প্রায় চার দশক পরে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের সব ক’টি আসন বামেদের হাতছাড়া হল। জঙ্গলমহলের তিনটি আসনেই বিপুল ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। মঙ্গলবার খাতড়ার কংসাবতী কলোনিতে এই উপলক্ষে বিধায়ক সংবর্ধনার আয়োজন করে তৃণমূল। সেই সভায় খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জয়ন্ত মিত্র-সহ মহকুমার বহু নেতা কর্মী হাজির ছিলেন। কিন্তু দলের ঘরোয়া রাজনীতিতে জয়ন্তবাবুর কট্টর বিরোধী বলে পরিচিত জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল সরকার ওরফে বেণু ছিলেন না। শ্যামলবাবুর অনুপস্থিতি ঘিরে পুরনো গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গটি ফের একবার সামনে এসে পড়ল বলে মনে করছেন শাসকদলের অনেক নেতাকর্মী। নিচুতলার কর্মীদের মধ্যেও এ নিয়ে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
চার দশক ধরে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের তিন বিধানসভা কেন্দ্র রানিবাঁধ, রাইপুর ও তালড্যাংরা সিপিএমের দখলে ছিল। এ বার এই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র নিজেদের দখলে আনতে মরিয়া ছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী সবাই জঙ্গলমহলে একের পর এক সভা করে গিয়েছেন। ভোটে জেতার জন্য জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী প্রথম থেকেই কোমর বেঁধে দলের সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে দেখা গিয়েছে, বড় ব্যবধানে সিপিএম প্রার্থীদের হারিয়েছেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীরা। জেলার অন্য এলাকায় ভোটের ব্যবধানের তুলনায় এই তিন কেন্দ্রের ফল অনেক ভাল হওয়ায় স্বভাবতই উল্লসিত শাসক শিবির। কিন্তু ভোটপর্ব নির্বিঘ্নে উতরে গেলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে রয়েই গিয়েছে তা এই ঘটনায় ফের বোঝা গেল বলে মনেকে করছেন অনেকে।
এ দিন শ্যামলবাবুর বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে শ্যামলবাবুর এক অনুগামীর বক্তব্য, “দাদার বিরোধী জয়ন্ত মিত্রের অনুগামীরাই সভার সব কিছু করেছেন। এই অবস্থায় দাদা মঞ্চে বসে থাকলে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তেন। তাই ওই সভা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছেন বেনুদা।”
এ দিনের সংবর্ধনা সভাকে ঘিরে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মী সমর্থকদের উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। খাতড়ার পাশাপাশি অন্য এলাকা থেকেও বাস, ছোট গাড়ি, ট্রাক্টরে করে হাজার হাজার মানুষ এসেছিলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক অরূপ খাঁ, রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি, রাইপুরের বিধায়ক বীরেন্দ্রনাথ টুডু, তালড্যাংরার বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী, বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত, সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়, বিষ্ণুপুর পুরসভার উপ-পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। মন্ত্রী সহ পাঁচ বিধায়ককেই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “জঙ্গলমহলের মানুষ আমাদের দলকে বিপুল ভোটে জিতিয়েছেন। মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেড়ে গেল। এটা আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে।” পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের অনুপস্থিতি নিয়ে অবশ্য তাঁর মন্তব্য, “ওকে সভায় থাকার জন্য বলা হয়েছিল। তারপরেও বেনু কেন ছিলেন না তা জানি না। না থাকার ব্যাপারটা উনিই ভাল বলতে পারবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy