। ধৃত দু’জনের কেউই বাজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নন। সাদা পোশাকে ওই বিক্রেতাদের এজেন্ট মারফত বাজি কিনতে গিয়ে ধাওয়া করেই সাফল্য পেয়েছে পুলিশ। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “নিষিদ্ধ শব্দবাজি রুখতে পুলিশ সব রকম ভাবেই সচেষ্ট। কেউ আইন ভাঙলে রেয়াত করা হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SoundCrackers Bankura বাঁকুড়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE